বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মহাসম্মেলন থেকে ৯ দফা ঘোষণা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| হাসান আল মাহমুদ ||

‘দাওয়াত ও তাবলিগ, মাদারেসে ক্বওমিয়া এবং দ্বীনের হেফাজতের লক্ষ্যে’ ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইসলামী মহাসম্মেলন থেকে ৯ দফা ঘোষণা করা হয়েছে।

আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে দেশের শীর্ষ আলেমদের উপস্থিতিতে লিখিত ঘোষণা পাঠকরেন কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।

মুফতী কেফায়েতুল্লাহ আজহারী সঞ্চালনায় মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশের শীর্ষ কওমি বিদ্যাপীঠ হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা খলিল আহমাদ কুরাইশী।  সকাল ৯ টা থেকে শুরু হওয়া এ মহাসম্মেলন দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয় দুপুর ১টায়।  

মহাসম্মেলন থেকে ঘোষিত ৯ দফা

৫ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি. ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ আয়োজিত রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত মহাসম্মেলনের ঘোষণাপত্র:

১) এ দেশে কওমী মাদরাসাগুলো দারুল উলুম দেওবন্দের অনুকরণে শতাব্দীকাল ধরে দ্বীনী শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশাসন এবং সরকারদলীয় লোকজন নানাভাবে হয়রানি ও হস্তক্ষেপ করেছিল। আমরা লক্ষ্য করছি যে, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরও কওমী মাদ্রাসাগুলোর উপর ঐ ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাপটি মেরে থাকা একটি বিশেষ মহল সুকৌশলে হস্তক্ষেপের পাঁয়তারা করে চলছে। আজকের মহাসম্মেলন থেকে আমরা এ জাতীয় সকল হয়রানি ও হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জোর দাবি জানাচ্ছি।

২) আজকের এই মহাসম্মেলন জোর দাবি জানাচ্ছে যে, সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসের সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৩) বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মজলুম আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

৪) ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে সারাদেশ থেকে আগত নবীপ্রেমিক নিরীহ ছাত্র-জনতা ও মুসল্লীদের উপর বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যার দোষীদেরকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় এনে বিচার কার্যকর করতে হবে এবং সারাদেশের আলেম, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার উপর দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ৫) ২০১৮ সালের পহেলা ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানের জোড়ের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশগ্রহণকারী মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্র- শিক্ষক এবং সাধারণ তাবলীগী সাথী ভাইদের উপর সাদপন্থীরা পুলিশ প্রশাসনের গুটিকয়েক অফিসারের সহযোগিতায় নৃশংস হামলা চালায়। আজকের এ মহাসম্মেলন থেকে উক্ত হামলাকারী ও তাদের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানানো হচ্ছে।

৬) স্বঘোষিত আমির মাওলানা সাদ সাহেব কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা, নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা-বিশ্বাস বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। আরো উল্লেখ্য যে, দাওয়াত ও তাবলীগের এই মকবুল মেহনত যুগ যুগ ধরে হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হযরত মাওলানা ইউসুফ রহ. ও হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ-এর উসুলের উপর পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু মাওলানা সাদ সাহেব তাবলীগ জামাতের স্বীকৃত উসুল তথা নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজস্ব মতের ভিত্তিতে পরিচালনা করার অপপ্রয়াস চালায়। এ কারণে দারুল উলুম দেওবন্দসহ উপমহাদেশের প্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম তার গুমরাহিপূর্ণ বক্তব্য ও অবস্থানের ব্যাপারে উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। তাই ইতিপূর্বে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান সাদ সাহেবকে বাংলাদেশে আসতে বাধা প্রদান করেছে। বিধায় বর্তমান সরকারের নিকট অদ্যকার মহাসম্মেলন থেকে জোর দাবি জানানো হচ্ছে যে, কোনো অবস্থাতেই মাওলানা সাদ সাহেবকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া যাবে না।

৭) উলামায়ে করামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেযামে পরিচালিত বিশ্ব ইজতেমা এক পর্বে আয়োজন করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তাই আগামী বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বেই অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি ও ০১-০২ ফেব্রুয়ারী'২৫ ইং শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার এবং দ্বিতীয় পর্ব ০৭-০৮-০৯ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার করার তারিখ আজকের এ মহাসম্মেলন থেকে ঘোষণা করা হলো। এ ব্যাপারে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

৮) কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেযামে পরিচালিত হবে। উক্ত স্থানদ্বয়ে সাদপন্থীদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেয়া হবে না।

৯) বর্তমান সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন অভিশপ্ত কাদিয়ানীদের অবিলম্বে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। এবং সে সাথে কাদিয়ানীদের ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধ করারও জোর দাবি জানাচ্ছে আজকের এ মহাসম্মেলন।

সম্মেলনে হেফাজত আমির মাওলানা শাহ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা খলিল আহমাদ কাসেমী, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা নুরুল ইসলাম আদিব , মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা রশিদুর রহমান, মাওলানা শায়খ জিয়াউদ্দিন, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা ইসমাঈল নূরপুরী (নরসিংদী), বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, ফরিদাবাদের মুহতামিম মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া,  মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা আরশাদ রহমানি, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুস্তাক আহমদ, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মুফতি মনসুরুল হক, মাওলানা মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী (ময়মনসিংহ), মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুফতি জসিমুদ্দীন (হাটহাজারী)।

আরও বক্তব্য দেন সাভার যাদুরচর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আলী আকবর কাসেমী, মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজী (লালবাগ মাদরাসা), লন্ডন দারুস সুন্নাহ মাদরাসার পরিচালক মুফতি গোলাম কিবরিয়া, সিলেট রেঙ্গা মাদরাসার শাইখুল হাদিস মুফতি মকবুল হুসাইন, উজানী মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহবুবে এলাহী (পীর সাহেব উজানী), মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ আল ফরিদী, মাওলানা লোকমান মাজহারী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা জাবের কাসেমী, মাওলানা রেজাউল কারীম আবরার।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ