রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫ ।। ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ৯ রমজান ১৪৪৬


কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুহাম্মাদ শোয়াইব ||

বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা সাধারণত মসজিদ-মাদ্রাসার সীমানার মধ্যেই নিজেদের কর্মজীবন সীমাবদ্ধ রাখেন। মাদ্রাসার মুরুব্বী ও তত্ত্বাবধায়কগণও চান না যে, এই অঙ্গনের শিক্ষার্থীরা মসজিদ-মাদ্রাসার বাইরে কর্মসংস্থান খোঁজেন বা অন্য কোথাও কাজ করেন। কিন্তু এই মানসিকতা কতটুকু যৌক্তিক? ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও সালাফদের যুগে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি তারা নানান পেশায় জড়িত ছিলেন। ইসলাম আমাদের শুধুমাত্র হালালের সীমানায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে, কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট পেশায় সীমাবদ্ধ থাকার কথা বলেনি।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং এক বিশাল কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছে। বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকসহ বিশ্বের সমস্ত ইসলামী ব্যাংক বাহরাইনের আওফি (AAOIFI)-এর শরীয়াহ স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে চলে। আওফির শরীয়াহ ডিপার্টমেন্টের প্রধান হচ্ছেন পাকিস্তানের খ্যাতিমান আলেম মুফতি তাকি উসমানি। এই সংস্থা ইসলামী ব্যাংক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য শরীয়াহ স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে এবং সারা বিশ্বের ইসলামী ব্যাংকগুলো এই স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করেই পরিচালিত হয়।

এই শরীয়াহ স্ট্যান্ডার্ড বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক পরীক্ষা CIPA এবং CSAA অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইসলামী ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং খাতে কাজ করছেন। কিন্তু কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে এ বিষয়ে ন্যূনতম সচেতনতা পর্যন্ত নেই। অথচ ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে শরীয়াহ বিশেষজ্ঞদের চাহিদা প্রচুর এবং এটি কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য একটি বড় কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে পারে।

শুধু শরীয়াহ স্ট্যান্ডার্ড বিষয়ে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই সেক্টরে আত্মনিয়োগ করা সম্ভব। কিন্তু কেন যেন আমরা মসজিদ-মাদ্রাসার সীমানার বাইরে চিন্তা করতেই চাই না। শিক্ষকদেরও এই বিষয়ে আগ্রহ কম, ফলে ছাত্রদের সামনে এই সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে না।

একটি পরিপূর্ণ জীবন গঠনের জন্য শুধু ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি উপার্জনের উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করাও জরুরি। তাই কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই ধরনের পেশাগত প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কওমি ছাত্ররা যদি শরীয়াহ ভিত্তিক বিভিন্ন সেক্টরে নিজেদের দক্ষতা গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে তারা সমাজে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন এবং ইসলামী অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ