মুসলমানদের অগ্রগতির জন্য মুসলমানদের অনুদিত জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি রাজস্ব পরিশোধ করা হয় নওয়াব সলিমুল্লাহর নামের স্মরণে ‘সলিমাবাদ মৌজা’ নামে। অথচ সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিজাব-নিকাবের ওপর বারবার আঘাত করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকাব-ইস্যুর রায় যদি মুসলমানদের বিরুদ্ধে যায়, জাতি হিসেবে তা হবে আমাদের জন্য কলঙ্কের। এই পরাজয়ের গ্লানি হয়তো বহুকাল এদেশের মুসলমানদেরকে বয়ে বেড়াতে হবে।
শিক্ষক বাবার মতো, শিক্ষকের সামনে পর্দার প্রয়োজন নেই—বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এরচেয়ে অযৌক্তিক, শুভঙ্করের ফাঁকি টাইপ কথা আর কিছু হতে পারে না। শিক্ষক যদি বাবার মতোই হবেন, তবে পত্রিকার পাতায় পাতায় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর যৌননিগ্রহের নিউজ এতবেশি কেন পড়তে হচ্ছে আমাদের!
অসংখ্য বিকল্প থাকার পরও পরীক্ষার স্বচ্ছতা ও পরিচয় শনাক্তির অজুহাতে নেকাবি মেয়েদের মুখ ও কান খুলতে বাধ্য করা স্পষ্টতই ধর্ম ও সংবিধান পরিপন্থী কাজ। চেহারা না খুলেও যে ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা যায়, করোনাকাল তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সবকিছু দেখেশুনে মনে হয়, পরিচয় শনাক্ত এখানে মুখ্য নয়; ধার্মিক মেয়েদের চেহারা থেকে ইসলামের শিআর সরানোই মুখ্য।
পর্দা কখনোই মেধা ও শিক্ষার অন্তরায় নয়। আপাদমস্তক পর্দা করেও অসংখ্য মুসলিম বোন প্রতি বছর মেডিকেল কলেজসহ প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাক লাগানো রেজাল্ট করছে। তারপরও সেই বোনদেরকে আজ শিক্ষকের মুখ থেকে শুনতে হচ্ছে—যারা পর্দা করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে বাসায় পড়াশোনা করা উচিত।
আইন মানুষের কল্যাণের জন্য তৈরি করা হয়। দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠে নিকাববিরোধী আইন প্রণীত হলে তাতে দেশ ও জাতির কী কল্যাণ হবে বোধগম্য নয়। সিংহভাগ মানুষের ধর্মবিশ্বাস, আবেগ-অনুভূতি ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে যদি নিকাববিরোধী আইন তৈরি করা হয়, তবে দেশবাসী সেটা কখনোই মেনে নেবে না। আমরা চাই, আসন্ন রায়ে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটুক।
শিক্ষা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে। দেশের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র থেকে যদি মুসলিম বোনদের পর্দা করার সাংবিধানিক অধিকারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়, তবে সেই প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারাতে বাধ্য হবে।
কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যত দ্রুত উপলব্ধি করতে পারবে, ততই সবার জন্য কল্যাণকর হবে।
কেএল/