সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ ।। ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১০ রমজান ১৪৪৬


চলতি বছরে নির্বাচন অনিশ্চিত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

চলতি বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্রমেই কমছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ বছর ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়া হলেও ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে প্রায় ২০ লাখ সম্ভাব্য নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়টি অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব নয়। ভোটার তালিকা আইন অনুসারে এসব সম্ভাব্য ভোটার ২০২৬ সালের ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাবে।

আবার এই ২০ লাখ তরুণকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ রেখে নির্বাচনও বিতর্ক-বিরোধের সম্মুখীন হবে। এ ছাড়া নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক সব কাজ এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও বিদ্যমান নিবন্ধিত দলগুলোর হালনাগাদ অবস্থা পরীক্ষণ—এসব কাজে দীর্ঘ সময় দরকার। কিন্তু কবে শুরু হবে তা এখনো বলতে পারছে না নির্বাচন কমিশন।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও নির্বাচনের স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। প্রায় দুই মাস ধরে অন্তর্বর্তী সরকার এ বছরের শেষ নাগাদ অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে—এই দুটি সম্ভাব্য সময়ের কথা বলে আসছে। গতকাল বুধবারও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন এ বছরের শেষ নাগাদ, নাকি আগামী বছরের জুনের মধ্যে হবে তা নির্ভর করছে ‘জুলাই চার্টারের’ ওপর।’ জুলাই চার্টার হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ ছয়টি কমিশনের গ্রহণযোগ্য সুপারিশগুলো সম্পর্কে ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়া।

কিন্তু এ কাজটি সম্পন্ন করার সময়সীমাও নির্ধারিত নেই। এই ছয়টি কমিশনের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন গত ২০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে যে ৪৯ লাখ ৭৬ হাজার ৮৪৫ জন বাদ পড়া ও নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করেছে, তার মধ্যে নতুন ভোটার ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৬ জন। এদের জন্ম ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে। ভোটার তালিকা আইন অনুসারে ২০২৬ সালের ২ মার্চ এরা চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় যুক্ত হবে।

বাকি ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৫১৯ ভোটার আগামী ২ মার্চ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব নতুন ভোটার ২০২৬ সালের ভোটার তালিকায় স্থান পাবে তাদের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ, এবারও অনেকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি বা তথ্য সংগ্রহকারীরা সব ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা ছাড়াও নির্বাচনী আসনগুলোর সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার বিধান রয়েছে। এ জন্য নীতিমালা প্রস্তুত ও গেজেট প্রকাশ, জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পুনর্নির্ধারিত সীমানার খসড়া তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ করে দাবি, আপত্তি ও সুপারিশ আহ্বান এবং শুনানি শেষে নিষ্পত্তি করা এবং চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন এ কাজে প্রায় ছয় মাস সময় নিয়েছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ রয়েছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে ১৩০ আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়েছিল এবং তা আজও বহাল আছে। ওই সময় যে আসনগুলোয় বিএনপির জনপ্রিয়তা ছিল সেগুলো কর্তন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সে কারণে এবার সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন এবং বিদ্যমান নিবন্ধিত দলের বর্তমান অবস্থা পরীক্ষা করে দেখাও নির্বাচন কমিশনের অন্যতম কাজ। আগের নির্বাচন কমিশন এ কাজে প্রায় আট মাস সময় নিয়েছিল।

এসব কাজ সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন গতকাল এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সংস্কারের সুপারিশগুলো এখনো না পাওয়ায় আমাদের অনেক কাজই শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। যেসব সুপারিশ আসবে, সেগুলো নিয়েও আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। এর জন্যও দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। তবে সংস্কারের সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করতে দেরি হলে আমরা পিছিয়ে যাব।’

প্রায় ২০ লাখ তরুণ, যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তাদের বাদ রেখে কি আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব হবে—এ প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আগামী ডিসেম্বর ছাড়াও ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার মনে হয়, ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন আয়োজনে ২০ লাখ ভোটার সমস্যা হবে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর ধারণা, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করতে এখনো পাঁচ-ছয় মাস লাগতে পারে। অন্যদিকে ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে অক্টোবরের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। তফসিলের আগে ভোটার তালিকা প্রস্তুত, নতুন দলের নিবন্ধন ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ ছাড়াও পর্যবেক্ষক নীতিমালা প্রণয়ন, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনী মালপত্র ক্রয়—এসব করতে নির্বাচন কমিশনের অনেক সময় প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের যোগাযোগ, সহযোগিতায় এখনো গতি নেই। এ অবস্থায় আগামী ডিসেম্বরে কোনোভাবেই নির্বাচন করা সম্ভব না।

নির্বাচনের সময় নিয়ে যত আলোচনা : গত ২৪ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ হয়। তাতে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে ১৮ মাস বা দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচনের লক্ষ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে যেকোনো পরিস্থিতিতে পূর্ণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময় তুলে ধরেন। তিনি চলতি বছরের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেন। পরদিন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে।

বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলে জানানো হয়। গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা বা অন্তর্বর্তী সরকার যখন চাইবে তখনই নির্বাচন করতে প্রস্তুত ইসি।’

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ