মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫ ।। ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১১ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :

‘নতজানু নয়, পররাষ্ট্রনীতি হবে বাস্তবতা বিবেচনায়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নতজানু নয়, পররাষ্ট্রনীতি হবে বাস্তবতা বিবেচনায়। পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এমন বার্তাই দিলেন তরুণ দুই উপদেষ্টা। সেগুনবাগিচায় হাইব্রিড ফরমেটে অনুষ্ঠিত এক ক্লোজডোর বৈঠকে তারা এ বার্তা দেন। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন। এ সময় তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্ক হবে বাস্তবভিত্তিক, হঠকারিতা নয়: বৈঠকে উপদেষ্টাদের তরফে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে জাতীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকার চায়, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক হবে বাস্তবভিত্তিক, যেখানে কোনো দুঃসাহস বা হঠকারিতার জায়গা হবে না। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ গঠন: অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও পররাষ্ট্রনীতি’- শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এটা একটা লক্ষ্য আকারে ছিল। এটা খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। বরং আমরা চাই, সবার সঙ্গে একটা বাস্তবভিত্তিক সম্পর্ক থাকুক, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে। যেটা বাস্তবভিত্তিক হবে, এখানে কোনো দুঃসাহস, এখানে কোনো হঠকারিতার জায়গা নেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনায় ছিলেন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। আলোচনার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হওয়া উচিত, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ভারত, চায়না ও মিয়ানমার বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের  যোগাযোগ কেমন হওয়া উচিত; এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এ পর্যায়ে এসে আমরা রাষ্ট্রের কিছু সংস্কারের প্রস্তাবনা এবং পদক্ষেপ নিয়েছি। ওগুলো আসলে কীভাবে টেকসই করা যায় এবং এই সময়ে সংস্কারগুলোকে কীভাবে দৃশ্যমান করা যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের মতামত হিসেবে বলেছি, আমাদের একটা বিস্তৃত পরামর্শ দরকার। রাজনৈতিক দলসহ সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে।

উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দরকার সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশের একটা ঐকমত্যের দিকে এগোনো। পরাষ্ট্রনীতি নিয়ে যে ঐকমত্য এটা যেন জাতীয় জায়গা থেকে হয়, জাতীয় ঐকমত্য হয় এবং এটা কোনোভাবে যেন সরকার অদল-বদলের ভিত্তিতে না হয়। বরং বাস্তবতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন বাংলাদেশকে বিশ্ব মঞ্চে উপস্থাপন করে এবং আমরা যেন বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাময় একটি জায়গায় পুরো দুনিয়ার কাছে উপস্থাপন করতে পারি।

তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। জনকূটনীতি, সফট পাওয়ার কীভাবে সামঞ্জস্য করা যায় বাহিরের দেশগুলোতে। কীভাবে আমরা বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারি, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের সামর্থ্য বাড়ানো। বিগত সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দলীয়করণ হয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন আলম। বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগে যে জায়গায় ছিল এটা দলীয়করণ হয়ে গিয়েছিল এবং বিভিন্ন দলের উপস্থাপন ফুটে উঠেছিল। আমরা চাই, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশকে উপস্থাপন করবে। কোনো দলের হয়ে নয়, বরং বাংলাদেশকে উপস্থাপন করুক। এটাই হচ্ছে, আমাদের জন্য এখন বড় বিষয়। আমরা এখানে থাকতে চাই। ওখানে বাংলাদেশকে সামনে রাখার ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলগুলো এবং আমাদের যত স্টেকহোল্ডার আছে সবার ঐকমত্য চাই আমরা। এটাই হচ্ছে, এখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি।

উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রের জায়গা থেকে আমাদের যেটা দরকার সেটা হলো বাস্তবতা। কোনো রকম হঠকারিতা আমরা করতে পারি না। আমরা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা, অখণ্ডতা- এটা হচ্ছে আমাদের জাতীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব। আমাদের জায়গায় আমাদের কীভাবে শক্তি বৃদ্ধি করা যায় সেখানে মনোযোগ দিতে চাই। কোন রাষ্ট্র কি করলো সেটার চেয়ে বড় বিষয় আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং ওখান থেকে আমাদের দরকষাকষির সক্ষমতা বাড়ানো। আমাদের নিজের সক্ষমতা বাড়াতে পারলে তাহলে বাংলাদেশের দরকষাকষির সক্ষমতা বাড়বে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। আর এটা আমাদের জনগণকে উপকৃত করবে।

বিগত সরকারের সময়ে এবং ৫ই আগস্টের পরের হঠকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, গত সরকার হঠকারির চেয়ে যেটা বেশি করেছে সেটা হচ্ছে, নতজানু একটা পররাষ্ট্রনীতি তারা নিয়েছে। আর আমাদের সরকারের জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করছি, বাস্তবভিত্তিক হয়। যদি কোনো হঠকারি বা ভুল থাকে সেটা আমরা শোধরানোর চেষ্টা করবো। এটা মোটামুটি আমাদের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা একটা সংযম অবলম্বন করি এবং আমরা চেষ্টা করি, বাংলাদেশের স্বার্থটাকে সবার আগে রাখার জন্য। সুতরাং এখানে কোনো হঠকারিতার অবস্থান আর নাই।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার ফেরত দেবে না বলে শুনতে পেয়েছেন। মাহফুজ আলম বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ওনারা (ভারত) নিয়েছেন, ওনারা (ভারত) ওনাকে (শেখ হাসিনা) ফেরত দিবে না। এটা আমরা শুনতে পাচ্ছি।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ