শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন আজ


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত স্বপ্নের টানেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশের যোগাযোগ খাতে আরেকটি নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে নদীর তলদেশে টানেল যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। আজ সকালে টানেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানেল উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। আজ টানেল উদ্বোধন হলেও আগামীকাল তা যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’ হতে চলেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এ টানেলের মাধ্যমে দেশের শিল্পায়ন, পর্যটন, অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে। টানেল চালু হওয়ার ফলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া ফিন্যানশিয়াল এবং ইকোনমিক্যাল ‘বেনিফিট কস্ট রেশিও (বিসিআর)’-এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ১ দশমিক ০৫ এবং ১ দশমিক ৫০।

অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু টানেলকে অত্যন্ত দূরদর্শী একটি প্রকল্প বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, টানেলের কারণে চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অনেক শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। যদিও এ টানেলের সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। এ টানেলের কারণে শিল্পায়ন, পর্যটন এবং অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

এই টানেলের মাধ্যমে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে রূপ নেবে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলকে দেশের অর্থনীতির জন্য গেম চেঞ্জার হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এ টানেল চালুর মাধ্যমে দেশের শিল্পায়ন, অর্থনীতি, পর্যটনসহ অন্যান্য খাতে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। টানেলকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় আনোয়ারা উপজেলায় গড়ে উঠছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। নদীর অপর প্রান্তে শিল্পায়নের ফলে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন হবে। পূর্ব প্রান্তে শিল্প-কারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর এবং দেশের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। নদীর পূর্বাঞ্চলে নতুন করে গড়ে উঠবে জাহাজশিল্প, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ফার্নেস ও সিমেন্ট শিল্প- কারখানাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। টানেলের মাধ্যমে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর ও মহেশখালীর আগামীর বাণিজ্যিক হাবের সঙ্গে যুক্ত হবে পুরো দেশ। এ ছাড়া নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন এলএনজি টার্মিনাল, এলপিজি টার্মিনাল, অয়েল টার্মিনাল, গ্যাস ট্রান্সমিশন, অয়েল রিফাইনারি, এনার্জি ও ফুড স্টোরেজ, ট্যুরিজম, এমব্যাঙ্কমেন্ট ও ওয়াটারফ্রন্ট ইকোনমিক জোন। এসব মেগা প্রকল্পে বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য প্রতিদিন চলাচল করবে শত শত গাড়ি। বঙ্গবন্ধু টানেলকে যাতায়াতের সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এ টানেলে শুধু দেশের যোগাযোগব্যবস্থা নয়, দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগব্যবস্থায়ও প্রভাব ফেলবে। এ টানেলের মাধ্যমে দেশ যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- টানেল পুরোদমে চালু হলে প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি চলাচল করবে। বছরে সে সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৬৩ লাখ। ২০২৫ সালে টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যানবাহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ ১ লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। টোলের পরিমাণ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভিতর দিয়ে ১২ ধরনের যানের জন্য টোলের হার চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে টানেলের ভিতর দিয়ে মোটরসাইকেল কিংবা তিন চাকার কোনো যান চলাচল করতে পারবে না। গত জুলাই মাসে সেতু কর্তৃপক্ষের উপসচিব মো আবুল হাসান স্বাক্ষরিত গেজেট অনুযায়ী পিকআপ, কার ও জিপকে দিতে হবে ২০০ টাকা। মাইক্রোবাসকে পরিশোধ করতে হবে ৩০০ টাকা, ৫ টন ট্রাক, ৩২ আসন কিংবা বেশি বাসগুলোকে পরিশোধ করতে হবে ৪০০ টাকা। বাস (৩ এক্সেল) ৫০০ টাকা। ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের ৫০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাক ৬০০ টাকা, ৩ এক্সেলের ট্রাক বা ট্রেইলার ৮০০ টাকা, ৪ এক্সেলের ট্রাক বা ট্রেইলার ১০০০ টাকা, ৪ এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য বাড়তি ২০০ টাকা করে টোল দিতে হবে।

চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’র আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে এক সূত্রে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দিয়ে টানেল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। বাংলাদেশ সরকার ও চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ