সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম এক মাসে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ নিবন্ধন করে চাঁদা পরিশোধ করেছে। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৭ কোটি ৭২ লাখ টাকার ওপরে।
জানা গেছে, প্রথমদিকে সর্বজনীন পেনশনে মানুষের যে হারে সাড়া পাওয়া যায়, পরবর্তীতে তা কিছুটা কমে আসে। ফলে প্রথম মাস শেষে সর্বজনীন পেনশনে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৯৯৯ জনে। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৭ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।
সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জমা পড়া চাঁদার টাকা বিনিয়োগের কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমা পড়া চাঁদার পরিমাণ খুব বেশি না। আমরা আর একটু অপেক্ষা করবো। টাকার অঙ্ক আরও বাড়লে আমরা বিনিয়োগে যাবো।
গত ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা এই চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন চালু হয়েছে। উদ্বোধনের পর প্রথমদিনেই নিবন্ধন সম্পন্ন করে ১ হাজার ৭০০ জন চাঁদা পরিশোধ করেন। তারা প্রায় ৯০ লাখ টাকা চাঁদা জমা দেন। আর প্রথম এক সপ্তাহে চাঁদা পরিশোধ করেন ৮ হাজার ৫৫১ জন এবং তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
জানা গেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ৬ হাজার ২০৩ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৪ কোটি ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ ৫২ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেসরকারি চাকরিজীবী এ খাতে চাঁদা দিয়েছেন।
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশার ব্যক্তিদের জন্য চালু করা হয়েছে সুরক্ষা স্কিম। এই স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৫ হাজার ৩৬ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ২ কোটি ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
যাদের বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা তাদের জন্য চালু হওয়া সমতা স্কিম। এই স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ১ হাজার ৩৬২ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ২২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এই স্কিমের মাসিক চাঁদার হার ১ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্কিম গ্রহণকারী চাঁদা দেবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দেবে সরকার।
আর প্রবাসীদের জন্য চালু করা প্রবাস স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ৩৯৮ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৮২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে পেনশনারের নমিনি পেনশন স্কিম গ্রহণকারীর ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন পাবেন।
চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা দেওয়ার আগেই মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তা নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল তার জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
এমএম/