নানান সমস্যার কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। তবে, স্মৃতিশক্তি যে প্রতিটি মানুষের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলে শেষ করা যাবে না। অথচ, অনিদ্রা থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, পুষ্টির ঘাটতি ইত্যাদির কারণেও স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক আর কী কী কারণে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে-
অনিদ্রা বা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। আর অবশ্যই রাতে গভীর ঘুম হতে হবে। না হলে সারাদিন খারাপ যেতে পারে। এমনকি দীর্ঘদিন ঘুমের ঘাটতি হলে কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ঠিক তেমনই অনিদ্রার কারণে স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। আসলে ঘুম মস্তিষ্কের কোষগুলোর বন্ধনকে শক্তিশালী করে, যা আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। যদি পর্যাপ্ত ঘুম না হয় সেক্ষেত্রে মস্তিষ্ক স্মৃতি ধরে রাখতে পারে না। তাই নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। আর যারা অনিদ্রায় ভুগছেন তারা দিনের শেষদিকে অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন।
ডায়াবেটিস: এই রোগে আক্রান্তদের ডিমেনশিয়া’সহ স্মৃতি সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে মস্তিষ্কের কৈশিক নামক ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলোর ক্ষতি হয়। এছাড়া উচ্চ মাত্রায় ইনসুলিন গ্রহণের ফলেও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিজ্ঞানীরা যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার সমস্যা আরও বাড়তে পারে। এই বিষয়ে এখনই সতর্ক হন।
বয়স: বয়স বাড়তেই স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। যখন এটি দৈনন্দিন জীবনে হস্তক্ষেপ করে তখন চিকিৎসকরা একে ডিমেনশিয়া বলেন। আলঝেইমার হলো ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ রূপ। ৬৫ বছরের পরে প্রতি ৫ বছরে দ্বিগুণ হয় এই ভুলে যাওয়ার সমস্যা। তাই এ সমস্যা দেখা দিলে জীবনধারণে পরিবর্তন আনা জরুরি। বিশেষ করে খাবার, শরীরচর্চা, সামাজিক জীবন ও ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
স্ট্রোক: স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের অংশে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্কের টিস্যু চিন্তা করা, কথা বলা, মনে রাখা বা মনোযোগ দেওয়ার কাজগুলো করতে পারে না সহজেই। একে ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া বলা হয়। এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক ছোট স্ট্রোকের কারণেও ঘটতে পারে। তাই যে বিষয়গুলো স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ধূমপান ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। না হলে ডিমেনশিয়ার সময় বাড়তে পারে।
ধূমপান: ধূমপান ক্যানসারের কারণ। এছাড়া নানা রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয় এটি। ধূমপানের কারণে মস্তিষ্কের অংশগুলো সংকুচিত হয়ে যায় (যা আপনাকে চিন্তা করতে ও মনে রাখতে সাহায্য করে)। এই বদঅভ্যাস আপনার ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও বাড়ায়। তাই ধূমপানের অভ্যঅস থাকলে তা বাদ দিতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।
হৃদরোগ: প্লেক (মোমজাতীয় পদার্থ) ধমনীতে জমে আপনার মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গে রক্ত প্রবাহকে ধীর করে দেয়। একে বলা হয় এথেরোস্ক্লেরোসিস। এটি পরিষ্কারভাবে চিন্তা করা ও জিনিসগুলো মনে রাখা কঠিন করে তুলতে পারে। এমনকি এটি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে সঠিক জীবনধারা বজায় রাখতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ: হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপও কিন্তু স্মৃতিশক্তি কমাতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি স্ট্রোকের মতো অন্যান্য অবস্থারও কারণ হতে পারে, যা ডিমেনশিয়া সৃষ্টি করে। তাই ডায়েট, ব্যায়াম ও ওষুধের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
বিষণ্নতা ও উদ্বেগ: আপনি যদি উদ্বিগ্ন বা হতাশাগ্রস্ত হন, তবে বিভিন্ন বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হতে পারে। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনকটাই বেশি থাকে, যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও ঠিক জানেন না কেন এটি ঘটে। তাই অতিরিক্ত উদ্বেগ বা হতাশায় ভুগলে দ্রুত ডাক্তার বা থেরাপিস্টের সঙ্গে কথা বলুন।
স্থূলতা: আপনার বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) যদি ৩০ বছর থেকেই বেশি থাকে তাহলে পরবর্তী জীবনে আপনার ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে, যা কখনো কখনো স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার দিকে পরিচালিত করে। তাই বিএমআই ঠিক রাখতে হবে ৩০ বছরের পর থেকে।
শরীরচর্চা না করা: নিয়মিত ব্যায়াম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়। যারা এরই মধ্যেই ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন, তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে ম্যারাথন দৌড় বেশ উপকারী হতে পারে। এছাড়া নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন, সাঁতার কাটুন কিংবা নাচ অনুশীলন করুন।
পুষ্টিকর খাবারও না খাওয়া: অস্বাস্থ্যকর খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যা পরবর্তী সময়ে স্মৃতিশক্তি কমাতে সাহায্য করে ও ডিমেনশিয়াসহ মস্তিষ্কের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে মস্তিষ্কের জন্য ভালো এমন খাবার রাখুন পাতে। এক্ষেত্রে খান পুরো শস্য, ফল, শাকসবজি, মাছ, বাদাম, জলপাই তেল ও অ্যাভোকাডোর মতো অন্যান্য স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার। আর অবশ্যই লাল মাংস এড়িয়ে চলবেন।
এনএ/