|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||
আকাশে উঁকি দিয়েছে নতুন চাদ। শুরু হয়ে গেছে মাহে রমজান। এই মাহে রমজান হল আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়ার মাস। এ মাসে মুমিনদের উচিত সৎ আমলের মাধ্যমে আত্মগঠন করা এবং সকল প্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকা। রমজান কেবল সংযমের মাসই নয়, বরং এটি একটি প্রশিক্ষণ মাস, যা আমাদের পরবর্তী জীবনের জন্য নৈতিক ও আত্মিক শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে। তাই এ মাসে কী করণীয় ও কী বর্জনীয়, সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অপরিহার্য।
রমজানে করণীয়
১. সাহরি খাওয়া: রাসূল (সা.) বলেছেন, “সাহরিতে বরকত রয়েছে, তাই তোমরা সাহরি খাও।” (বুখারি, মুসলিম)
২. সঠিক সময়ে ইফতার করা: রাসূল (সা.) বলেছেন, “মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণের ওপর থাকবে, যতক্ষণ তারা ইফতারে দ্রুততা করে।” (বুখারি, মুসলিম)
৩. পরিপূর্ণ রোজা রাখা: শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাই রোজা নয়, বরং চোখ, কান, জিহ্বা ও অন্তরেরও রোজা রাখতে হবে। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং তাকওয়া অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব: রমজান আত্মশুদ্ধির মাস, তাই এই মাসে নামাজের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত।
৫. তারাবির নামাজ পড়া: এটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। রাসূল (সা.) নিজে তারাবি নামাজ আদায় করেছেন এবং সাহাবাদেরও আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
৬. কুরআন তিলাওয়াত বৃদ্ধি করা: এ মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে। তাই বেশি বেশি কুরআন পড়া, বুঝার চেষ্টা করা এবং তদনুযায়ী আমল করা উচিত।
৭. যিকির ও দোয়া: রমজান দোয়া কবুলের মাস। তাই এ মাসে বেশি বেশি যিকির, ইস্তিগফার ও দোয়ার অভ্যাস করা উচিত।
৮. সদকা ও দান-খয়রাত করা: রমজানে দান-সদকার ফজিলত অনেক বেশি। রাসূল (সা.) ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, বিশেষ করে রমজানে।
৯. ইতিকাফ করা: শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করা রাসূল (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।
১০. লাইলাতুল কদর তালাশ করা: এ রাতে ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। তাই এ রাতের ইবাদতে মনোনিবেশ করা উচিত।
রমজানে বর্জনীয়
১. মিথ্যা ও গীবত: রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ পরিত্যাগ করলো না, আল্লাহ তার পানাহার থেকে বিরত থাকার কোনো প্রয়োজন রাখেন না।” (বুখারি)
২. রোজার উদ্দেশ্য নষ্ট করে এমন কাজ: যেমন অশ্লীল ভাষা, ঝগড়া-বিবাদ, রাগান্বিত হওয়া ইত্যাদি।
৩. অপচয় ও অতিভোজন: অনেকে ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করেন, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর ও অপচয়।
৪. অকারণে সময় নষ্ট করা: অনেকেই টিভি দেখা, গেম খেলা বা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করেন, যা রমজানের মহিমান্বিত সময়ের অপব্যবহার।
৫. গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া: যেমন অশ্লীল দৃষ্টি, হারাম মুভি বা গান শোনা, অসৎ কথাবার্তা বলা ইত্যাদি।
৬. রোজার ফজিলতের প্রতি উদাসীন থাকা: রোজা রেখে গুনাহে লিপ্ত হলে রোজার পূর্ণ ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
৭. তারাবি নামাজ থেকে বিরত থাকা: কেউ কেউ অলসতা বা অন্য অজুহাতে তারাবি নামাজ বাদ দেন, যা রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।
৮. শেষ দশকের গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া: অনেকেই শেষ দশ দিন কেনাকাটা ও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত থাকেন, অথচ এ সময় ইবাদতের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
উপসংহার
রমজান মুমিনদের আত্মশুদ্ধির শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, পাপ থেকে মুক্তি এবং তাকওয়া অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তাই আমাদের উচিত, এই মাসকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা এবং পরিপূর্ণ আমল করার মাধ্যমে নিজেকে আত্মশুদ্ধির পথে পরিচালিত করা।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে রমজানের পূর্ণ ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর
হাআমা/