||মোহাম্মাদ হুজাইফা||

মহান আল্লাহ তায়ালা এই মহাবিশে্বর স্রষ্টা। তার ইবাদত, ও সর্বদা তাকে স্মরণ রাখা, তার যিকির করা মুসলমানের কর্তব্য। আল্লাহর কাছে দোয়া করলে, তার জিকির করলে তিনি খুশি হন। আল্লাহকে ডাকার জন্য সুন্দর কিছু নাম আছে। যে নামগুলো তাঁর প্রভুত্ব বড়ত্ব প্রকাশ করে। এগুলোকে সিফাতি নাম বলে। কুরআনে সেগুলোকে আসমাউল হুসনা বলা হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে সেই নামে তাকে ডাকতে বলেছেন।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে- আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। তোমরা সেই নামে তাকে ডাকো। (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৮০)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে- তাঁর সুন্দর কিছু নাম রয়েছে। (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৮)

আল্লাহর গুণবাচক নাম মুখস্থ করার বহু ফজিলতের মধ্যে একটা ফজিলত হলো- আল্লাহর গুণবাচক নাম মুখস্থকারী জান্নাতে যাবে। প্রতিটি মুসলমানের উচিত পূর্ণাঙ্গ দ্বীন শেখার পাশাপাশি আল্লাহর এই নামগুলোও মুখস্থ করে নেওয়া। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর গুণবাচক নাম ৯৯টি। 

হযরত আবু হরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন- রাসুল (সা.) বলেছেন,  আল্লাহর ৯৯টি নাম আছে। যে তা আয়ত্ব করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারি, হাদিস : ৭৩৯২; মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৭;)

অন্য হাদিসে এসেছে, আল্লাহর ৯৯টি নাম আছে। যে তা মুখস্থ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ বেজোড়। তাই তিনি বেজোড় সংখ্যা পছন্দ করেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৪১০) 

আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ 

তিনিই আল্লাহ, ১. তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা উপাস্য নাই, ২. আর-রাহমানু (পরম দয়ালু), ৩. আর-রাহিমু (সীমাহীন করুণাময়), ৪. আল-মালিকু (সত্ত্বাধিকারী), ৫. আল-কুদ্দুসু (মহাপবিত্র), ৬. আস-সালামু (শান্তিদাতা), ৭. আল-মুমিনু (নিরাপত্তাদাতা), ৮. আল-মুহাইমিনু (রক্ষণাবেক্ষণকারী), ৯. আল-আজিজু (মহাপরাক্রমশালী), ১০. আল-জাব্বারু (মহাপ্রতাপশালী)

১১. আল-মুতাকাব্বিরু (মহাগৌরবের অধিকারী) ১২. আল-খালিকু (সৃষ্টিকর্তা), ১৩. আল-কারিমু (উদ্ভাবনকারী), ১৪. আল-মুসাব্বিরু (আকৃতিদানকারী), ১৫. আল-গাফফারু (অসীম ক্ষমাশীল), ১৬. আল-কাহ্হারু (মহাপরাক্রমশালী), ১৭. আল-ওয়াহ্হাবু (মহান দাতা), ১৮. আর-রাজ্জাকু (রিজিকদাতা), ১৯. আল-ফাত্তাহু (মহা বিজয়দানকারী), ২০. আল-আলিমু (মহাজ্ঞানী)

২১. আল-ক্বাবিদু (হরণকারী), ২২. আল-বাসিতু (সম্প্রসারণকারী)। ২৩. আল-খাফিদু (অবনতকারী), ২৪. আর-রাফিয়ু (উন্নতকারী), ২৫. আল-মুয়িজু (মার্যাদাদানকারী), ২৬. আল-মুজিল্লু (অপমানকারী), ২৭. আস-সামিয়্যু (সর্বশ্রোতা), ২৮. আল-বাসিরু (সর্বদ্রষ্টা) ২৯. আল-হাসিবু (মহাবিচারক), ৩০. আল-আদিলু (ন্যায়পরায়ণ)

৩১. আল-লাতিফু (সুক্ষ্মদর্শী), ৩২. আল-খাবিরু (মহাসংবাদ রক্ষক), ৩৩. আল-হালিমু (সহিঞ্চু), ৩৪. আল-আজিমু (মহান), ৩৫. আল-গাফুরু (ক্ষমাশীল), ৩৬. আশ-শাকুরু (গুণগ্রাহী), ৩৭. আল-আলিয়্যু (মহান), ৩৮. আল-কাবিরু (সবচেয়ে বড়), ৩৯. আল-হাফিজু (মহারক্ষক), ৪০. আল-মুকিতু (মহান শক্তিদাতা)।

৪১. আল-হাসিবু (হিসাব গ্রহণকারী), ৪২. আল-জালিলু (মহিমাময়), ৪৩. আল-কারিমু (মহা অনুগ্রহশীল), ৪৪. আর-রাকিবু (মহাপর্যবেক্ষণকারী), ৪৫. আল-মুজিবু (মহান কবুলকারী), ৪৬. আল-ওয়াসিয়ু (মহাবিস্তারকারী), ৪৭. আল-হাকিমু (মহাপ্রজ্ঞাময়), ৪৮. আল-ওয়াদুদু (প্রেমময় বন্ধু), ৪৯. আল-মাজিদু (মহাগৌরবান্বিত), ৫০. আল-বায়িসু (পুনরুত্থানকারী)

৫১. আশ-শাহিদু (সর্বদর্শী), ৫২. আল-হাক্কু (মহাসত্য), ৫৩. আল-ওয়াকিলু (মহান দায়িত্বশীল), ৫৪. আল-ক্বাজিয়্যু (মহাশক্তিধর), ৫৫. আল-মাতিনু (চূড়ান্ত সুরক্ষিত ক্ষমতার অধিকারী), ৫৬. আল-ওয়ালিয়্যু (মহান অভিভাবক), ৫৭. আল-হামিদু (প্রশংসিত)। ৫৮. আল-মুহসিয়্যু (পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব গ্রহণকারী), ৫৯. আল-মুবদিয়ু (সূচনাকারী), ৬০. আল-মুঈদু (পুন:সৃষ্টি কারী)

৬১. আল-হাইয়্যু (চিরঞ্জীব), ৬২. আল-কাইয়ূমু (চিরস্থায়ী), ৬৩. আল-মুহইয়্যু (জীবনদানকারী), ৬৪. আল-মুমিতু (মৃত্যুদানকারী), ৬৫. আল-ওয়াজিদু (ইচ্ছাপূরণকারী), ৬৬. আল-মাজিদু (গৌরবান্বিত), ৬৭. আল-ওয়াহিদু (একক সত্ত্বা), ৬৮. আস-সামাদু (অমুখাপেক্ষী), ৬৯. আল-ক্বাদিরু (সর্বশক্তিমান), ৭০. আল-মুক্তাদিরু (মহান কুদরতের অধিকারী)

৭১. আল-মুকাদ্দিমু (অগ্রসরকারী), ৭২. আল-মুয়াখখিরু (বিলম্বকারী), ৭৩. আল-আউয়ালু (অনাদি), ৭৪. আল-আখিরু (অনন্ত), ৭৫. আজ-জাহিরু (প্রকাশ্য), ৭৬. আল-বাতিনু (লুকায়িত)। ৭৭. আল-ওয়ালিয়্যু (মহান অধিপতি), ৭৮. আল-মুতাআলিয়ু (চিরউন্নত), ৭৯. আল-বররু (কল্যাণদাতা), ৮০. আত-তাউওয়াবু (তওবা কবুলকারী)

৮১. আল-মুন্তাকিমু (প্রতিশোধ গ্রহণকারী), ৮২. আল-আফুউ (ক্ষমাকারী),  ৮৩. আর-রাউফু (অতিশয় দয়ালু), ৮৪. মালিকুল মুলকি (সর্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী), ৮৫. জুল-জালালি ওয়াল ইকরামি (গৌরব ও মহত্ত্বের অধিকারী), ৮৬. আল-মুকসিতু (ন্যায়পরায়ণ), ৮৭. আল-জামিয়ু (একত্রকারী), ৮৮. আল-গানিয়্যু (ঐশ্বর্যের অধিকারী)। ৮৯. আল-মুগনিয়ু (ঐশ্বর্যদানকারী), ৯০. আল-মানিয়ু (প্রতিরোধকারী)

৯১. আদ-দারু (অনিষ্টকারী), ৯২. আন-নাফিয়ু (উপকারকারী), ৯৩. আন-নূরু (জ্যোতি), ৯৪. আল-হাদিয়ু (পথ প্রদর্শনকারী), ৯৫. আল-বাদিয়ু (সূচনাকারী), ৯৬. আল-বাকিয়ু (সর্বদা বিরাজমান), ৯৭. আল-ওয়ারিসু (স্বত্বাধিকারী), ৯৮. আর-রাশিদু (সৎপথে পরিচালনাকারী), ৯৯. আস-সাবূরু (মহাধৈর্যশীল)।

এগুলো ছাড়াও আরও অনেক সিফাতি নাম আছে। আল্লাহর এসব গুণবাচক নাম জপে তার কাছে দোয়া করার প্রতি হাদিসে জোর দেওয়া হয়েছে। মানুষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের কষ্ট, মুসিবতে পড়ে। সেই কষ্ট, মুসিবত থেকে উদ্ধার পেতে আল্লাহর কাছে এসব গুণবাচক নাম নিয়ে প্রার্থনা করলে আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন। এই নামগুলোর মধ্যে বিপদ-মুসিবত-কষ্ট ইত্যাদি থেকে রক্ষা করার গুণ লুকায়িত আছে।