দোয়ার অর্থ বিশ্বজাহানের মালিক মহান রাব্বুল আলামিনকে একান্তে ডাকা। তার সামনে নিজেকে পেশ করা। নিজের প্রয়োজন ও আরজিগুলো তার কাছে তুলে ধরা।
আল্লামা তীবি রহ. বলেন, দোয়া হচ্ছে আল্লাহর কাছে বান্দার সর্বোচ্চ বিনয় প্রদর্শন, তার কাছে নিজের মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা এবং তারই কাছে আশ্রয় গ্রহণ করা। -তুহফাতুল আহওযায়ি : ৯/২২০
এ জন্য আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে দয়াময় আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা। যেকোনো প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা। তার কাছেই সাহায্য চাওয়া। তবে কিছু বিষয়ে বা কিছু বাক্য দ্বারা দোয়া করা নিষেধ আছে। আজ আমরা সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করব- ইনশাআল্লাহ।
সন্তানের জন্য বদদোয়া
অনেক সময় মানুষ পরিণাম না ভেবেই অধৈর্য হয়ে সন্তান-সন্ততিসহ নিকটাত্মীয়দের জন্য বদদোয়া করে বসে, যা নিষেধ। পবিত্র কোরআনে মানুষের এই অধৈর্য আচরণের কথা উল্লেখ হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মানুষ যেভাবে কল্যাণ কামনা করে, সেভাবেই অকল্যাণ কামনা করে; বস্তুত মানুষ খুব বেশি তাড়াহুড়াকারী। -সুরা বনি ইসরাঈল : ১১
মৃত্যু কামনা করা
অনেক সময় মানুষ বিভিন্ন বিপদ-আপদ, ঋণের বোঝা বা অসুস্থতায় হতাশ হয়ে মহান আল্লাহর কাছে মৃত্যু কামনা করে দোয়া করে বসে, যা একেবারে উচিত নয়। হজরত রাসুলুল্লাহ সা. তার উম্মতদের কঠিন বিপদেও মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ করেছেন।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং মৃত্যু আসার আগে যেন মৃত্যুর জন্য দোয়া না করে। কেননা তোমাদের কেউ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিন লোকের বয়স তার কল্যাণই বাড়িয়ে থাকে।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৭১২
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস রা.-এর সনদে নবী কারিম সা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যেন বিপদে পড়ার কারণে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা না করে। তবে যদি মৃত্যু তার কামনা হয়, তাহলে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জীবিত রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত আমার হায়াত আমার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর হয়, তবে আমাকে মৃত্যু দিয়ে দিন।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৭০৭
দুনিয়ায় শাস্তি পাওয়ার দোয়া
অনেকে আবার পরকালীন শাস্তি থেকে বাঁচার আশায় ইহকালেই নিজের শাস্তি কামনা করে। এটা বান্দার ওপর কঠিন বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই আল্লাহর কাছে শাস্তির দোয়া না করে, বরং ক্ষমা প্রার্থনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ইহকালে শাস্তির দোয়া করার ভয়াবহতা নিয়ে একটি হাদিস রয়েছে, সেখানে নবী কারিম সা. এক সাহাবিকে এ ধরনের দোয়া করতে নিষেধ করেছেন। হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সা. একজন মুসলিম রোগীকে সেবা করতে গেলেন। সে (অসুখে কাতর হয়ে) অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল, এমনকি সে পাখির ছানার মতো হয়ে গেল।
হজরত রাসুলুল্লাহ সা. তাকে বলেন, তুমি কি কোনো বিষয়ে প্রার্থনা করছিলে অথবা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে কিছু চেয়েছিলে? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বলেছিলাম, হে আল্লাহ! আপনি পরকালে আমাকে যে সাজা দেবেন তা এই ইহকালেই দিয়ে দিন। সে সময় হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, সুবহানাল্লাহ, তোমার এমন সামর্থ্য নেই যে তা বহন করবে? অথবা তুমি তা সহ্য করতে পরবে না।
তুমি এমনটি বললে না কেন? হে আল্লাহ! আমাদের কল্যাণ দাও পৃথিবীতে এবং কল্যাণ দান করো পরকালেও। আর জাহান্নাম থেকে আমাদের রক্ষা করো। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, তখন তিনি তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আর আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দেন। -সহিহ মুসলিম : ৬৭২৮
ইচ্ছা হলে দান করো
নবী কারিম সা. তার উম্মতদের এ ধরনের বাক্য দ্বারা দোয়া করতে নিষেধ করেছেন। হজরত আনাস রা. বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন দোয়া করে, সে যেন দৃঢ়তা প্রকাশের সঙ্গে দোয়া করে। আর সে যেন না বলে, ‘হে আল্লাহ, যদি তুমি ইচ্ছা করো, তবে আমাকে দান করো।’ কেননা মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর জন্য কোনো বাধ্যকারী নেই। -সহিহ মুসলিম : ৬৭০৪
এনএ/