শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

অধীনস্থের প্রতি যারা কোমল হলে আল্লাহও সদয় হন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিভিন্ন স্তরে সৃষ্টি করেছেন। কাউকে আর্থিক সচ্ছলতা ও ধনদৌলত দিয়েছেন, আবার কাউকে করেছেন নিঃস্ব-এতিম। কেউ দুহাতে টাকা ব্যয় করছেন, কেউ পেটের ক্ষুধা নিয়ে মানুষের কাছে হাত পাতছেন। আদর্শ পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পৃথিবীতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় এই বৈচিত্র্য খুবই জরুরি

কাউকে সম্পদশালী করা বা কর্তৃত্ব দান করা বা মালিক বানানো আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন বিষয়। বান্দাদের তিনি বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। এছাড়া আল্লাহর কাছে তাকওয়াই হলো মর্যাদার ভিত্তি। তাকওয়া না থাকলে দুনিয়ার রাজা-বাদশাহও আল্লাহ তায়ালার কাছে মূল্যহীন। ক্ষমতায় থেকে অধীনস্থের সঙ্গে অন্যায় আচরণ বা বে-ইনসাফি আচরণ করা ইসলামি শিষ্টাচারের বিপরীত ও তাকওয়ার পরিপন্থী। মুসলিমদের কর্তব্য হলো- অধীনস্থের সঙ্গে সদাচরণ করা।

প্রিয়নবী সা. অধীনস্থদের সঙ্গে অত্যন্ত স্নেহপূর্ণ ও মানবিক আচরণ করতেন। এমনকি তারা বড় কোনো ভুল করে বসলেও মমতার সঙ্গে শুধরে দিতেন আর ছোট ভুল প্রকাশ পেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। বিখ্যাত সাহাবি আনাস বিন মালেক রা. দীর্ঘ ১০ বছর রাসুল সা.-এর ঘরের ও বাইরের কাজ করেছেন। তার সঙ্গে রাসুল সা.-এর আচরণ কেমন ছিল সে বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মদিনায় ১০ বছর রাসুল সা.-এর খেদমত করেছি। আমি ছিলাম অল্পবয়স্ক বালক। আমার সব কাজ রাসুলের মর্জিমাফিক হতো না। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় তিনি কখনও আমাকে ধমক দেননি এবং বলেননি যে, এটা কেন করেছ বা এটা কেন করোনি?’ (আবু দাউদ: ৪৭৭৪)

রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছেন। অতএব তোমরা যা খাও তাদেরকেও তা খাওয়াও; আর তোমরা যা পর তাদেরকেও তা পরিধান করাও। তাদেরকে সাধ্যাতীত কোনো কাজের আদেশ করো না। যদি করেই থাকো তবে তাদেরকে সহযোগিতা করো।’ (বুখারি: ২৫৪৫; মুসলিম: ১৬৬১)

অধীনস্থ ব্যক্তির ওপর কোমলতা ও নম্রতা প্রদর্শনকারীদের জন্য নবীজির দোয়া রয়েছে। আল্লাহর কাছে তাদের জন্য তিনি দোয়া করেন এভাবে-

 اللَّهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ

 ‘হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে এবং তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ করে, তুমি তার প্রতি কঠোর হও। আর যে আমার উম্মতের ওপর কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি কোমল আচরণ করে, তুমিও তার প্রতি কোমল ও সদয় হও।’ (মুসলিম: ১৮২৮)

আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা.-এর অন্তিম মুহূর্তে তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল এবং তাঁর মুখের ভাষায় এ অসিয়ত ছিল যে ‘...তোমাদের দাস-দাসীর ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করবে (অর্থাৎ তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে)।’ (ইবনে হিব্বান: ৬৬০৫)

 

একবার এক সাহাবি এসে রাসুল সা.-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার কাজের লোককে কতবার ক্ষমা করব? রাসুল সা. চুপ থাকলেন। সাহাবি আবার জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর রাসুল সা. বললেন, ‘প্রতিদিন সত্তরবার।’ (তিরমিজি: ১৯৪৯)

রাসুল সা.-এর আদর্শ অনুযায়ী অধীনস্থ লোকদের সঙ্গে আমাদের আচরণ যদি ভালোবাসার হয়, তা হলে তাদের মুখে হাসি ফুটবে। আর তাদের খুশি মানে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল খুশি; আসমান-জমিনের সকল সৃষ্টি খুশি।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ