শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


নতুন বছরের আগমন: আমাদের করণীয় 

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

।।ওলিউল্লাহ তাহসিন।।

সময়ের চাকা আপন গতিতে এগিয়ে চলছে, জীবনের পথ ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে, প্রতিনিয়ত মৃত্যুর জন্য আমরা অগ্রসর হচ্ছি। দিন যাচ্ছে, মাস আসছে, বছর গণনা হচ্ছে। কিন্তু, আমরা আগের মতই উদাসীনতায় নিমগ্ন। দুনিয়ার মোহে লিপ্ত থাকায় মৃত্যু ও আখেরাত আমাদের স্বরণে আসে না।

 
সবসময় ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার পেছনে ভবঘুরের মত দৌড়াচ্ছি। আর এতেই আমরা নিজেদের পরিতৃপ্ত ও সঠিক মনে করে জীবন পার করছি। অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'যারা দুনিয়ার জীবনকে আখেরাত থেকে অধিক পছন্দ করে, আর আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং তাতে বক্রতার সন্ধান করে; তারা ঘোরতর ভ্রষ্টতায় রয়েছে।' (সুরা ইবরাহিম: ৩)

আজ মুসলিম উম্মাহ নিজেদের ঈমান-আমলের কথা ভুলে দুনিয়া অর্জনের জন্য ব্যাকুল। নিজেদের ঈমানী স্বকীয়তা, সাংস্কৃতি, সভ্যতা ও নববী আদর্শের পরিবর্তে পশ্চিমা ইহুদি খৃষ্টানদের আদর্শ অনুকরণে ব্যতি ব্যস্ত।

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবূ সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের নীতি-পদ্ধতি পুরোপুরিভাবে অনুসরণ করবে, বিঘতে বিঘতে ও হাতে হাতে, এমনকি তারা যদি সাপের গর্তে প্রবেশ করে থাকে তাহলেও তোমরা তাদের অনুসরণ করবে। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! পূর্ববর্তী উম্মাত বলতে তো ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরাই উদ্দেশ্য? তিনি বললেন, তবে আর কারা?' (বুখারী:৬৮২১;  মুসলিম:৬৫৩৯)

হাদিসের ভাষ্য বর্তমান সময়ের চিত্রের অনুরূপ। আজ বিধর্মীদের কৃষ্টি-কালচার, আচার-অনুষ্ঠান, রীতি-নীতি, পোষাক-পরিচ্ছেদ ও তাদের মতাদর্শকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুকরণ করা হচ্ছে। পশ্চিমাদের বিভিন্ন দিবসের নামে উৎসব-উদযাপনকে অনেকে আঁকরে ধরছে। তাদের অনুসরণ-অনুকরণে নানান দিবস পালন করছে।
এইতো সামনে ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নতুন বছরের সূচনা হবে।

৩১শে ডিসেম্বর বছরের শেষ রাতে (থার্টি ফার্স্ট নাইট) আনন্দ-উল্লাস, গানবাজনা ও কনসার্টে পুরো শহর মুখরিত থাকবে। অসুস্থ ব্যক্তির যন্ত্রণা বাড়িয়ে, ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুম কেড়ে নিয়ে শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে আতশবাজি আর ফানুশ উড়িয়ে হৈ-হুল্লরে মেতে উঠবে। বেহায়াপনা আর জেনা-ব্যভিচারের মত জঘন্য কাজও বাদ যাবে না। বছরের শেষ দিনটি এভাবেই আল্লাহর অবাধ্যতায় বিধর্মীদের সাদৃশ্যে এমন উন্মাদনা আর মাতলামি করে কাটিয়ে দেবে।


অথচ হওয়ার কথা ছিল এমন যে, জীবন থেকে একটি বছর কেটে গেল, হায়াতের কিছু অংশ ফুরিয়ে গেল, মৃত্যু একধাপ এগিয়ে আসল। এখনই সময় নিজের হিসাব-নিকাশের। আজই সময় নিজেকে সংশোধনের। কারণ, এদিন আক্ষেপের। অনুভবের। অনুশোচনার। তাওবার। এদিন সব পাপাচার, অবাধ্যতা ও পঙ্কিলতা ছেড়ে রবের নিকট ফিরে আসা ও সামনের দিনগুলোতে তাঁর ইবাদত-আনুগত্যে কাটানোর প্রতিজ্ঞা করার এক মোক্ষম সময়। এদিনের প্রত্যাবর্তনই চূড়ান্ত সফলতা নিয়ে আসবে। কিয়ামতের দিন রবের দেওয়া পুরষ্কার পেতে সহায়তা করবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আর প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা, সে আগামীকালের জন্য কী প্রেরণ করেছে; তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।' (সুরা হাশর: ১৮)

প্রতিদিনের মতই সন্ধ্যা নামবে। রাত আসবে। রাত শেষে দিন আসবে। নতুন বছর শুরু হবে। তার আগেই নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নতুনভাবে জীবন গঠন করার অঙ্গীকার করলে জীবনটি হবে পূণ্যময়। মুছে যাবে সব পাপরাশি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
'তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (সুরা ফুরকান:৭০)

লেখক: শিক্ষক,মারকাযুস সুন্নাহ ওয়াদ দাওয়াহ

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ