শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

।।ওলিউল্লাহ তাহসিন।।

চলছে শীতকাল। চারপাশে ছড়িয়ে পরেছে শীতের আমেজ। সময়ের পরিবর্তনে এখন রাত অনেক দীর্ঘ। আর দিন হয়েছে ছোট। এসবই আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে।'(আল-ইমরান:১৯০)


আবার কখনো দিন দীর্ঘ হয়। রাত হয় ছোট। তখন গরমের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। মানুষের কাজ-কর্মে এমনকি ইবাদত করতে কষ্ট হয়। কারণ গরমকালের তীব্রতা মূলত জাহান্নামের নিঃশ্বাস।

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'যখন গ্রীষ্মকালীন উত্তাপ বৃদ্ধি পায়, তখন সালাত ঠাণ্ডা করে (কিছুটা বিলম্বে) আদায় করবে। কেননা, গরমের তীব্রতা জাহান্নামের নি:শ্বাস।' (বুখারী ৫৩৩, ৫৩৪; মুসলিম ৬১৫)


কিন্তু শীতকাল তার বিপরীত। এসময় আবহাওয়া ঠাণ্ডা ও শীতল থাকায় নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদত করা সহজ হয়। এজন্যই শীতকালকে বলা হয় ইবাদতের বসন্ত কাল।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমদ:১১৭১৬)

কারণ, বসন্তকালে যেমন প্রকৃতির আসল রূপ প্রকাশ পায়, চারদিকে কোমল আবহাওয়া বিরাজ করে, গাছে গাছে নতুন পাতা ও ফুলের বাহার জন্ম নেয়, পাখিদের কলতানে আনন্দের সুরভী ছড়ায়, ফলে সবার কাছে এসময়টি হয়ে উঠে খুব প্রিয় ও পছন্দনীয়।

তেমনিভাবে একজন মুমিনের জন্য শীতকালে রাত হয় দীর্ঘ, সে রাতে নামাজ, তেলাওয়াত ও জিকির-আজকারে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ পায়। আবার দিন হয় ছোট, আবহাওয়া থাকে শীতল, ফলে তৃষ্ণা ও ক্ষুধাহীন সহজেই রোজা রাখতে সক্ষম হয়। তার কাছে এ সময়টি খুব প্রিয় ও পছন্দনীয় হয়।


হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, শীতকাল ইবাদতকারীদের জন্য গনিমত স্বরূপ। (হিলয়াতুল আওলিয়া ১/২৬)

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,'শীতকালের রোযা হচ্ছে বিনা পরিশ্রমে যুদ্ধলব্ধ মালের অনুরূপ।' (তিরমিযী: ৭৯৭)


সাহাবায়ে কেরাম শীতকালের জন্য অপেক্ষায় থাকতেন। শীতকাল আসলে খুশি হতেন। শীতকালে আমল করাকে গনিমত মনে করতেন। রাত দীর্ঘ হওয়ায় নফল নামাজে লিপ্ত থাকতেন। দিন ছোট হওয়ায় এবং পানির পিপাসা না থাকায় বেশি বেশি রোজা রাখতেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, ‘হে শীতকাল! তোমাকে স্বাগত! শীতকালে বরকত নাজিল হয়; শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যায় এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা যায়।(লাতাইফুল মায়ারিফ: ৪৩৫)


হযরত হাসান বসরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, 'মুমিনের জন্য শীতকাল কতই না উত্তম! রাত তখন দীর্ঘ হয় সে নামাজ পড়ে। দিন হয় ছোট তখন সে রোজা রাখে।'([হিলয়াতুল আউলিয়া: ৪৩৫)


শীতকালে দিন অনেক ছোট হয় এবং আবহাওয়া শীতল থাকে ফলে খুব সহজেই রোজা রাখা যায়। সারা দিনে তেমন পানির তৃষ্ণা লাগেনা এবং খাবারের চাহিদাও থাকেনা। এজন্য তখন নফল রোজা রাখা সূবর্ণসময়। রোজা কাজা থাকলে তা আদায় করার অতি উপযোগী সময়।
আবার রাত অনেক দীর্ঘ হয়। ফলে রাতের শুরুতে ঘুমিয়ে গেলে ফজরের অনেক আগেই ঘুম পূর্ণ হয়। তখন অনায়াসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করা যায়।


আর একজন মুমিনের গুণ হল সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য উদগ্রীব থাকা। আল্লাহর পক্ষ হতে যখন আমলের সুযোগ আসে সে কখনই তা হাতছাড়া করতে চায় না। সুযোগকে পুঁজি মনে করে একাগ্রতার সাথে ইবাদতে মগ্ন হয়। মজবুত করে মহান রবের সাথে সম্পর্ক এবং ঠিকানা করে নেয় চিরস্থায়ী জান্নাতের সু-উচ্চ মাকামে।

লেখক: শিক্ষক,মারকাযুস সুন্নাহ ওয়াদ দাওয়াহ

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ