ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছেন তরুণ আলেম মাওলানা আবদুল্লাহ মাহমুদ। তার বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানায়। বাবা মাওলানা তাসলিমুদ্দিন। স্থানীয় একটি আলিয়া মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
ভর্তি পরীক্ষায় 'খ' ইউনিট থেকে আব্দুল্লাহ মাহমুদের মেরিট পজিশন ৭৬৮। পরীক্ষার প্রস্তুতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মাদ হুজাইফা
আওয়ার ইসলাম: আপনি কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ জামাত দাওরায়ে হাদিস পড়েছেন। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন, এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
আব্দুল্লাহ মাহমুদ: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে। বেশি ভালো লাগছে যেহেতু আমি এবং আমার বোন একই সাথে চান্স পেয়েছি।
ঢাবিতে ভর্তির চান্স পেয়ে আমার মনে হয়েছে— জীবনের পরিকল্পিত পথেই এগোচ্ছি। তবে হাইআতুল উলয়ার রেজাল্টের পরের অনুভূতির সঙ্গে তুলনা করলে এটি কমই হবে। কারণ দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষার জন্য যেমন এফোর্ট দিয়েছি এখানে তার অর্ধেকও দিইনি।
আওয়ার ইসলাম: দাওরায় হাদিস কত সালে কোন মাদরাসায় পড়েছেন? হাইআতুল উলয়া পরীক্ষায় আপনার রেজাল্ট কী ছিল?
আবদুল্লাহ মাহমুদ: দাওরায়ে হাদিস পড়েছি গত বছর অর্থাৎ ১৪৪৫ হিজরি/২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে আল্লামা মাহফুজুল হক পরিচালিত জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়ায়। আলহামদুলিল্লাহ, হাইআতুল উলয়ায় আমি মেধা তালিকায় ‘দ্বিতীয় স্থান’ অর্জন করেছিলাম।
আওয়ার ইসলাম: আপনি মাদরাসায় পড়াশোনা করেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন কখন থেকে দেখা শুরু করলেন? অনুপ্রেরণা কার কাছ থেকে পেয়েছেন?
আবদুল্লাহ মাহমুদ: প্রথমত করোনা মহামারির সময় সমাজের মানুষদের সঙ্গে মিশতে গিয়ে আমি বুঝতে পারি, সমাজ আমাকে অপাঙ্ক্তেয় জ্ঞান করছে। আমি জানি না— এটি আমার ব্যর্থতা নাকি সমাজের। বাকি শুধু কওমি মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড হওয়ার কারণে অনেক যোগ্য মানুষকে আমাদের সোসাইটি, দেশ মার্জিনালাইজড করে আসছে। তখন আমি আমার পরিকল্পনায় কিছুটা ভিন্নতা আনি। আমি আমার উস্তাজের সাথে পরামর্শ করে আমাদের আঞ্চলিক একটি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিই। যদিও পরীক্ষা দেওয়ার সময় দেশের বাহিরে পড়ালেখা করারও একটা সুপ্ত বাসনা ছিল। আর অনুপ্রেরণার যে কথা বললেন, এখানে আমাদের ডিমোটিভেটই বেশি করা হয়। তবুও কয়েকজন বড় আলেম যেমন শায়েখ আহমাদুল্লাহ, আব্দুল্লাহ মাসুম সাহেবসহ অনেকের থেকে সরাসরি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বিশেষত ‘রাহমানিয়া মাদরাসা’ আমার চিন্তার পরিধি বাড়িয়েছে। আরও অনেক ঘটনা-অনুঘটনা আছে সেগুলো অজানাই থাকুক।
আওয়ার ইসলাম: মা-বাবা, পরিবার, বন্ধু বা শিক্ষক—কার কোন সহযোগিতা বা পরামর্শ বিশেষ কাজে এসেছে?
আবদুল্লাহ মাহমুদ: উপর্যুক্ত সকলের পরামর্শই অনেক কাজে দিয়েছে। বেশি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে ইকবালের এই পঙক্তিটা —‘মানজিল সে আগে বাড়্হ কার মানজিল তালাশ কার/মিল জায়ে তুঝকো দারয়া তো সামানদার তালাশ কার।’
আওয়ার ইসলাম: কখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছিলেন?
আবদুল্লাহ মাহমুদ: প্রস্তুতিটা আসলে খুব সিরিয়াসলি নেওয়া হয়নি। তবে পরীক্ষার তিন মাস আগ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি।
আওয়ার ইসলাম: ঢাবিতে আপনি কোন ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করবেন?
আবদুল্লাহ মাহমুদ: ইসলামি অর্থনীতি নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল। ইসলামি অর্থনীতির যেহেতু পৃথক ডিপার্টমেন্ট নেই আর ইসলামিক স্টাডিজের সিলেবাসে ইসলামি অর্থনীতির বিরাট একটা অংশ আছে, তাই ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টেই হয়তো ভর্তি হবো ইনশাআল্লাহ।
আওয়ার ইসলাম: এরপরে আপনার স্বপ্ন কী?
আবদুল্লাহ মাহমুদ: এই প্রশ্নটা আসলে আমার জন্যে বেশ বিব্রতকর। আমার স্বপ্নের কথা শুনলে অনেকে হাসাহাসি করবে। পাবলিকলি আমি জীবনের স্বপ্নের কথা বলতে চাই না। তবে আমার স্বপ্ন যতটা না ব্যক্তিগত তার চেয়ে বেশি উম্মাহকেন্দ্রিক। আল্লাহ তায়ালা স্বপ্নটা পূর্ণ করলে সবাই জানবে। অন্যথায় সবার জেনেও মনে হয় লাভ হবে না।
আওয়ার ইসলাম: কওমি তরুণদের মধ্য থেকে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায় তাদের নিয়ে কিছু বলুন এবং এ ব্যাপারে তাদের পদক্ষেপ কী হতে পারে?
আবদুল্লাহ মাহমুদ: আমার মনে হয় ব্রডলি কাজ করার ক্ষেত্রে ঢাবির ব্যাকগ্রাউন্ড অনেকটা কাজে দেবে। এরপরও যেকোনো পড়ালেখাই হোক— সেটা অবশ্যই পরিকল্পিত, বড়দের পরামর্শ নিয়েই করা উচিত। ঢাবিতে চান্স পাওয়া যেহেতু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অনেকটা কঠিন আর এক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজির ব্যাসিকটা অনেক স্ট্রং থাকতে হয়, তাই এইদিকে ফোকাস দিতে হবে একটু বেশি। আমি সকলের কাছে আগামীর জন্যে দোয়া চাই।
এমএইচ/