মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫ ।। ১১ চৈত্র ১৪৩১ ।। ২৫ রমজান ১৪৪৬


নবীওয়ালা মেহনতে উলামায়ে কেরামের রাহবারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীদের জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার ৫৭তম আসর শুরু হয়েছে। সেখানে দীনের তলব নিয়ে সমবেত হয়েছেন লাখো মানুষ। নবীওয়ালা এই কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত উলামায়ে কেরামের অনেকেই। তাদের একজন মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী। দেশের খ্যাতিমান এই আলেম সম্প্রতি দিাওয়াত ও তাবলিগের গুরুত্ব, সাহাবায়ে কেরামের কুরবানি, উলামায়ে কেরামের রাহবারি ইত্যাদি বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- হাসান আল মাহমুদ  

ইজতেমা প্রতিদিন : দাওয়াত ও তাবলিগের গুরুত্ব কী?
মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী : দাওয়াত ও তাবলিগের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। শরিয়তে ইসলামির ‘আসলুল উসুল’ যথা যত উসুল আছে সমস্ত উসুলকে জমিনে রক্ষা করার জন্য দাওয়াত ও তাবলিগের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে রাসুল সা.কে বলেছেন, ‘হে রাসুল! আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দিন’- সূরা আল-মায়েদা-৬৭। নবীজি সাহাবায়ে কেরামকে বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও তোমরা পৌঁছে দাও’ -বুখারি-৩৪৬১। আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবী আলাইহিস সালামকে এই দাওয়াত-তাবলিগের জন্য পাঠিয়েছেন। নবীরা সবাই এই কাজের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কুরবানি আর মেহনতের বদৌলতে আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। নবীরা মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত করেছেন। হালাল-হারাম, হক-বাতিল, ভালো-মন্দ চিনিয়েছেন। নবীদের পরে তাদের অনুসরণকারীরা এই দাওয়াত-তাবলিগের কাজ চালিয়ে গেছেন। পানি ছাড়া যেমন কোনো জীবন বাঁচে না, দাওয়াত ও তাবলিগ ছাড়াও আল্লাহর দীন বাঁচে না।  তাই, দাওয়াত ও তাবলিগের গুরুত্ব সবার আগে।

ইজতেমা প্রতিদিন : দাওয়াতের মেহনতে সাহাবাদের কুরবানি কেমন ছিল?
মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী : দাওয়াত ও তাবলিগের জন্য সাহাবায়ে কেরামের যে কুরবানি ছিল তা অতুলনীয়। তাদের কুরবানির কোনো তুলনা হয় না। দীনের জন্য তাঁরা নিজ পরিবার-পরিজন, বিবি-বাচ্চা সবাইকে ছাড়তে হয়েছে। এমনকি নিজেদের কবরটাও নিজ জন্মস্থানে হয়নি। সারা পৃথিবীতে তাঁরা দীনের জন্য হিজরত করেছেন। যার যেখানে ইন্তেকাল হয়েছে, সেখানেই তাঁর কবর হয়েছে। এজন্য, দেখা যায়Ñ সারা পৃথিবীতেই তাদের কবর পাওয়া যায়। একেকজন সাহাবির কুরবানি আর মেহনত একেকটি ইতিহাস। হজরত বেলাল, হজরত খুবাইব রাজিয়াল্লাহু আনহুমাÑ কারটা ছেড়ে কারটা বলব। দীনের জন্য সমস্ত সাহাবির কুরবানি আর মেহনতের কোনো তুলনা কারও সাথে দেওয়া যায় না। তঁদের ঈমাদীপ্ত জীবন আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।

ইজতেমা প্রতিদিন : নবীওয়ালা মেহনতে উলামায়ে কেরামের রাহবারি কতটা জরুরি? 
মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী : নবীওয়ালা মেহনতে উলামায়ে কেরামের রাহবারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই নবীওয়ালা কাজ যদি ইলমি আলোয় না হয়, তাহলে এর দ্বারা গুমরাহি পয়দা হয়। ইতোমধ্যে অনেকের ভেতরে সেটা পরিলক্ষিত হয়েছে, যা সুস্পষ্ট। এজন্য প্রত্যেক যুগেই হক্কানি আলেমরা নবীওয়ালা মেহনতের রাহবারি করে গেছেন। তাদের মেহনতের বদৌলতে আমরা দীন পেয়েছি।

ইজতেমা প্রতিদিন : ময়দানে আসা মুসল্লিদের উদ্দেশে আপনার নসিহত কী?
মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী : ৫৭তম বিশ^ ইজতেমা উপলক্ষে ময়দানে যারা এসেছেন, আল্লাহ তাদের কবুল করুন। এই কনকনে শীত, আর তার ওপর বৃষ্টি; সবকিছু উপেক্ষা করে দীনের জন্য যারা এসেছেন তাদের ঈমানকে আল্লাহ মজবুত করুক। দীনের খাতিরে তাদের সবর, কষ্ট-তাকলিফ আর মেহনত করতে হবে। একে অপরের পাশে থেকে যেন সবাই সবার প্রতি সহমর্মি-হামদর্দি মনোভাব রাখেন। ‘একজন পানি না খেয়ে আরেকজন খাওয়ালেন’ সাহাবাদের সেই সুন্নাতের ইতিহাস যেন ময়দানে তৈরি হয়। ‘একজন দাঁড়িয়ে থেকে আরেকজনকে আরামে রাখার’ সাহাবাদের সেই সুন্নাতি ইতিহাস যেন রচিত হয়। ইকরামুল মুসলিমিনের আদর্শকে জিন্দা করে তিন দিনের এই ইজতেমাকে যেন নিজেদের জীবন পরিচালনার একটা গাইডলাইন বুকে ধারণ করে ফিরতে পারেন, আল্লাহ তাদের সেই তাওফিক দান করুন।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ