বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ।। ৪ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১৯ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বরিশাল সিটি নির্বাচন-২০২৩ বাতিল ও হাতপাখাকে বিজয়ের দাবিতে মামলা বড়দের সম্মানিত রূপ নয়, সংগ্রামী অধ্যায় দেখুন গাজায় গণহত্যা, ভারতে ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদে জমিয়তের গণমিছিল  ওয়াকফভূমি দখলের নীলনকশা তৈরি করেছে ভারত সরকার: যুব জমিয়ত হেফাজতে ইসলামের নরসিংদী জেলা কমিটি গঠন দল নিবন্ধনের সময়সীমা ৯০ দিন বাড়ানোর আবেদন এনসিপির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সবক শুরু বরিশাল জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়ার ‘নির্বাচনী চাপ প্রয়োগে সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করা গাদ্দারির সমতুল্য’ কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম চালু ওয়াকফ আইন নিয়ে অন্তর্বর্তী নির্দেশিকার পথে সুপ্রিম কোর্ট

২০১৯ সালের আগস্ট থেকে জম্মু-কাশ্মীরে শহীদ ৯৯১  

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট থেকে ভারতীয় দখলকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে, যেখানে এখন পর্যন্ত ৯৯১ জন কাশ্মীরি শহীদ হয়েছেন।

কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের গবেষণা বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী, রাষ্ট্রীয় রাইফেলস, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF), সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (CRPF), স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (SOG) এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত। শহীদদের মধ্যে ২০ জন নারীও রয়েছেন।

এই সহিংসতা শুরু হয় যখন ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করে।

জ্যেষ্ঠ সর্বদলীয় হুররিয়ত কনফারেন্স (APHC) নেতারা মুহাম্মদ আশরাফ সেহরাই ও আলতাফ আহমদ ভারতের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন। এ ছাড়া প্রবীণ হুররিয়ত নেতা সৈয়দ আলী গিলানি এক দশকেরও বেশি সময় গৃহবন্দি অবস্থায় থেকে মৃত্যুবরণ করেন।

এই ঘটনাগুলো ভারতের দখলকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর প্রমাণ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলের নজরে এসেছে।

কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৯৯১ জন শহীদের মধ্যে বেশিরভাগই কর্ডন অ্যান্ড সার্চ অপারেশন এবং ঘরে ঘরে তল্লাশির সময় আটক হওয়ার পর ভুয়া ‘এনকাউন্টারে’ বা হেফাজতে হত্যা করা হয়। তাদের ‘মুজাহিদিন’ বা ‘ওভার-গ্রাউন্ড ওয়ার্কার’ (OGW) বলে চিহ্নিত করে হত্যা করা হয়।

এছাড়া, ভারতীয় বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্মম বলপ্রয়োগ করায় অন্তত ২,৪৮৬ জন গুরুতর আহত হন। এই সহিংসতার ফলে ৭৩ জন নারী বিধবা এবং ২০২ জন শিশু এতিম হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের আগে ও পরে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরকে একটি উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করা হয়েছে, যেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঘেরাওয়ে পুরো অঞ্চল রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে হাজার হাজার হুররিয়ত নেতা, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মী, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, তরুণ ও অন্যান্য কর্মীদের কালো আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করে ভারতের তিহার জেলসহ IIOJK-র বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে।

এছাড়া, ২০১৯ সালের আগস্টের পর থেকে কাশ্মীরিদের জামিয়া মসজিদ ও ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায়ের অনুমতিও দেওয়া হয়নি, যা ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন।

প্রতিবেদনে আরও তুলে ধরা হয়েছে যে, বিজেপি সরকার পরিকল্পিতভাবে কাশ্মীরি জনগণের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং তাদের মানসিকভাবে নির্যাতনের জন্য ঘরবাড়ি ও জমিসহ সম্পত্তি জব্দ করছে, বিশেষ করে হুররিয়ত নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

যেসব বিশিষ্ট হুররিয়ত নেতাদের সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে ও যারা কারারুদ্ধ রয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন: সর্বদলীয় হুররিয়ত কনফারেন্স (APHC)-এর চেয়ারম্যান মাসাররাত আলম বাট, মুহাম্মদ ইয়াসিন মালিক, শাব্বির আহমদ শাহ, আসিয়া আন্দ্রাবি, নাহিদা নাসরিন, ফাহমিদা সোফি, নাঈম আহমদ খান, মোহাম্মদ আয়াজ আকবর, পীর সাইফুল্লাহ, মিরাজউদ্দিন কালওয়াল, ফারুক আহমদ দার, শাহিদুল ইসলাম, ড. হামিদ ফায়াজ, আমির হামজা, মুশতাক-উল-ইসলাম, মাওলানা বশীর ইরফানি, বিলাল সিদ্দিকী, ড. কাশিম ফাখতো, ড. মুহাম্মদ শফি শরিয়াতি, মুহাম্মদ ইউসুফ ফালাহি, মুহাম্মদ রফিক গনাই, ফিরোজ আহমদ খান, সৈয়দ শাহিদ ইউসুফ, সৈয়দ শাকিল ইউসুফ, হায়াত আহমদ বাট, আব্দুল আহাদ পারা, নূর মুহাম্মদ ফায়াজ, জাফর আকবর বাট, অ্যাডভোকেট মিয়ান আব্দুল কাইউম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ বাট, ফিরদাউস আহমদ শাহ, সাদুল্লাহ পার্রে, গুলাম কাদির বাট, জহুর আহমদ বাট, উমর আদিল দার, সেলিম নানাজি, মুহাম্মদ ইয়াসিন বাট, অ্যাডভোকেট জাহিদ আলী, ফয়াজ হুসেইন জাফেরি, আদিল সিরাজ জারগার, দাউদ জারগার।

এছাড়া মানবাধিকার রক্ষাকারী খুররাম পারভেজ ও মুহাম্মদ আহসান উন্তু ভারত ও অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

প্রবীণ হুররিয়ত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুককেও শ্রীনগরের জামিয়া মসজিদে শুক্রবারের নামাজ আদায় করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা ধর্মীয় স্বাধীনতার আরেকটি গুরুতর লঙ্ঘন।

APHC (সর্বদলীয় হুররিয়ত কনফারেন্স) জানিয়েছে, কাশ্মীরিরা উন্নয়নের দাবি করে না, বরং তাদের সর্বাগ্রে চাওয়া হল—জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গণভোটের মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার।

তারা স্পষ্ট করে বলে, কাশ্মীরি জনগণ শান্তি ও উন্নয়নের বিরুদ্ধে নয়; তবে তাদের প্রধান লক্ষ্য হল ভারতীয় দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনভাবে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করা।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ