সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ ।। ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১০ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী বিরতিকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম ফুটবলারদের ওমরা পালন ধর্ষণের বিচারে শরয়ি আইন থাকলে, কোন শিশু আর ধর্ষিত হতো না: উলামা-জনতা ঐক্য পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় ঈদে নতুন নোট বিতরণ স্থগিত ধর্ষণ এবং নারীর পরিচয় নিয়ে অবমাননায় ১৫১ আলেমের বিবৃতি ১০ম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম ত্রাণ বন্ধের পর এবার গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করছে ইসরায়েল তারাবিতে ফাইভ জি স্পিডে তেলাওয়াত করবেন না: আজহারী ‘আলেমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলা জিহাদ নয়, সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

মুসলিম দেশে কোক–পেপসির ব্যবসায় ধস, কমছে চাহিদা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে কয়েক দশক ধরেই ব্যাপকহারে ব্যবসা করে আসা কোমল পানীয় কোম্পানি কোকা–কোলা ও পেপসিকো এবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গাজা যুদ্ধের ইস্যু নিয়ে স্থানীয় কোমল পানীয়গুলোর কাছে ব্যবসা হারাতে বসেছে এই দুই কোম্পানি।

আমেরিকার প্রতিষ্ঠান কোক ও পেপসি ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দাবি করা হয়ে থাকে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় যে ব্যয় হচ্ছে, তার একটা অংশ বহন করছে কোকা–কোলা। অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি এই দাবি অস্বীকার করে আসছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও ওই দুই কোম্পানি আমেরিকার মালিকানাধীন হওয়ায় পাকিস্তান থেকে মিসরের মতো মুসলিম দেশগুলোতে বয়কটের মুখে পড়েছে তাদের ব্যবসা। মিসরে চলতি বছর কোকের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে স্থানীয় ব্র্যান্ড ভিসেভেন মধ্যপ্রাচ্য এবং আরও কিছু অঞ্চলে গত বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি ব্যবসা করেছে।

গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে অর্থায়ন করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ের ওপর বিজ্ঞাপন প্রচার করে বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে কোক। এর প্রভাব পড়ে বাজারেও। স্থানীয় মোজো কোম্পানির পানীয় বিক্রি বেড়েছে এই সুযোগে। এক পর্যায়ে বিজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পেপসির ব্যবসাতেও ধস নেমেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

পাকিস্তানের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সানবল হাসান গত এপ্রিলে করাচিতে তার বিয়ের অনুষ্ঠানের খাবারের মেন্যু থেকে কোক এবং পেপসি বাতিল করে দেন। তিনি বলেন, তিনি অনুভব করতে চান না যে, তার অর্থ ইসরায়েলের কট্টর মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর খাতে পৌঁছেছে।

হাসান বলেন, ‘বয়কটের মাধ্যমে, কেউ সেই তহবিলে অবদান না রেখে ভূমিকা পালন করতে পারে।’ তিনি জানান, তার বিয়ের অতিথিদের কোক–পেপসির বদলে পাকিস্তানি ব্র্যান্ড কোলা নেক্সট পরিবেশন করেছিলেন।

অবশ্য এমন ঘটনা একটা নয়। মুসলিম দেশগুলোর অনেকে অংশ নিয়েছেন কোক–পেপসি বয়কটের আন্দোলনে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সবমিলিয়ে কোক–পেপসি কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তার হিসাব করা কঠিন। এখনও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে বেশ ভালো ব্যবসা রয়েছে এই দুই প্রতিষ্ঠানের। পশ্চিমা পানীয় ব্র্যান্ডগুলোর ব্যবসা বছরের প্রথমার্ধে ৭ শতাংশ কমেছে।

পাকিস্তানের  শীর্ষস্থানীয় ডেলিভারি অ্যাপ ক্রেভ মার্টের প্রতিষ্ঠাতা কাসিম শ্রফ রয়টার্সকে বলেছেন, কোলা নেক্সট এবং পাকোলার মতো স্থানীয় কোমল পানীয়র বিক্রি ১২ শতাংশের মতো বেড়েছে। অথচ কোক–পেপসির বয়কটের আগে এমনটা ছিল না।

ভোক্তাদের পণ্য বয়কটের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, এই প্রতিবাদ এসেছে ১৮ শতকের ব্রিটেনে দাসপ্রথা বিরোধী প্রতিবাদের সময় থেকে। ২০ শতকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যও ব্যবহার করা হয়েছিল বয়কটের আন্দোলন। এবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই বয়কটের আন্দোলন।

কোকা-কোলা এবং পেপসিকো কেনা বন্ধ করেছেন এমন অনেক ক্রেতা এর কারণ হিসেবে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতি কয়েক দশক ধরে আমেরিকা যে সমর্থন দিয়ে আসছে তার প্রতিবাদে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা।

পেপসিকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) র‌্যামন লাগুয়ার্তা বলেছেন, ‘কিছু ভোক্তা রাজনৈতিক ধারণার কারণে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বিকল্প সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। লেবানন, পাকিস্তান এবং মিসরের মতো দেশে এর প্রভাব পড়েছে। সময়ের সাথে সাথে আমরা এ ব্যাপারটা ঠিক করে ফেলব।’

প্রতিবেদন বলছে, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল থেকে ২০২৩ সালে পেপসিকোর মোট আয় ৬ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা অঞ্চল থেকে আয় ছিল ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পরই কোক–পেপসি বয়কটের ডাক ওঠে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে।

কোকা-কোলা এইচবিসি–এর তথ্য অনুসারে, ২৮ জুন শেষ হওয়া ছয় মাসের হিসাবে মিসরে কোকের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অথচ গত বছরের এই সময়ের হিসাবে বিক্রি বেড়েছিল।

পেপসিকো বলেছে, আমাদের ব্র্যান্ডগুলোর কোনোটিই সংঘাতে সরকার বা সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত নয়। আর কোকা-কোলার ভ্যাষ্য হলো, তারা ইসরায়েল বা কোনো দেশে সামরিক অভিযানে অর্থায়ন করে না।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ