ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহ শহরে হামলার পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছে ইসরায়েল। এমনকি হামাসের সঙ্গে চুক্তি হোক বা না হোক, ইসরায়েল রাফাহতে হামলা চালাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
এমন অবস্থায় রাফাহতে হামলার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। একইসঙ্গে রাফাহতে ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে দেওয়া কঠোর সতর্কবার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার আরও বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এবং বাস্তুচ্যুতি রোধে পদক্ষেপ নিতে ‘ইসরায়েলের ওপর প্রভাব’ রয়েছে এমন দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গুতেরেস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘রাফাহতে সামরিক হামলা হলে তা পরিস্থিতি অসহনীয়ভাবে উত্তপ্ত করবে, আরও হাজার হাজার বেসামরিক লোক প্রাণ হারাবে এবং হাজার হাজার মানুষকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করবে।’
পরিস্থিতির গুরুত্বকে তুলে ধরে জাতিসংঘের প্রধান জোর দিয়ে বলেন, রাফাহতে সামরিক হামলা শুধুমাত্র ‘গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে’ তা নয়, বরং পুরো অঞ্চল জুড়ে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
জাতিসংঘের এই প্রধান গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর গাজায় ক্রমবর্ধমান মানবিক পরিস্থিতির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতি, সমস্ত বন্দিদের অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি এবং মানবিক সহায়তায় ব্যাপক বৃদ্ধির’ জন্য তিনি ধারাবাহিকভাবে আহ্বান জানালেও তা শোনা হয়নি।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘গাজার জনগণের স্বার্থে, ইসরায়েলি বন্দি এবং তাদের পরিবারের স্বার্থে এবং এই অঞ্চল ও বিস্তৃত বিশ্বের স্বার্থে আমি ইসরায়েলি সরকার এবং হামাস নেতৃত্বকে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য জোরালোভাবে উৎসাহিত করছি।’
গুতেরেস গাজা থেকে পাওয়া উদ্বেগজনক নানা প্রতিবেদন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মূলত ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক অভিযানের পর গাজায় গণকবর আবিষ্কার হয়েছে এবং ভূখণ্ডটির হাসপাতালগুলোকে এখন কবরস্থানের সাথে তুলনা করা হচ্ছে।
গুতেরেস বলেছেন, ‘আল শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্স এবং নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সসহ গাজার বেশ কয়েকটি স্থানে গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার খবরে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
গণকবরের বিষয়ে স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে গুতেরেস বলেন, ‘ফরেনসিক দক্ষতাসহ স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের এই গণকবরগুলোর স্থানগুলোতে অবিলম্বে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া অপরিহার্য, যাতে সুনির্দিষ্ট কারণ উদঘাটন করা যায় যে ঠিক কোন অবস্থায় শত শত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং তাদের কবর দেওয়া হয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেছেন, শিশু এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উত্তর গাজায় ক্ষুধা ও রোগের কারণে মারা যাচ্ছে এবং সবাইকে ‘সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য, মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ এড়াতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে’ হবে।
ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডি প্রতিরোধে সব ধরনের চাপ প্রয়োগের গুরুত্ব উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, গাজায় সাহায্যের সবচেয়ে বড় বাধা মানবিক কর্মীদের নিরাপত্তার অভাব। তিনি বলেন, মানবিক সহায়তার কনভয়, সুযোগ-সুবিধা, কর্মী এবং সুবিধাভোগীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।
গুতেরেস আকাশপথে এবং সমুদ্রপথের মাধ্যমে সাহায্য দেওয়ার বিষয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এই পদ্ধতিগুলো স্থলপথের মাধ্যমে সহায়তা বিতরণের বিকল্প হতে পারে না। তিনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে নিরাপদ, দ্রুত এবং নিরবচ্ছিন্ন সাহায্য বিতরণের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর বিষয়ে গুতেরেস উল্লেখ করেছেন, এই সংস্থাটি গাজা, পূর্ব জেরুজালেম, জর্ডান, সিরিয়া এবং লেবাননসহ অধিকৃত পশ্চিম তীরে লাখ লাখ মানুষকে সহায়তা করার জন্য ‘অপরিবর্তনীয় এবং অপরিহার্য কাজ’ করছে।
এনএ/