ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিশ্চিতে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গতকাল সোমবার বৈঠকে বসেছিলেন আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সৌদি আরবে চলমান ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠকে বসেন তাঁরা। বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
এই বৈঠকের অন্যতম উদ্যোক্তা নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসপেন বার্থ আইদে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান এগিয়ে নিতে চাই, তবে তা নির্দিষ্ট পক্ষের ওপর ভরসা রেখে হবে না। এই পর্যায়ে এসে, ইসরায়েল বিষয়টি নিয়ে কোনো ছাড় দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি না এবং যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নেতৃত্বভার গ্রহণ করবে।’
এ সময় আসপেন বার্থ আইদে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিশ্চিতে আরব বিশ্ব ও ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতাদের যৌথ উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘তাই আমি মনে করি, এ বিষয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় আশার আলো হতে পারে আরব-ইউরোপীয় নেতৃত্ব।’
গাজায় চলমান সংকটের শুরু গত বছরের ৭ অক্টোবর। সেদিন ভোরে হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে প্রায় ১ হাজার ১৩৯ জনকে হত্যা করে এবং জিম্মি করে আনে আরও ২৪০ জনেরও বেশি ইসরায়েলিকে। জবাবে সেদিনই গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সেই হামলা মাঝে এক দফায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির কারণে স্থগিত ছিল। এ ছাড়া, প্রায় সাত মাস ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ মানুষ হতাহত হয়েছে। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৪ হাজার ৫০০ জন নিহত এবং প্রায় ৭৮ হাজার আহত হয়েছে। এ ছাড়া অঞ্চলটিতে খাদ্য, পানি ও ওষুধসহ মৌলিক দ্রব্যের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল উল্লেখ করেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে বাস্তব ও অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপগুলো একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি অপরিহার্য উপাদান হওয়া উচিত। এ ছাড়া, সম্মেলনে অংশ নেওয়া আরও অনেক নেতাই একই অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তবে ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোরতর বিরোধী।
এর আগে গতকাল সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল সাংবাদিকদের জানান, তিনি আরব নেতাদের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য তাদের প্রস্তাব উত্থাপন করতে উৎসাহিত করবেন এবং তিনি চান ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো সেই প্রস্তাবগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে উপস্থাপনের জন্য আরব নেতাদের ব্রাসেলসে আমন্ত্রণ জানাক।
জোসেপ বোরেল বলেন, ‘আমার একমাত্র আশা, আমার দৃঢ় ইচ্ছা এবং আমি বিশ্বাস করি যে, আরবরা যদি একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে, তবে ইউরোপীয়দের মধ্য থাকা বিভক্তিগুলো কাটিয়ে উঠে তা বিবেচনা করতে হবে। কারণ এটি কোনো গোপন বিষয় নয় যে, ইউরোপীয়রা দৃঢ়ভাবে বিভক্ত।’ এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন যে স্পেন, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, স্লোভেনিয়া, মাল্টাসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।
এনএ/