ফিলিস্তিনপন্থী এবং ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করে দেশটির ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে নজিরবিহীন বিক্ষোভ, গড়ে উঠেছে ফিলিস্তিনপন্থী প্রতিবাদশিবির।
নজিরবিহীন এই বিক্ষোভ সামাল দিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চাপে পড়েছে প্রশাসন। খবর দ্যা গার্ডিয়ান এবং রয়টার্স।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দাবি, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ যেন ইসরায়েলকে সরবরাহ করা অস্ত্রের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ না করে এবং তাদের কাছ থেকে তহবিল না নেয়।
তবে বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ পালিত হলেও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে গত এক সপ্তাহের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গ্রেপ্তার হয়েছে শত শত শিক্ষার্থী। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের সাথে মারাত্নক সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের, নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা।
দ্যা গার্ডিয়ান জানায়, শুক্রবার রাতেই অন্তত ১০০ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাদের বেশিরভাগই বোস্টনের এমারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের। এছাড়া ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির ২৪ জনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত ৬২-১৪ ভোটে পাস হয়েছে। গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক পুলিশকে ক্যাম্পাসে তলব করায় এবং শিক্ষার্থীদের তাঁবু ভেঙে ফেলার জন্য তাদের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোচে শফিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। শফিকের ওই আদেশের পর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
তবে শফিকের এমন সিদ্ধান্তে ইউনিভার্সিটির সিনেট তিরস্কার করেছে তাকে। শুক্রবার দুই ঘণ্টার বৈঠকের পর প্রতিষ্ঠানটির সিনেট একটি রেজুলেশন অনুমোদন করেছে। এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট শফিক একাডেমিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন, পুলিশকে ডেকে এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বন্ধ করে ছাত্র ও অনুষদের সদস্যদের গোপনীয়তা এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকারকে অবজ্ঞা করেছেন।
এছাড়া সিএনএনের এক ভিডিওতে দেখা গেছে, আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে মাটিতে ফেলে জোরজবরদস্তি গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ সময় ওই শিক্ষার্থীকে সাহায্য করতে গিয়ে পুলিশের লাঞ্চনার শিকার হন ক্যারোলাইন ফলিন নামের নারী অধ্যাপক।
মার্কিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার আটকের পরও থামছে না বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চোখ, ত্বকে জ্বালা ধরানো রাসায়নিক পদার্থ ও টেইজার ব্যবহার করেছে পুলিশ। কিন্তু প্রতিবাদের মাধ্যমে গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে আগের চেয়ে আরও বেশি সহানুভূতিশীল তরুণ মার্কিন প্রজন্ম। নতুন ও পুরোনো প্রজন্মের মধ্যে মতামতের এ ফারাক যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের জন্যও মাথাব্যথার কারণ। কারণ এতে দীর্ঘ মেয়াদে বদলে যেতে পারে ওয়াশিংটনের ইসরায়েলনীতি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন ইতিহাসে বৃহৎ ছাত্র বিক্ষোভ বা এর জেরে জনমতে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে। দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে ক্যাম্পাসের এ বিক্ষোভ। কমবেশি এমন একটা ধারণা আছে, এ বিক্ষোভই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি সার্বিকভাবে মার্কিনিদের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণ ও গাজায় হামলা ও যুদ্ধ নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব বেড়েছে। মার্কিন নাগরিকদের বড় অংশ গাজা উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করেন।
হাআমা/