শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

গাজা: বেঁচে থাকাই যেখানে অভিশাপ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

মুহূর্তের মধ্যে গাজায় অসংখ্য শিশু পরিবারের সবাইকে হারাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়। নিজেরাও হচ্ছে পঙ্গু। এমনও আছে অনেকের দু’হাত বা দুই পা কেটে ফেলতে হয়েছে। একদিকে পরিবার হারানো, অন্যদিকে নিজের শরীরের অঙ্গ হারানো- এ যেন তাদের কাছে বেঁচে থাকা মানে অভিশাপ। এতিমরা তো বাবা বা মাকে, বা বাবা-মা হারা সন্তান। কিন্তু গাজার এতিমরা পরিবারের সবাইকে হারাচ্ছে। তাদের বেদনা, কষ্টকথা শোনার আপনজন নেই। এমন অসংখ্য শিশুর একজন আহমেদ শাবাত (৩)। তাকে উদ্ধার করে গাজার উত্তরাঞ্চলে ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে নেয়া হয়।

   
ব্যথায় আর্তনাদ করছিল সে। কিন্তু এমন বেদনার সময় তার কান্না, কষ্ট শোনার আপনজন নেই। ছোট এক ভাই ছাড়া মা-বাবা, ভাইবোন সবাই নিহত হয়েছে ইসরাইলের বোমা হামলায়। মধ্য নভেম্বরে বেইত হানুনে তাদের বাড়িতে বোমা হামলা হয়। এতে মা, বাবা ও বড়ভাই মারা যায়। অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় শাবাত। পরে জানা যায় তার দুই বছর বয়সী ছোটভাই ওমর বেঁচে আছে। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় তাদেরকে একত্রিত করে।  
শাবাতের এক আঙ্কেল ইব্রাহিম আবু আমশা বলেন, বোমা হামলার পর আমরা জানতে পারি ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে একটি শিশু আছে। তার সঙ্গে কেউ নেই। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেখানে যাই। এ সময় শাবাতের সঙ্গে একজন অচেনা ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বলেছেন, বোমা হামলায় শাবাত উড়ে গিয়েছিল। তাকে বাড়ি থেকে ২০ মিটার দূরে আহত অবস্থায় পাওয়া গেছে। শাবাত ও ওমর এখন এতিম, গৃহহীন। তাই তাদেরকে দেখাশোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইব্রাহিম। তিনি তাদেরকে নিয়ে যান শেখ রাদওয়ান সিটিতে। কিন্তু এক বিস্ফোরণে শাবাত আহত হওয়ার পর তারা সেখান থেকে চলে যায়। এরপর নুসেইরাত ক্যাম্পে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে যায়। কিন্তু সেখানেও হামলা হয়। এতে বিপর্যয় নেমে আসে শাবাতের জীবনে। সেখানে অবস্থান করা একজন বলেছেন, আমি দৌড়ে স্কুলের দরজা দিয়ে বাইরে আসি। আমার সামনে শাবাতকে দেখতে পাই মাটিতে পড়ে আছে। তার দুটি পা-ই উড়ে গেছে। সে আমার দিকে দুই হাত দিয়ে মাটি আঁকড়ে ধরে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে। সাহায্য চাইছে। এই হামলায় শাবাতের নিকট-পরিবারের একজন সদস্য মারা যান। 

শাবাতের মতোই যুদ্ধে এতিম আরেক শিশু মুনা আলওয়ান। ২ বছর বয়সী এই শিশুকে যখন ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালে নেয়া হয়, তখন সে অঝোরে মায়ের জন্য কাঁদছিল। কিন্তু তার মা মারা গেছেন। মুনাকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উত্তর গাজার জাবাল আল রইস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মুনার পিতামাতা, দাদা নিহত হয়েছেন। তার চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চোয়াল ফ্রাকচার হয়েছে। তাকে স্থানান্তর করা হয় অন্য একটি হাসপাতালে। সেখানে সে তার ফুপু হেনার সন্ধান পায়। হেনা বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম মুনা নাসের হাসপাতালে আছে। আমরা সেখানে গিয়ে তাকে চিনতে পারি। তিনি আরও বলেন, তার ভাতিজি মারাত্মক দুর্ভোগে আছে। সে শুধু আর্তনাদ করছে। তার চোখেমুখে ভীতি। 

খান ইউনুসে নাসের হাসপাতালের এককোণে ধাতব একটি বেডে শুয়ে আছে ১১ বছর বয়সী দুনিয়া আবু মেহসেন। তার ডানপায়ে ব্যান্ডেজ। তার চোখেমুখে হতাশা। কোনো হাসি নেই। খান ইউনুসে আল আমাল এলাকায় বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিল সে। ইসরাইলের বোমা হামলায় বেঁচে আছে শুধু সে, ভাই ইউসুফ এবং ছোট এক বোন। মা বাবা, ভাই ও এক বোন নিহত হয়েছে। দুনিয়া তার ডান পা হারিয়েছে। সে বলেছে, বাবাকে যখন দেখি, আমি ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিলাম। তার পুরো শরীর ছিল রক্তে ভেজা। আমাদেরকে ঘিরে ছিল মানুষ। আমার এক বোন শুধু আর্তনাদ করছিল। কিভাবে আমার পা হারিয়েছি, মনে করতে পারছি না।

এমএইচ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ