ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গণে চলমান ‘ইন্ডিয়া বনাম ভারত’ বিতর্ক নিয়ে এবার মুখ খুলল জাতিসংঘ। বিশ্বের প্রধান এই আন্তরাষ্ট্রীয় সংস্থার মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের উপমুখপাত্র ফারহান হক জানিয়েছেন, ভারত যদি নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করে, সেক্ষেত্রে তা বিবেচনা করবে জাতিসংঘ।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ভারত যদি তার ‘ইন্ডিয়া’ নাম পরিবর্তন করে নিজেদের নাম ‘ভারত’ হিসেবে জাতিসংঘে নিবন্ধন করতে চায়, সেক্ষেত্রে কোনো বাধা রয়েছে কিনা।
জবাবে ফারহান হক তুরস্কের উদাহারণ টেনে বলেন, ‘দেখুন, এ ব্যাপারটি নির্ভর করছে রাষ্ট্রের আবেদনের ওপর। সম্প্রতি তুরস্ক তার নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছিল। আমরা অনুমোদন দিয়েছি। অন্য কোনো সদস্যরাষ্ট্র যদি এমন আবেদন করে, সেক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হবে না।’
তুরস্কের ইংরেজি নাম ছিল ‘তুর্কি’ বা ‘টার্কি’। কিন্তু দেশটির সরকার ২০২১ সালে দেশটির নাম ‘তুর্কিয়ে’ করার জন্য আবেদন জানিয়েছিল জাতিসংঘে। সেই আবেদন গ্রহণ ও যাচাই শেষে গত বছর ৩ জুন তুরস্কের নতুন নাম ‘তুর্কিয়ে’কে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ।
প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে জি২০ সম্মেলনে বিদেশি অতিথিদের রাষ্ট্রপতি ভবনে নৈশভোজের নিমন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে। নিমন্ত্রণপত্রে ভারতের রাষ্ট্রপতির দ্রৌপদী মুর্মুর পরিচয় হিসেবে বলা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’।
‘ভারত’নামটি ভারতে প্রচলিত থাকলেও আন্তর্জাতিক ও দাপ্তরিকভাবে এই দেশটির নাম ‘ইন্ডিয়া’। তাই যে কেনো সরকারি নথিপত্রেও ব্যবহার করা হয় ‘ইন্ডিয়া’ নামটিই।
তাই জি২০ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক নিমন্ত্রণপত্রে ‘ভারত’ নামের ব্যবহার স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনেও এই ইস্যুতে গত কয়েক দিন ধরে চলছে তুমুল আলোচনা।
বিজেপির নেতারা বলছেন, ‘ইন্ডিয়া’ নামটি ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অপরদিকে বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ— কিছুদিন আগে গঠিত তাদের নির্বাচনী জোট ‘ইনডিয়া’কে খাটো করতেই দেশের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।
মঙ্গলবার এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের একটি এক্স (সাবেক টুইটার)বার্তা। নিজের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা সেই বার্তায় ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ান সম্মেলন উপলক্ষ্যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচির একটি ফটো ইমেজ পোস্ট করেছেন সম্বিত, সেখানে নরেন্দ্র মোদিকে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তারপর থেকেই ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গণে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের নাম পরিবর্তন করতে চায় বিজেপি সরকার।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও কোনো ব্যাখ্যা বা প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
এদিকে পাকিস্তানে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে যে যদি ভারত জাতিসংঘে আবেদনের মাধ্যমে ইন্ডিয়া নামটি পরিত্যাগ করে, সেক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ সিন্ধের নাম পরির্তন করে ‘ইন্ডিয়া’ রাখা হবে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
টিএ/