|| উবায়দুর রহমান খান নদভী ||
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ইসলামি ব্যক্তিবর্গের নীরব অবদান খুব চিন্তা করে উপলব্ধি করতে হয় না। সাদা চোখেই দেখা যাবে, সমাজের সকল স্তরের মানুষ ধর্মীয় সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি যথাসম্ভব শ্রদ্ধাশীল। মানুষকে সততা ও মানবিকতার এ উন্নত চেতনা যারা শিক্ষা দেন, সেই ইমাম, আলেম ও মাশায়েখগণই আজকের বাংলাদেশে অতীত যুগের ইসলাম প্রচারক আওলিয়া দরবেশগণের প্রকৃত উত্তরসূরী।
দেশের নানা অঙ্গনে মানুষের মাঝে মানবীয় সদগুণ ও উত্তম আচরণ প্রসারের চিন্তায় ব্যাপ্ত আলেমদের, পীর মাশায়েখ ও ইসলামি চিন্তাবিদদের জীবন নিয়ে আলোচনার সূচিতে আকস্মিকভাবেই এসে গেলেন আল্লামা ইসহাক ফরিদী।
আজ আমরা অনেকেই তাঁকে নিয়ে আলোচনা করতে বসেছি, যিনি আলেম সমাজের অবদানের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতনভাবে আলোচনা করতেন। পঞ্চাশের ঘরেও পা রাখেননি তিনি। সবুজ তারুণ্য পেরিয়ে উদ্দীপ্ত যৌবন চলছিল। চোখে মুখে ইসলামি শিক্ষা ও আদর্শ চর্চা বিকাশ আর প্রতিষ্ঠার ঘোর।
তিনি নিরেট একজন মাদরাসা শিক্ষিত আলেম। অথচ কত বর্ণিল তাঁর জীবনাদ্ধ। পার্থিব সব সুযোগ সুবিধা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সামাজিক শক্ত অবস্থান নিয়েও যে পরিমাণ কাজ আমাদের দেশের শিক্ষিত ব্যক্তিরা করতে পারেন না, অনেকাংশেই সুবিধা বঞ্চিত এ আলেম তা করে দেখিয়ে গেছেন তাঁর খুব সীমিত জীবনে।
ভেবেছিলেন চট্টগ্রামে যাবেন। সাথে ছাত্র ও সহকর্মী। কুমিল্লা পেরুবার আগেই গভীর রাতে কার্গো ভ্যানের সাথে তাদের মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ। ড্রাইভার তৎক্ষণাৎ আর মাওলানা ফরিদী হাসপাতালে নেয়ার পথে ইন্তেকাল করেন। বাকিরা অল্প-বিস্তর আঘাত পেয়েও প্রাণে বেঁচে যান। গত ৫ই জুন ২০০৫ রাতে আকস্মিকভাবেই চলে গেলেন রাজধানীর প্রতিশ্রুতিশীল ইসলামমি ব্যক্তিত্ব, বহুমুখী প্রতিভাধর আলিম মাওলানা ইসহাক ফরিদী রাহিমাহুল্লাহ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
ঢাকায় সালমান রুশদীর 'স্যাটানিক ভার্সেস' বিরোধী মিটিং-মিছিলে বায়তুল মুকাররম দক্ষিণ গেট থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত তাঁর সাথে হেঁটে যেতে যেতে তিনি তাঁর ছোট একটা স্বপ্ন আমায় বলেছিলেন। মাওলানা ফরিদীর সাথে আমার আনুষ্ঠানিক সাক্ষাত ও পরিচয় বোধ হয় এদিনই। পরবর্তীতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নানা মিটিংয়ে বা বিভিন্ন ইসলামি প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচীতে তাঁর সাথে বেশ ক'বারই দেখা হয়। একবার ব্যাংক, বীমা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর তাঁর রচিত কিছু বইপত্রও আমাকে পাঠান তিনি।
ফরিদী রাহিমাহুল্লাহ সেদিন বলেছিলেন, ঢাকায় একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও আইটি গবেষণা কেন্দ্র চালু করে মাদরাসা শিক্ষিতদের দক্ষ ও যোগ্যরূপে গড়ে তোলার চিন্তা করতে হবে। যেন একজন আলিম আধুনিক বিশ্বের উপযোগী হয়ে ইসলামি আদর্শের প্রচারে আত্মনিয়োগ করতে পারেন। আজকের এ অবসরে মাওলানা ফরিদীর শোকসন্তপ্ত পরিবার, তাঁর জন্য শোকাহত বাংলাদেশের সর্বস্তরের আলেম সমাজ এবং বিশেষ করে তাঁর হাতে গড়া শিষ্য শ্রেণীর প্রতি সমবেদনা প্রকাশের পাশাপাশি তাঁর একটি কেবল নয়, সকল স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য চলমান এ কাফেলার অন্য সদস্যদের প্রতি আহ্বান রাখছি। আল্লাহ মাওলানা ইসহাক ফরিদীকে জান্নাতে উচ্চাসন দান করুন। আমীন।
-লেখাটি আল্লামা ইসহাক ফরিদী রহ. স্মারক গ্রন্থ থেকে নেওয়া
কেএল/