সমাজে এমন কতিপয় মহানুভব মানুষ থাকেন, যারা নিজেদের শ্রম ও ঘাম বিনিয়োগ করেন কেবল অপর মানুষের জন্য। নিজেদের বিলিয়ে দেন মানুষ এবং সৃষ্টির সেবায়। তাঁরা নিজেদের উৎসর্গ করেন মানুষের কল্যাণে। এমনই এক আপাদমস্তক জনদরদী হচ্ছেন নওমুসলিম মুহাম্মদ রাজ।
সুবিধা বঞ্চিত অসহায় মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহ সামগ্রিক অধিকার নিশ্চিত করণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন তিনি। তাঁর নিঃস্বার্থ সেবামূলক কাজের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে। সেই মানবিক রাজের মানবতার কিছু গল্প এখানে তুলে ধরা হলো।
গল্প —১
সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাকমতো। ঠিক প্রবাহমান নদীর মতো। কিন্তু হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে যায় এক অদৃশ্য ঝড়ে। রোড এক্সিডেন্ট করে মারাত্মকভাবে আহত হন হতদরিদ্র লোকটি। পা এবং মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে যায়। শুরু হয় চিকিৎসা অধ্যায়। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত শ্রেণীর এ লোকটির সঞ্চয় যা ছিল, সব শেষ হয়ে যায়। গৃহপালিত গরুটিও বিক্রি করে দেন। তবু চিকিৎসা সম্পন্ন হয়নি। সব হারিয়ে নিঃস্ব অসহায় লোকটি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন মুঠোফোনে। এ খবর পৌঁছে মানবিক রাজের কাছে। তাৎক্ষণিক সহায়তায় এগিয়ে আসে রাজের সেবা টিম। নিশ্চিত করা হয় তার যথোপযুক্ত চিকিৎসা। বর্তমানে লোকটি পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাজ তাঁর টিম নিয়ে অসহায় লোকটির সুস্থ জীবনে ফেরা পর্যন্ত পাশেই আছে বলে জানান তিনি।
গল্প —২
১১ বছর বয়সী ছোট্ট আমেনা। থাকার কথা ছিল ঘরে। পড়ার টেবিলে বসবে, নিয়মিত স্কুলে যাবে— এমনটাই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু মা বাবার সমস্ত আশা আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে সে শুয়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কারণ, জন্মসূত্রেই তার হার্টে ছিদ্র ধরা পড়ে। গার্মেন্ট শ্রমিক পিতা অর্থের অভাবে আদুরে কন্যার চিকিৎসা করাতে পারেননি এত বছর।
এরইমধ্যে আঘাত হানে আরেক তুফান। এই কদিন আগে ব্রেন স্ট্রোক করে বসে হঠাৎ করে। নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে। মাথায় অপারেশন করা হয়েছে। মাথার একটি হাড় সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অবস্থা খুবই শোচনীয়। কিছুটা সেরে ওঠার পর হার্টে অপারেশন করা হবে। এরপর আবার মাথায়। বাঁচামরার প্রশ্ন।
এমন ছোট্ট মেয়ে যাদের জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, জানি না— তাদের একেকটি মুহূর্ত কীভাবে পার হয়! কত বিপদ, কত ঝড় ঝাপটার মধ্য দিয়ে পার করতে হচ্ছে দিনগুলো— আল্লাহ ছাড়া কে জানে!
জটিল ও সুকঠিন এই চিকিৎসার পুরো ব্যয় বহন করে রাজের সেবা টিম। আল্লাহর এক প্রিয় বান্দার সহায়তায় লক্ষাধিক টাকার সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়ায় মেয়েটির। সুস্থ জীবনে ফেরা পর্যন্ত পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে রাজ।
গল্প —৩
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর মাওলানা আল আমিন। তাঁর ছোট্ট দুধের সন্তানটির হার্টে ছিদ্র!!
ঢাকা পিজি হাসপাতালের ডাক্তার তারিকুল ইসলাম স্যারকে দেখালে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, বাচ্চার হার্টের ফোটার সাইড দিয়ে ইনফেকশন হয়ে গেছে। ফুসফুস ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত অপারেশন না করালে বাচ্চার বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। অপারেশন করাতে ২ লক্ষ টাকা খরচ হবে। এদিকে ছোট্ট একটা মাদ্রাসায় খেদমত করা পিতার পক্ষে এ বিশাল অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করা অসম্ভব।
মুহাম্মদ রাজ এ শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শিশুটির অপারেশন করা হবে বলে জানা যায়।
জানা যায়, নওমুসলিম মুহাম্মদ রাজের এমন মানবতার গল্প একটি দুটি নয়, শত সহস্র। ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের সাথে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমানে তিনি নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলতে যাচ্ছেন সার্বজনীন অরাজনৈতিক একটি সেবা প্রতিষ্ঠান। এটির উদ্দেশ্য বৃহৎ পরিসরে সার্বজনীন সেবা প্রদান। সকল শ্রেণীপেশার এবং সকল ধর্মের অসহায় মানুষকে মানবিক সেবা দেয়াই এর লক্ষ্য। অচিরেই প্রতিষ্ঠানটি আত্মপ্রকাশ করবে।
হাআমা/