জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির শপথ গ্রহণ এবং রাষ্ট্র ও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের প্রতি দেশের জাতীয় সংস্কৃতির সুরক্ষা ও উন্নয়নের স্বার্থে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।
আজ শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব, শপথ বাক্য পাঠ, মুখ্য আলোচনা, দেশের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা, দেশবাসীর প্রতি আহ্বান এবং রাষ্ট্রের প্রতি ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেন সংগঠনের সভাপতি জাগ্রত কবি আল্লামা মুহিব খান।
তিনি বলেন, প্রায় দু'শ বছরের ব্রিটিশ শাসন থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অপশক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় নানা বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কবলে পড়ে আমাদের বিশ্বাস ও জাতীয় চেতনাবোধ-সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আজ বিকৃতি ও বিলুপ্তির পথে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে দেশ জাতি ও নতুন প্রজন্মের জন্যে একটি পরিশুদ্ধ সুস্থ এবং সুন্দর সংস্কৃতি বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সাংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব রশিদ আহমদ ফেরদৌস, সহ-সভাপতি জনাব এম কামরুজ্জামান, জনাব ড. কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার, সাধারণ সম্পাদক জনাব কাওসার আহমাদ সুহাইল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মাদ বদরুজ্জামান প্রমুখ।
সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ইবরাহীম কোব্বাদী, আহমাদ আবু জাফর ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক রায়হান কবিরের সঞ্চালনায় পরিচালিত এ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্পী আনিস আনছারী, দাবানল শিল্পীগোষ্ঠী পরিচালক সাইফুল্লাহ সাহাল, তামাদ্দুন শিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক মাঈনুদ্দীন ওয়াদুদ, মহিউদ্দিন হাসান খান (খান সাহেব), শিল্পী আবু ওবায়দা, মানযীল শিল্পেীগোষ্ঠীর পরিচালক মাসুম বিন মাহবুব, শিল্পী মাহমুদ হুজাইফা, শিল্পী শেখ এনাম, বিশিষ্ট ক্যালিগ্রাফার আফজাল হুসাইন, কবি খন্দকার হুসাইন আহমাদ, কবি ইখতিয়ার হোসাইন, কবি হাসান আল মাহমুদ, হাসিব আর রহমান, মুহিব ইমতিয়াজ, সাদ মাশফিক খান, জামাল মাসরুর, ওয়ালীউল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, যোগাযোগ সাব-এডিটর গুলবাহার ফাহিম, আব্দুল হান্নান-সহ আরো অনেকেই।
রাষ্ট্র, সরকার ও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের প্রতি জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র'র ৯ দফা দাবি
১. বাংলা নববর্ষ উদযাপনসহ দেশের সকল সর্বজনীন জাতীয় উৎসব-আয়োজনে দেশীয় সংস্কৃতিতে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, বিশেষ সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন ও যাবতীয় কুসংস্কার চর্চা বন্ধ করতে হবে এবং দেশীয় সংস্কৃতি সংগ্রহ, গবেষণা ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. নাগরিকের ধর্মীয় অনুভূতি, সামাজিক মূল্যবোধ এবং শান্তি সম্প্রীতি ও নৈতিকতাবান্ধব সকল ব্যক্তিগত অধিকার সুরক্ষায় কঠোর আইন ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নাটক চলচ্চিত্র ও মঞ্চের খল চরিত্রে ধর্মীয় অবয়ব ও পোশাকের অবমাননাকর ও উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৩. দেশের নাটক, চলচ্চিত্র, ওয়েব সিরিজ, ফ্যাশন, বিজ্ঞাপন, সাহিত্য, মঞ্চ ও প্রকাশ্য লোকালয়ে অশ্লীল অসামাজিক কুরুচিপূর্ণ কথা কাজ ভাষা অঙ্গভঙ্গি ও পোশাক প্রদর্শন বা প্রকাশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৪. জাতীয় চরিত্রবিধ্বংসী অশ্লীল অসামাজিক কুরুচিপূর্ণ ওয়েবসাইট, বিদেশি সিরিয়াল এবং ইউটিউব, ফেসবুক কনটেন্ট সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং এসব প্রতিরোধের জন্য কঠোর আইনী ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. দেশের সর্বত্র থেকে অশ্লীল অরুচিকর ভাস্কর্য, বিজ্ঞাপন ও চিত্রকলা অপসারণ করতে হবে। যৌনকর্মীদের সম্মানজনক বিকল্প পেশায় পূণর্বাসন করতে হবে এবং অবাধ যৌনতা ও ট্রান্সজেন্ডার ধারণার সমর্থন, প্রচার ও প্ররোচনাকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ও শাস্তিবিধান করতে হবে।
৬. অসাধু ব্যক্তি গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে ও বাণিজ্যিক স্বার্থে পণ্যরূপে নারীর অবমাননাকর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। গ্ল্যামার জগতে প্রতিভা অন্বেষণের আড়ালে অথবা সুন্দরী প্রতিযোগিতার মোড়কে নগ্নতা ও নির্লজ্জতার বিস্তার রোধ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক কনসার্টের নামে দেশের মাটিতে বিদেশী সংস্কৃতিকর্মী ও কলাকুশলীদের অশ্লীল আপত্তিকর পারফরম্যান্স নিষিদ্ধ করতে হবে।
৭. রাষ্ট্রীয় প্রচারণা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, গোয়েন্দা তৎপরতা ও কঠোরতর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র সকল প্রকার মাদকদ্রব্য আমদানী রফতানী উৎপাদন সংগ্রহ ও সেবন কঠোরভাবে রোধ করতে হবে এবং শিক্ষাঙ্গন হাসপাতাল অফিস-আদালত বিমানবন্দর স্টেশন টার্মিনাল যানবাহন মার্কেট শপিং মলসহ সকল পাবলিক প্লেসকে ময়লা আবর্জনা ও ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করতে হবে।
৮. শিক্ষাঙ্গনে ধর্ম, সমাজ ও আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সঙ্গে সুসামঞ্জস্যশীল ভারসাম্যপূর্ণ জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম ও পাঠ্যসূচী চালু করতে হবে এবং সততা সৌন্দর্য পরিচ্ছন্নতা ও রুচিবোধ-সম্পন্ন স্বপ্রণোদিত সভ্য নাগরিক শ্রেণী গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে কার্যকর মাধ্যম হিসেবে ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
৯. রাজনৈতিক বিবেচনা কিংবা বিশেষ মতাদর্শিক পক্ষপাতীত্ব ও বৈষম্যের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সুস্থ চিন্তা, সত্য চেতনা, সৃজনশীল নির্মাণ ও শৈল্পিক প্রকাশ ক্ষমতার অধিকারী প্রকৃত যোগ্য এবং জননন্দিত ব্যক্তিত্বদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং জাতীয় পদক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে তাদের বর্ণাঢ্য কর্ম ও অবদান সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
হাআমা/