|| হাসান আল মাহমুদ ||
দেশের কওমি মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের ৪৭তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার আজ প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হলো।
জানা যায়, আজ মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে এ পরীক্ষা শুরু হয়। এতে অংশ নেয় মাদরাসার বালক ও বালিকা শাখার ছয় স্তরের শিক্ষার্থীরা। এই পরীক্ষা চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পরীক্ষা চলবে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। তবে ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার শুধু ফযিলতের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে পরীক্ষা শেষ হবে বেলা সাড়ে ১১টায়।
প্রধান পরিচালক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বেফাক জানায়, এ বছরের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় সর্বমোট ৪৬টি জোনের আওতায় ২,০৫৮টি কেন্দ্রে ৩,২৫,৩২৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। তন্মধ্যে ছাত্র ১,৩৪,৭২৩ জন ও ছাত্রী ১,৯০,৬০১ জন। এছাড়া কেন্দ্রীয় পরীক্ষা সুষ্ঠু সম্পাদনের লক্ষ্যে সারা দেশে ৮,০৫৫ জন নেগরান ও ৫,০৫১ জন মুমতাহিন নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে হিফজুল কুরআন পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে জরুরী জ্ঞাতব্য প্রকাশ করেছে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাক। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবদুল জলিল ফারুকী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে জানা যায় নিম্ন বর্ণিত ২১ নির্দেশনা ।
১) মুমতাহিন-গ্রুপে একজন আমীর থাকবেন। তিনি পরীক্ষার্থীদের দস্তখত গ্রহণ করবেন, হিসাব-নিকাশ রক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যাপারে সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সব কাজ সম্পাদন করবেন।
২) পরীক্ষা গ্রহণের পূর্বে বেতাকা (প্রবেশপত্র) পরীক্ষার্থীর ছবি দেখে যাচাই করে নিতে হবে। তারপর বেতাকা ফেরত দিয়ে দিতে হবে।
৩) পরীক্ষা শেষে দস্তখতপত্রে পরীক্ষার্থীর দস্তখত নিতে হবে।
৪) কোন ধরনের ভুলকে ভুল ধরা হবে, তা আলোচনার মাধ্যমে স্থির করে নিতে হবে।
৫) পরীক্ষার্থী নিজে ই'আদা করলে ২ (দুই) নম্বর, পরীক্ষক বলে দিলে ৩ (তিন) নম্বর, লুকমা দেয়া হলে ৫ (পাঁচ) নম্বর, জলী ভুলের জন্য ৫ (পাঁচ) নম্বর, এবং খফী ভুলের জন্য ১-২ (এক-দুই) নম্বর কর্তন হবে।
৬) হিফযের প্রতি প্রশ্ন কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ শুনতে হবে।
৭) এক জন পরীক্ষার্থীর জন্য সর্বোচ্চ সময় দেয়া হবে ১০ (দশ) মিনিট।
৮) তাহফীযুল কুরআন পরীক্ষার বিষয় ও মানবণ্টন নিম্নরূপ:
ক) সর্বমোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। হিফয (ইয়াদ) ১০০; পাশ ৫০।
খ) তাজবীদ ৫০; পাশ ২০।
গ) মাসাইল ৫০; পাশ ২০।
৯) তিলাওয়াতের (ইয়াদের) তিনটি প্রশ্ন হবে এবং তিনটি প্রশ্নেরই উত্তর দিতে হবে। তাজবীদের ৩টি প্রশ্নের যে কোনো ২টির উত্তর দিতে হবে এবং মাসাইলের ৩টি প্রশ্নের যে কোনো ২টির উত্তর দিতে হবে।
১০) তাহফীফুল কুরআন পরীক্ষার ফলাফলের মান বিভাগ বিন্যাস হবে হিফয (ইয়াদ) বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে।
বিভাগ- তৃতীয় বিভাগ (মাকবুল) তিলাওয়াত (ইয়াদ) বিষয়ের ৫০সহ মোট ৯০ নম্বর, দ্বিতীয় বিভাগ (জায়্যিদ): তিলাওয়াত (ইয়াদ) বিষয়ের ৬০সহ মোট ১২০ নম্বর, ১ম বিভাগ (জায়্যিদ জিদ্দান): তিলাওয়াত (ইয়াদ) বিষয়ের ৭০সহ মোট ১৫০ নম্বর এবং মুমতায (স্টার মার্ক): তিলাওয়াত (ইয়াদ) বিষয়ের ৮০সহ মোট ১৭০ নম্বর।
১১) প্রতি মারকাযে নির্দিষ্ট সময়ে প্রশ্নপত্রগুলো পরীক্ষা-হলে তেপায়ার ওপরে একত্রে সাজিয়ে রাখতে হবে।
১২) পরীক্ষার্থীকে কোনো একটি প্রশ্নপত্র নিজ হাতে তুলে নিতে বলতে হবে। তাতে যা লেখা আছে, তা যদি সে নিজে পড়তে পারে তো ভালোই, অন্যথা পড়ে দিতে হবে।
১৩) সকল মুমতাহিনই আলাদা আলাদাভাবে নিজ নিজ ফাইলে রক্ষিত নম্বরপত্রে (মার্কশিটে) নম্বর দিবেন, কাউকে দেখাতে পারবেন না। এমনকি নম্বর সম্পর্কে কোনো আলোচনাও করতে পারবেন না।
১৪) প্রত্যেক মুমতাহিনের যার যার নম্বরপত্র নিজ দায়িত্বে দফতরে জমা দিতে হবে। নম্বরপত্রের নিচে স্পষ্ট দস্তখত করতে হবে।
১৫) যে মারকাযে পরীক্ষকের নিজের ছাত্র থাকবে, সেখানে তিনি মুমতাহিন হিসাবে থাকতে পারবেন না।
১৬) পরীক্ষার স্থানে পরীক্ষক ও পরীক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ উপস্থিত থাকতে পারবে না।
১৭) প্রতি তিন ঘণ্টা পরে ১৫ মিনিট বিরতি থাকবে।
১৮) অবশিষ্ট প্রশ্নপত্র ফেরত আনতে হবে এবং দফতরে জমা দিতে হবে।
১৯) প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার সময় প্যাকেট যাতে ছিঁড়ে না যায়, সে দিকে লক্ষ রাখবেন।
২০) গ্রুপের কোনো মুমতাহিন পরীক্ষার সময় অনুপস্থিত থাকলে পরীক্ষা গ্রহণযোগ্য হবে না।
২১) দস্তখতপত্রে পরীক্ষার্থী সঠিক রোলে দস্তখত করছে কি-না, তা লক্ষ রাখতে হবে।
বি. দ্র. মারকাযী মাদরাসার কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করা যাচ্ছে যে, হিফয পরীক্ষার সময় সহযোগিতার জন্য একজন উস্তাদকে দায়িত্ব প্রদান করবেন। তার দায়িত্ব হবে, পরীক্ষার্থীদের বেতাকা যাচাই করা, দস্তখত নেয়া ও পরীক্ষার্থীদের শৃংখলা বিধান করা।
হাআমা/