|| মুফতি আশিকুল ইসলাম ||
কওমী মাদরাসাগুলোর শিক্ষা বছর শেষপ্রান্তে। প্রায় প্রতিটি মাদরাসার সবক শেষ। আগত বোর্ড বা মাদরাসা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে ছাত্রগণ ব্যতিব্যস্ত। প্রস্তুতির মেহনত যেন যথাযথ ফলপ্রসু হয়, তাই কয়েকটি কথা তুলে ধরছি।
এক.
পরীক্ষার জন্য পড়া, তাকরার করা ও প্রশ্ন হল করা তাকওয়ার পরিপন্থী নয়, বরং তাকওয়া অর্জনে সহায়ক। তাই বিভ্রান্তিতে আক্রান্ত না হয়ে পূর্ণ সফলতার জন্য মেহনত করতে থাকা।
দুই.
সফলতা চাইলেই চলে আসবে না, বরং এজন্য প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতিতে ঘুচালো মেহনত।
তিন.
মেহনত হওয়া চাই কোন একজন উস্তাদের নেগরানীতে। নিজের মতো করে মেহনত করলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করা যায় না। তাই প্রয়োজন সুচিন্তিত মেহনতি কোন উস্তাদের নেগরানীতে মেহনত করা।
চার.
রুটিন অনুযায়ী পড়া-লেখা করা। যাতে পুরো খেয়ারের সময়টা সুন্দরভাবে পড়া যায় এবং প্রফুল্লতার সাথে পরীক্ষা দেয়া যায়। অনেকে খেয়ারের শুরুতে রাত-দিন একাকার করে পড়ে, কিন্তু কিছুদিন গেলে শরীর আর চলে না। অসুস্থ হয়ে পড়ে, সুন্দর করে পরীক্ষা দিতে পারে না। তাই কমপক্ষে ৬ঘন্টা ঘুম ঠিক রেখে রুটিন অনুযায়ী চলা।
২৪ ঘন্টা সময়কে এইভাবে ভাগ করা যেতে পারে। ৬ঘন্টা ঘুম। ৩ ঘন্টা নামায, কুরআন তিলাওয়াত ও নফল ইবাদত। ২ঘন্টা খাবার, সামান্য ইসতিরাহাত ইত্যাদি কাজের জন্য। মোট হলো ১১ ঘন্টা।
আরো ১৩ ঘন্টা সময়কে রুটিন মাপিক পড়লে ইনশাআল্লাহ সকল কিতাব পড়ে শেষ করা সম্ভব হবে। এবং শরীরে ততবেশী চাপ বা ক্লান্তি অনুভব হবে না।
পাঁচ.
মেহনতটা দোয়া ও সদকা সম্বলিত হওয়া চাই। মেহনতের সাথে যখন দোয়া ও সদকা সমন্বিত হয়, তখন আল্লাহর কাছে কাজটা বেশী পছন্দ হয়। বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামায তাকবিরে উলার সাথে আদায় করা, তাহাজ্জুদ ও মাগরিবের পূর্বে দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াতের এহতেমাম করা ।
ছয়.
প্রত্যেক কিতাব শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে পড়া। এখান থেকে একটু ঐখান থেকে একটু এভাবে না পড়া। বিশেষ করে তাইসীর থেকে শরহে বেকায়া পর্যন্ত সকল কিতাব সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করা। জালালাইন থেকে তাকমীল পর্যন্ত ধারাভাহিকভাবে পড়ে শেষ করার ইচ্ছা রাখা।
তবে বেফাকভুক্ত জামাতগুলোর জন্য বিশেষ নির্দেশনা হলো, তাইসীর ও নাহবেমীর জামাতের কিতাবগুলো একাধিকবার পড়ে শেষ করা। কোন মাদরাসায় যদি প্রস্তুতি পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে ছাত্রগণ নিজ উদ্যোগে দুই দুই সাথী করে বেফাকের প্রশ্নের আলোকে প্রশ্নোত্তর করা। বিশেষ বিশেষ কিছু প্রশ্নের উত্তর লিখে নেগরান উস্তাদকে দেখানো ও সংশোধন করিয়ে নেয়া।
শরহে বেকায়া, মেশকাত ও তাকমীলের ছাত্রগণ কিতাব হাশিয়াসহ মুতালাআ করার চেষ্টা করা। কারণ ইবারতের যে তাশরীহ বা ব্যাখ্যা চাওয়া হয়, তার জওয়াবের ক্ষেত্রে হাশিয়ায় অধিক উপযুক্ত।
সাত.
শুধু প্রশ্ন বা গাইড নির্ভর না হওয়া। কেননা গাইড যোগ্যতা অর্জনে বড় অন্তরায়। কিছু কিছু ইবারতের একাধিক ব্যাখ্যা থাকে, যা গাইডে পাওয়া দুষ্কর। আর ইবারত ও তরজমা এটা নিজের নাহু-সরফ ও লুগাতের যোগ্যতার ভিত্তিতে করতে হয়।
আট.
অধিক রাত পর্যন্ত না পড়া। বরং শুরু রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া ও শেষ রাতে যথাসম্ভব আগে উঠা। তাহাজ্জুদের এহতেমাম করা। যেহেতু শীতের মৌসুম, তাই খোলামেলা জায়গাকে আবদ্ধ করে নেয়া। অর্থাৎ যে সকল সাথী ভাইয়েরা উন্মুক্ত বারান্ধায় পড়াশুনা করেন, কাপড় পর্দা ইত্যাদি দিয়ে বাতাস বন্ধ করে নিবেন।
নয়.
ফজরের পর না ঘুমানো। ঘুমের বেশী জরুরত হলে, নাস্তার বিরতিতে হালকা ঘুমিয়ে নেয়া। আর অন্য কখনো ঘুমের চাপ বেশী অনুভব করলে পাশের সাথীকে বলে ১০ মিনিট ঘুমিয়ে নেয়া। সে যেন নেগরান উস্তাদকে বলতে পারে ও সময়মত উঠিয়ে দিতে পারে।
দশ.
একটু ভালো খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা। যেহেতু এই সময় মেহনতটা একটু বেশী হবে, তাই শরীরের চাহিদা ও পরিবারের আর্থিক যোগান অনুসারে একটু ভালো খাওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ।
এসকল কাজ করার ক্ষেত্রে মাদ্রাসার নেযামকে প্রাধান্য দিয়ে চলা। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাকওয়া অর্জনের সাথে সাথে ভালো ফলাফল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: মুহাদ্দিস, মারকাযুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া বাড্ডা ঢাকা।
কেএল/