১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি ও সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পর এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক উপলক্ষে মাগরিবের পর থেকে গণভবনে প্রবেশ করেন জোট নেতারা। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টি- জেপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারিসহ শরিক দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে অংশ নেন। এর আগে শরিকদের একটি ও বিরোধী দলের একটি আসন খালি রেখে ২৯৮ আসনে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ১৪ দলের অন্যান্য শরিক বা মহাজোট শরিকদের আসন বণ্টন করেনি ক্ষমতাসীন দল। গতকালের বৈঠকে জোট নেতাদের দাবি ও বক্তব্য শোনেন শেখ হাসিনা।
বৈঠক চলাকালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক নিয়ে ব্রিফিং করবেন। এরপরই সেখানে গণমাধ্যমের উপস্থিতি বেড়ে যায়।
বৈঠক চলাকালে ব্রিফিংয়ের জন্য ধানমণ্ডি অফিসে যান ওবায়দুল কাদের। পরে জানানো হয় রাতে কোনো ব্রিফিং হবে না। আজ দুপুর ১২টায় ওই বৈঠক নিয়ে ব্রিফিং করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। গত ১৫ই নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভোট হবে ৭ই জানুয়ারি। এবারের ভোটেও নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে ভোট করার কথা জানিয়ে ১৪ দলের ছয়টি দল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়। এদিন তফসিল ঘোষণার পর মাত্র দুটি আসন ছেড়ে ২৯৮ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই দুই আসন হলো জাসদের হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ ও জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানের নারায়ণগঞ্জ-৫। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট শরিকদের মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ ৯১, জাতীয় পার্টি- জেপি ২০, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) ৬, গণতন্ত্রী পার্টি ১২, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ ৬, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৩, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ৪৭টি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মহাজোটের শরিক দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ ১৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা গত তিনটি (নবম, দশম ও একাদশ) সংসদ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে ভোটে অংশ নেয়। বিকল্পধারা বাংলাদেশ গত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে। অন্যবারের মতো আগামী নির্বাচনেও তারা আওয়ামী লীগের কাছে আসন ছাড় চায়। আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি যার যার দলীয় প্রতীক নিয়েও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে দলগুলো।
চলতি বছরের ১৮ই জুলাই শেষবারের মতো ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠক হয়। এর আগে জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন গত বছরের ১৫ই মার্চ। সেই বৈঠকও হয়েছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার প্রায় তিন বছর পর।
উল্লেখ্য, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন নৌকার ওপর ভর করে সংসদ-সদস্য হওয়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতারা। এবার তাদের আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ঘোষণা করায় বেশ বিপাকে আছেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাঠে থাকবেন, নাকি কেন্দ্রের নির্দেশে সরে দাঁড়াবেন, নাকি আওয়ামী লীগেরই কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ভোটে লড়বেন- এমন শঙ্কার মধ্যে সময় পার করছেন তারা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই আসন সমঝোতার জন্য উন্মুখ ছিলেন ১৪ দলীয় জোট শরিকরা। জোট নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে আগেভাগেই বিষয়টি চূড়ান্ত করার তাগাদাও ছিল তাদের। কিন্তু শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এবার শুরু থেকেই কৌশলী ছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ তাদের মিত্রদের ভোট বর্জনের এই নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে সময় নিয়েছে।
এমএইচ