দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ছুটি হচ্ছে কওমী মাদরাসাগুলো। ছুটি ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ছোটাছুটি আমেজ কাজ করছে। তাই ছাত্ররা ছুটিতে কীভাবে দিনসূচি নির্ধারণ করবে সে বিষয়ে কথা বলেছেন নন্দিত লেখক, গবেষক ও মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন ।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, প্রকৃত শিক্ষার্থী ও তালিবে ইলম যারা তাদের অভিধানে ছুটি বলতে কিছু নেই। তাদের ঝুলিতে আছে ‘অবসর’ শব্দটি। প্রকৃত শিক্ষার্থী বলতে যারা আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবে আমি তাদের বুঝাচ্ছি। যারা আদতেই নিজের জীবনকে মূল্যায়ণ করে তারা অবসর বা বিরতিকাল পেলেই তারা সেই অবসরকে কাজে লাগায়। কারণ বিরতিকালটা শিক্ষা জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা ভবিষ্যৎ গঠনের একটা উন্মুক্ত পাঠশালা। তাই এই কালটাকে একজন চিন্তাশীল তালিবে ইলম ও শিক্ষার্থী কাজে লাগিয়ে ৪টি কর্মসূচী হাতে নিতে পারে।
১. শিক্ষার্থীরা বাড়িতে যাওয়ার পর তার চারপাশটা নিখুঁত পর্যবেক্ষণ করে দেখবে। ইসলাম সম্পর্কে মানুষের চাহিদা কী? মানুষ কী চায়? একজন শিক্ষার্থীর প্রতি এবং একজন মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্রদের প্রতি সমাজের চাহিদা কী? আর সে চাহিদা পূরণে সে কতটুকু পারছে সে অনুযায়ী একজন ছাত্র পদক্ষেপ নিতে পারে। সে কত পার্সেন্ট পারছে আর কত পার্সেন্ট তার চেষ্টা অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে তা যাচাই করবে। এতে করে সমাজে তার অবস্থান ভালো হবে। কাজের সুযোগ বাড়বে। ক্ষেত্র প্রশস্ত হবে।
২. প্রতি টার্মে তথা এই তিন মাস মাদরাসায় সে যা অর্জন করলো তা সমাজের সামনে তুলে ধরবে। এই জ্ঞান ও তার আলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিবে। বিশেষতঃ কাছের মানুষ যারা, পরিবার ও ঘরের যারা সদস্য আছে তাদের মাঝের বয়ষ্ক সহ সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ওজু এবং দৈনন্দিন জীবনের মাসআলাগুলো হাতে ধরে ধরে শিখিয়ে দিবে।
৩. পড়ার রুটিন থাকতে হবে। এলোমেলা অধ্যয়ন যেনো না হয়। অধ্যয়ন যেনো মার্জিত ও পরিশীলিত হয়। নিকট ও কাছের আকাবির তথা বড়দের জীবনী অধ্যয়ন করা। হুসায়ন আহমাদ মাদানীর আত্মজীবনী নাকশে হায়াত কিংবা বৈচিত্রের মাঝে ঐক্যের সুর। মাও. মনযূর নোমানী, শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রহ.-এর আপবীতীও অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
আরেকটি কথা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা মাধ্যমিক স্তরের আছে তারা এ সময়ই জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলবে। এবং সে লক্ষ্যে পৌঁছুনোর জন্য তার পাঠ নির্বাচন করবে। যাতে অজানা ভবিষ্যতের সে গন্তব্যে পথ চলা যেনো তার পক্ষে সহজ হয়।
৪. আরেকটু উঁচুস্তরের ছাত্র যারা তারা সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করবে। এখানে তারা স্কুলের ছাত্রদের নিয়ে এবং তাদের সঙ্গে এক প্লাটফর্মে কাজ করবে। উদাহরনত, রাস্তাঘাট নড়বড়ে কিংবা একটু ভাঙাচোরা আছে সবাই মিলে মাটি দিয়ে তা একটু মেরামত করে দিতে পারে।
এলাকায়, মসজিদ-মাদরাসা ও স্কুলে গাছ-পালা লাগাতে পারে। বড় ও মুরব্বিদের সম্ভব হলে সাহায্য করা। কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে তাকে সেখান থেকে বের করে আনার চেষ্টা করা। সুনির্দিষ্ট লোকদের উপকার করা। প্রয়োজনে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের থেকে টাকা-পয়সার সাহায্য নিয়ে তাদের উপকার করতে পারে।
কেএল/