সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দুই সীমান্তে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারি ও সোর্স পরিচয়ধারীরা। তারা প্রতিদিন লাখলাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে পাচার করছে ঘোড়া, গরু, কয়লা, বিড়ি ও পাথরসহ নানান প্রকার পণসামগ্রী ও মাদকদ্রব্য। তাই কোটি কোটি টাকার অবৈধ মালামাল উদ্ধার করাসহ সোর্স ও চোরাকারবারিদের গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান প্রয়োজন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার ভোর থেকে লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৩ এর ৩ এস পিলার ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারতের প্রায় ৩শ গজ ভেতর থেকে ৪-৫শ লোক দিয়ে পাথর পাচার শুরু হয়। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সারাদিন ভারত থেকে লাখ লাখ টাকার পাথর পাচার করে ঠেলাগাড়িবোঝাই করে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে লাউড়গড় বাজারের চারপাশে মজুত করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। তবে পাথর পাচারের খবর পেয়ে মাঝে মাঝে বিএসএফ এসে লোকজনকে তাড়া করে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাত ১২টার পর থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত জাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে ৩শ বারকি নৌকাবোঝাই করে কয়লা, পাথর, ফুছকা, চিনি, ফল ও বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যসহ কোটি টাকার মালামাল সোর্স পরিচয়ধারীরা পাচার করেছে খবর পাওয়া গেছে। এই নদী দিয়ে চোরাচালান করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে ও তাড়া খেয়ে পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া প্রায় সময় লোক আটক করে বিএসএফ। তারপরও নেওয়া হয় না জোড়ালো কোন পদক্ষেপ।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালে জাদুকাটা নদীতে বিজিবি অভিযান চালিয়ে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের ভারতীয় চিনি ও ফলের চালান জব্দ করার পরও বন্ধ হয়নি এই সীমান্তের চোরাচালান বাণিজ্য।
অন্যদিকে জাদুকাটা নদীর দুই তীর কেটে দীর্ঘদিন যাবত চলছে রমরমা বাণিজ্য। সীমান্ত কিং খ্যাত সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামিরা চোরাকারবারিদের নিয়ে সিন্ডিকেড তৈরি করে তাদের চোরাচালান বাণিজ্য ওপেন চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাত ১২টার পর থেকে বৃহস্পতিবার (৫ই ডিসেম্বর) ভোর পর্যন্ত চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর এলাকা দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার ফুছকা, চিনি, কম্বল, নাসিরউদ্দিন বিড়ি ও মদ পাচার করে বিভিন্ন বাড়িঘরে মজুদ করাসহ ১২০৩ পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বস্তা ভর্তি করে কমলা ও মদ এক সাথে পাচার করেছে সোর্স ও চোরাকারবারিরা।
এর আগে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাত ২টা থেকে এই সীমান্তের কড়ইগড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে অবস্থিত বুলুর বাড়ির সামনে দিয়ে ভারত থেকে ১০টা ঘোড়াসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকার ফুছকা, বিড়ি ও মদ পাচার করে বাদাঘাট বাজারে নিয়ে যায় চোরাকারবারিরা।
এ ব্যাপারে উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার কফিল উদ্দিন বলেন, সোর্স ও চোরাকারবারিরা সবাইকে ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকার মালামাল পাচার করে। আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে চোরাকারবারিরা হামলা করে আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। এ নিয়ে থানায় মামলা করেছি।
এ ব্যাপারে চাঁনপুর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার রায়হান বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছুই পাই না।
লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার মোস্তাফা কামাল বলেন, সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধ করার জন্য চেষ্টা করছি।