মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫ ।। ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১১ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :
তারাবি নিয়ে ১০ হাফেজর অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা ফয়যে বর্ণভী সাবাহী মক্তব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশ; পাসের হার ৯৯.৪৯% জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদকে বিলোপ করা সম্ভব নয়: নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে উপদেষ্টা মাহফুজের ‘মব’ নিয়ে পোস্ট, যা বলল ঢাবি ছাত্রশিবির ইফতা, আদবসহ বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি নিচ্ছে উত্তরার মাদরাসাতুল আযহার লালমাটিয়ায় দুই তরুণীকে সিগারেট খেতে না করা সেই রিংকুকে গ্রেফতার ‘অপরাধের সাম্প্রতিক ব্যাপকতার পেছনে পরাজিত শক্তির রাজনীতি ক্রিয়াশীল' একদিনে ২৯ হাজার কুরআনের কপি বিতরণ সৌদি আরবের ‘দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে’ নির্মাণাধীন ভবনের কাঠ পড়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু 

জুলাই আন্দোলনে উত্তরায় রিজভীর শাহাদাতের গল্প

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নোয়াখালী প্রতিনিধি

জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এক অদম্য সাহসের নাম ছিল রিজভী। তার পুরো নাম মাহমুদুল হাসান। এই শহীদ তরুণ বীর সবার কাছে রিজভী নামেই পরিচিত। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কাঁদতে কাঁদতে সেই ছেলে হারানোর কাহিনী জানালেন মা। নোয়াখালীর মাইজদী শহরের ভাড়া বাসায় গিয়ে কথা হয় তার শোকাহত মা–ভাইয়ের সঙ্গে। মা শোনালেন  রিজভী কীভাবে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে এতটা সাহসী হয়ে উঠল।  রিজভী নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের মৌলভী তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ির জামাল উদ্দিনের ছেলে।

ছোটকাল থেকে রিজভী ছিল পরোপকারী। মা ফরিদা ইয়াছমিন গৃহিনী, বাবা জামাল উদ্দিন এনজিও সংস্থার আশা ব্যাংকের ম্যানেজার। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে রিজভী ছিল সবার বড়। পরিবারের অনেক আদরের ছিল রিজভী। তাকে ঘিরেই ছিল পরিবারের সব স্বপ্ন।   ওর ওপর ভরসা করেই বেঁচে ছিল মা-বাবা। পরিবারের অভাব অনটন থাকলেও মা-বাবা তার পড়ালেখার জন্য ছিলেন উম্মুখ।

২০ বছরের তরুণ রিজভী লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ট্রেড থেকে অষ্টম সেমিস্টার শেষ করেছিলেন। এরপর তাকে ইন্টার্নি করার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। চেয়েছিলেন পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবেন। এর মধ্যে ঢাকাতে শুরু হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন।

রিজভীর মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, ১৮ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানার সামনে হাইওয়ে রোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রিজভীর মাথার খুলি উড়ে যায়। মাথার মগজ বের হয়ে রাস্তায় পড়ে। তখন রিজভী রাস্তায় পড়ে কই মাছের মত ছটফট করতে থাকে। ফ্লাইওভার ওপর থেকে তাকে গুলি করা হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার উত্তরা কিচেন হসপিটালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যায়।

তিনি বলেন, ঢাকায় জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হলে রিজভীকে ফোন দিয়ে সাবধানে থাকতে বলতাম। ফোনে রিজভী আমাকে আশ্বস্ত করে সে কোন আন্দোলনে যায় না। কিন্ত ছেলে গুলিবৃদ্ধ হওয়ার পর আমি জানতে পারি- আমাদের অগোচরে ছেলে আন্দোলতে যেত।

ফরিদা ইয়াছমিন আরও জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রিজভীকে তার বন্ধুরা নিয়ে যায় উত্তরা কিচেন হসপিটালে। তাৎক্ষণিক ওই হাসপাতালে পায়নি কোনো চিকিৎসা। এমনকি তার আমি ছেলের লাশ দেখে হাসপাতালে কান্নাও করতে পারিনি। তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশে অনেকটা গোপনে তার মরদেহ নোয়াখালীতে নিয়ে আসা হয়। পরিস্থিতি ভয়াবহতা বিবেচনায় তার মরদেহ নেওয়া যায়নি হাতিয়ার নিজ বাড়িতে। অনেকটা নীরবে-নিভৃতে সমাহিত করা হয় হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের পূর্ব মোহাম্মদপুর গ্রামের নানার বাড়ির কবরস্থানে।

শহীদ রিজভীর ছোট শাহরিয়ার হাসান রিমন বলেন, দেশের স্বার্থে কখনো যদি প্রয়োজন হয় আমিও যাব আন্দোলনে। তবুও জুলাই ছাত্র-জনতার বিপ্লব যেন স্বার্থক হয় এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের পরিবারের।

এ ঘটনায় নিহতের মা উত্তরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামিরা নানাভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে শুনছেন রিজভীর মা।  এ জন্য তিনি আল্লার কাছে চাইলেন ছেলে হত্যার বিচার। পরিবারের আক্ষেপ রিজভী জীবনের অধ্যায় শুরু হওয়ার আগেই সমাপ্তি ঘটে।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ