নড়াইল প্রতিনিধি
‘যেমন আছে এই পৃথিবী/তেমনিই ঠিক রবে/সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে...।’ কিংবা ‘নবী নামের নৌকা গড়/ আল্লাহ নামের পাল খাটাও/ বিসমিল্লাহ বলিয়া মোমিন/ কূলের তরী খুলে দাও...।’ কিংবা ‘আল্লাহ রসূল বল মোমিন/আল্লাহ রসূল বল/ এবার দূরে ফেলে মায়ার বোঝা/সোজা পথে চল...।’
এসব মরমী গানের গেয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও গীতিকার চারণকবি বিজয় সরকার। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, বিজয়গীতি প্রতিযোগিতা ও পরিবেশন, কবিগান এবং পুরস্কার বিতরণসহ বিভিন্ন আয়োজনে তার ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও চারণকবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এসব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন-জেলা প্রশাসক ও চারণকবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আহসান মাহমুদ রাসেল, সদর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্চিতা বিশ্বাস, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রাবনী বিশ্বাস, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় ঘোষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ুন কবীর, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন সিকদার, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু, অধ্যক্ষ রওশন আলী, আকরাম শাহীদ চুন্নুসহ অনেকে।
কবিয়াল বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয়া দেবী। বিজয় সরকার নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন, মতান্তরে মেট্রিক পর্যন্ত। তার দুই স্ত্রী বীণাপানি ও প্রমোদা অধিকারীর কেউ বেঁচে নেই। বিজয় সরকার একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। ১৮০০ বেশি গান লিখেছেন তিনি। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। ‘পাগল বিজয়’ হিসেবে সমধিক পরিচিত তিনি। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন বিজয় সরকার। বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতে পরলোকগমন করেন কবিয়াল বিজয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। তার দুই ছেলে কাজল ও বাদল অধিকারী ভারতে বসবাস করেন।