মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রতারণার মাধ্যমে বাড়িসহ এক প্রবাসীর প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেয়ে এবং জামাইয়ের বিরুদ্ধে। সব হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারটির এখন পথে বসার উপক্রম। নিজের সম্পত্তি ফিরে পেতে বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছেন তিনি। সেই মামলায় প্রতারক মেয়ে ও জামাইকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের শান্তিনগর গ্রামে। ভুক্তভোগী প্রবাসীর নাম গিয়াস উদ্দিন।
জানা যায়, মেয়ে মৌরিন আফরিন রানী ও তার স্বামী মাহবুব আলম মনির তার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বাড়িসহ প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন। জমি কেনার নামে ৩২ লাখ, সেই জমিতে বিল্ডিং করার জন্য ৭০ লাখ এবং বিভিন্ন সময় পাঠানো আরো ৭৩ লাখ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।
ভুক্তভোগী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাসিন্দা ছিলাম। গত কয়েক বছর আগে আমার মেয়ে মৌরিন আফরিন রানীকে বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের কাজিরগাঁও গ্রামের মাহফুজ মিয়ার ছেলে মাহবুব আলম মনিরের সাথে বিয়ে দেই। বিয়ের পর মনির আমাদের এই এলাকায় জমি কেনার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলেন। তার কথায় বালুয়াকান্দি মৌজায় জমি কিনতে রাজি হই আমরা। আমার স্ত্রী আমেনা বেগমের নামে জমি রেজিস্ট্র করার কথা বলে ৩২ লাখ টাকা দেওয়া হলেও কৌশলে জমি রেজিস্ট্রি করা হয় আমার মেয়ে মৌরিন আফরিন রানীর নামে। সে জমিতে বিল্ডিং নির্মাণের খরচ বাবাদ আরো ৭০ লাখ টাকা আমরা তাকে দেই। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আমার মেয়ে ও জামাইয়ের একাউন্টে আমরা আরো ৭৩ লক্ষ টাকা পাঠাই। ২০১৮ সালে দেশে আসার পরে জানতে পারলাম, আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমাদের মিথ্যা বলে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে মেয়ের নামে। এখন মেয়ে এবং জামাই আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে। সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে আমাদের এলাকাছাড়া করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আমি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং পুলিশকে জানিয়েছিলাম- কোন লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি।
ভুক্তভোগী গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, আমি জমিটির বায়না দিয়ে বিদেশ চলে গিয়েছিলাম। বাকি টাকা পাঠানোর পর আমাকে জানানো হয়েছিল- জমিটি আমার নামে কেনা হয়েছে। সে জমিতে আমাদের জন্য বিল্ডিং করা হচ্ছে এখন দেখছি আমরা প্রতারিত হয়েছি। আমার স্বামী, আমি, আমার দুই ছেলের প্রবাসজীবনের সব ইনকামের টাকা এখানে রয়েছে। নিজের মেয়ে এবং জামাইয়ের মাধ্যমে আমরা এভাবে প্রতারিত হব- সেটা চিন্তাও করতে পারিনি। আমাদের এখন আর কিছু নেই, আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাধ্য হয়ে সম্পত্তি ফিরে পেতে আমরা আদালতে মামলা করেছি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত মেয়ের জামাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য জানতে তার বাড়িতে যাওয়া হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
বিষয়টি সম্পর্কে বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত রয়েছি। ভুক্তভোগীর মেয়ে তার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। আমরা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, তবে কাজ হয়নি। শুনেছি, বিষয়টি নিয়ে কোর্টে মামলা হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি আমি জানলাম। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বেশ কিছুদিন আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।