শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ কওমি সনদ বাস্তবায়ন সেমিনার থেকে ১৩ দফা প্রস্তাবনা ও ২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা স্বকীয়তা বজায় রেখে কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন চান মুফতী ফয়জুল করীম কওমি শিক্ষার্থীদের প্রতি সকল বৈষম্যের অবসান হোক: সেমিনারে বক্তারা ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন’ হবিগঞ্জে মহানবী সা.কে কটূক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

বাউবি’র ট্রেজারারের পদত্যাগের দাবি জানালো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিগত সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি)ট্রেজারার, বাউবি বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা আজাদ কামালের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে শিক্ষা সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রেজারারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে তারা লেখে, আমরা সারাদেশের শিক্ষার্থীবৃন্দ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছিলাম। ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় আমাদের শিক্ষা জীবন সেশনজটের মধ্যে পতিত হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও বাউবির কার্যক্রম এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। স্বতন্ত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনা এবং আমাদের শিক্ষা জীবনে সেজন জট কমানোর লক্ষ্যে নিম্নে বর্ণিত দাবী পেশ করছি-

১। বিগত সরকারের নিয়োগকৃত এবং ফ্যাসিবাদের দোসর বর্তমান ট্রেজারারকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।

২। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অত্র বিশ্ববিদ্যালয় হতে উপাচার্য প্রো. উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগ দিতে হবে।

৩। বাউবির কার্যক্রম (ক্লাস ও পরীক্ষা) পুরোপুরি শুরু করতে হবে। একাডেমিক কার্যক্রম সচল করার জন্য একাডেমিক প্রধান হিসাবে ডিনগণকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা জানতে পেরেছি কয়েকজন ডিনকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এমতাবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে নতুন প্রশাসন নিয়োগের পূর্ব পর্যন্ত পূর্বের ডিনগণের দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে হবে।

৪। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অফিস (মূল, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক) কে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিকট সকল ধরনের অবৈধ অর্থ নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

৫। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে একাডেমিক বিল্ডিং ও হলের ব্যবস্থা করতে হবে।

৬। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রে ক্লাস রুম ও পরীক্ষার হলের ব্যবস্থা করতে হবে।

এমতাবস্থায়, আমাদের উক্ত দাবিসমূহ পূরণ করতঃ অত্র বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বাংলাদেশের সেরা দুরশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

এছাড়া বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রেজারারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে শিক্ষকরা লেখে, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) এর বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) এবং প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) ইতিমধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু অদ্যাবধি ফ্যাসিবাদের দোসর হয়েও ট্রেজারার অধ্যাপক মোস্তফা আজাদ কামাল স্বপদে বহাল রয়েছেন। উপাচার্য পদ খালি থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া অনৈতিকভাবে উপাচার্য এর দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে তাঁর এমন অপচেষ্টার জন্য তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং অবিলম্বে তাঁর অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।

অধ্যাপক মোস্তফা আজাদ কামাল কে বাউবি'র ট্রেজারার পদ থেকে অপসারণের দাবি করার কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

১। ইতিহাসের জঘন্যতম স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের কষ্টিপাথরে যাচাই পূর্বক নিয়োগকৃত।

২। শেখ হাসিনা সরকারের সকল অন্যায়-অবিচারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া।

৩ । জুলাই গণহত্যার দোসর হিসেবে কাজ করা।

৪। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে "নৈরাজ্য এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী" আখ্যা দিয়ে ০১ আগষ্ট ২০২৪ তারিখ বাউবি ক্যাম্পাসে মানববন্ধনের নেতৃত্ব দেওয়া।

৫। বাউবি'র বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক ফোরামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা প্রদান করা।

৬। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে "প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম" নামে বঙ্গবন্ধুর আদের্শে বিশ্বাসী শিক্ষক ফোরাম প্রতিষ্ঠা করা এবং তার আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা।

৭। প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের ব্যানারে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন করা এবং সাধারণ সম্পাদক সহ বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হওয়া।

৮। স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় আত্মগোপনে থাকা।

৯। মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য "শিক্ষাক্ষেত্রে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা বা বল প্রয়োগ করা যাবে না" এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে (স্মারক নং ৩৭.০০.০০০০.০৭৯.৯৯.০০৭.১৭.২৫৫, তারিখ ২৯ আগস্ট ২০২৪) বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত পরামর্শমূলক চিঠি জারি করার পর সুযোগ বুঝে ০১/০৯/২০২৪ তারিখ থেকে হঠাৎ নিজেই নিজেকে উক্ত কাজের দায়িত্ব নেওয়ার অপচেষ্টা চালানো।

১০। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন'স কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তাঁর নিজের নামে চিঠি জারী করার জন্য রেজিষ্ট্রার মহোদয়কে চাপ প্রয়োগ করা। বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতা করা।

১১। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবি অব্যাহত থাকা।

১২। শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক বিগত দুই টার্মে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মাননানের নানা অপকর্মের দোসর হওয়া এবং তাঁর অপকর্ম ও দূর্নীতি আড়াল করার চেষ্টা চালানো।

১৩। বাউবি'র শুদ্ধাচার কমিটির আহবায়ক হিসেবে নানারকম বৈষম্যমূলক কাজ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরূপ করা

 ১৪। "শিক্ষা উপদেষ্টা আমার স্যার এবং ২ জন সচিব আমার আত্মীয়" এই কথা বলে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা।

১৫। স্বৈরাচারের দোসর হয়েও জনাব আজাদ উপাচার্য হওয়ার অপচেষ্টা করায় বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা নিউজ করেছে

১৬। ট্রেজারার পদত্যাগ না করায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

১৭। স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে জনাব আজাদ-কে স্বপদে বহাল রেখে কাজ করার সুযোগ দেওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত এবং আহতদের আত্মত্যাগকে অবমাননা করার শামিল।

তাই বাউবি'র বর্তমান ট্রেজারার অধ্যাপক মোস্তফা আজাদ কামাল-কে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে দূরশিক্ষণের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছে নিতে অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের মধ্য থেকে জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে (ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষক ব্যতিত) উপাচার্য, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন), প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং ট্রেজারার নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ