সৈয়ব আহমেদ সিয়াম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বাঁধাদান ও সমন্বয়ককে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে এবং আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত দুইজনের আহতের খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার (১৫ জুলাই ২০২৪) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশনে এসব ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুর আড়ায়টার কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়৷ এর আগে থেকে থেকে শাটল ট্রেনের বগিতে বগিতে তদারকি করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় চবি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহ সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে দেখে ঘিরে ধরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপগ্রুপের নেতারা। ধস্তাধস্তি করে তাকে তুলে নিয়ে যায় যাওয়া হয়। পরে রাফিকে নিয়ে ছাত্রলীগের একটি মিছিল প্রক্টর অফিসে গিয়ে প্রক্টরের কাছে তাকে তুলে দেয়।
এসময় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা বলেন, যারা রাজাকার পরিচয় দিয়েছে তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে ঠাই নাই৷ যে ছেলে কোটা সুবিধা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ কোটার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এদের পেছনে কোন অপশক্তির ইন্ধন আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে৷ এদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।
এদিকে আন্দোলনের সমন্বয়ক রাফিকে তুলে নেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি। মেয়েদের হল অনেক মেয়ে প্রক্টর অফিসের সামনে চলে আসেন। পূর্ব থেকেই ছাত্রলীগের অবস্থান থাকায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে জানা যায়, শিক্ষার্থী বিক্ষোভে বাঁধা দিতে শাটল ট্রেন অফ করে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে হামলার খবর পেয়ে প্রক্টর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে পর্যবেক্ষণে যেতে চাইলে ছাত্রলীগের বাঁধার সম্মুখীন হন। এসময় প্রক্টরের সাথে ধস্তাধস্তি হয় ছাত্রলীগ কর্মীদের। পরে প্রক্টর পুনরায় তার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়।
এর আগে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ প্রক্টর অফিসের দিকে আসতে নেওয়ার সময় দুইজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আহতদের তথ্য জানা জানা যায়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত মেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান নেয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে কোন পুলিশ সদস্যের উপস্তিতি লক্ষ্য করা যায়নি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মোহাম্মদ অহিদুল আলম বলেন, "শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আমাদের সমর্থন ছিল। আমরা জানি তারা সবাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন করছে। কিন্তু গতকাল শিক্ষার্থীরা যেভাবে স্লোগান দিয়ে আন্দোলন করছে তখন থেকে মনে হচ্ছে এই আন্দলোন ভিন্ন দিকে যাচ্ছে।"
সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে প্রক্টর আরো বলেন, "বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে কোটা আন্দোলনকারীরা বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংগঠনের সভাপতি এমতাবস্থায় একটা ছেলেকে তুলে আনে আমাদের কাছে এবং অভিযোগ জানায়, 'ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হয়েছে। ওর সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। কিন্তু, সে নিজেই এখন কোটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।" রাফি তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করে বলে, "স্যার, আমি কোটার বিরুদ্ধে না। ৫৬% কোটার বিরুদ্ধে।" প্রক্টর স্যার বলেন, "তাছাড়া আদালত থেকে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। আমরা সেটি মেনে চলবো। এর বাইরে যেতে পারবো না। গতকাল সারাদেশের মতো আমাদের ক্যাম্পাসেও কিছু বিশৃঙ্খলা হয়েছে। আমরা বিষয়টা দেখছি।" শাটল ট্রেন বন্ধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন বন্ধ করার বিষয়টি আগেও ঘটেছে। ছাত্রলীগ একটা ছেলেকে তুলে এনেছে। বিষয়টা জানার পর এখন আমরা একটা সমাধানের চেষ্টা করছি।"
ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস বলেন, ‘রাফিকে দেখে আমাদের মনে হয়েছে সে নেশাগ্রস্থ। তাই আমরা তাকে নিয়ে প্রক্টর স্যারের কাছে নিয়ে ডোপ টেস্ট করার অনুরোধ করেছি। কোনো রাজাকার ক্যাম্পাসে থাকতে পারে না।’
আন্দোলনের সমন্বয়ক চবি দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘ষোলশহরে আমাদের আজ অবস্থান কর্মসূচি ছিল। কিন্তু আমাদের সহযোদ্ধাদের ওপর হামলা করে তাদের আটকে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছে। শাটল ট্রেন আসতে দেওয়া হচ্ছে না।"
সর্বশেষ প্রক্টর অফিসের সামনে একদল মেয়েকে নিরাপত্তার দাবীতে অবস্থান করতে দেখা যায়। ছাত্রলীগ কর্মীদের এসময় "ধর ধর শিবির ধর, একটা একটা জবাই কর" স্লোগান দিতে দেখা যায়।
হাআমা/