চট্টগ্রামে অপরিশোধিত চিনির পোড়া-গলিত বর্জ্য কারখানার ড্রেন দিয়ে সোজা কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে। এতে নদীর পানিতে বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশছে। তাতে মরে ভেসে উঠছে নদীর মাছ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলীর ইছানগর এলাকার সুগার মিলে পুড়ে যাওয়া চিনি ও কেমিক্যাল নদীতে গিয়ে পড়ায় মাছ মারা যাচ্ছে।
কর্ণফুলী নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া কেমিক্যাল মিশ্রিত অপরিশোধিত চিনির বিষাক্ত পানি সোজা কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এরপর নদীতে কেমিক্যাল মিশে পানি দূষিত হচ্ছে। এতে নদীর মাছ মারা যাচ্ছে। নদী থেকে স্থানীয়রা হাত দিয়ে টেংরা, পোয়া ও চিংড়িসহ ভেসে ওঠা নানা ধরনের মাছ ধরছেন। এছাড়া স্থানীয়রা হাত জাল ফেলেও মাছ ধরছেন। প্রায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এভাবে মাছ ধরতে দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনির দাহ্য পদার্থ যখন ৩৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকে তখন বিষাক্ত কেমিক্যালে রূপ নেয়। আর সেখানে পানি ছাড়া হলে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন কার্বন তৈরি হয়। যার কারণে কারখানায় আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। সেই আগুনে অপরিশোধিত চিনি গলে এর লাভা নদীতে এসে পড়েছে। এতেই পানি দূষিত হয়ে মাছ মরছে। চিনির কেমিক্যালে নদী দূষণ তো হয়েছেই; এছাড়া নদী দূষণের অন্যতম কারণ হলো ১৭টি খালের বর্জ্য ওই নদীতে এসে পড়ছে।
এ বিষয়ে পরিবেশবিদ ড. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘শিল্প কারখানা গড়ে তোলার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত ছিল। তারা ডাম্পিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখেনি। এ কারণে কারখানা থেকে পোড়া বর্জ্য পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এতে নদীর পানি দূষিত হবে। ক্ষতি হবে মৎস্য সম্পদ এবং জীব-বৈচিত্র্য। পুড়ে যাওয়া সম্পদের ক্ষতি একসময় পোষাতে পারবে। পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা আর পূরণ হবে না। এ জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সজাগ হতে হবে।’
এদিকে বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরেও সুগার মিলের ভেতরে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। আগুন বাইরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরো সময় লাগবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক বলেন, ‘চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সুগার মিলের আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অগ্নিনির্বাপক রোবট ‘লুফ-৬০’। এ রোবট দিয়ে মিনিটে এক হাজার লিটার স্পিডে পানি ছিটানো হচ্ছে। চিনির কাঁচামালে দাহ্য পদার্থ থাকায় গুদামের ভেতরের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে আরো ৭২ ঘণ্টা লাগতে পারে।’
উল্লেখ্য, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে কর্ণফুলীর ইছাপুর এলাকার একটি মিলে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রথমদিকে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি স্টেশনের ১৪টি ইউনিট। পরে তাদের সঙ্গে আগুন নেভাতে যোগ দেয় বিমান, নৌ ও সেনাবাহিনীর দলও।
হাআমা/