সিরিয়ায় ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা,পড়ে আছে দাফন ছাড়া লা‘শ
প্রকাশ:
১০ মার্চ, ২০২৫, ১২:০৭ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
সিরিয়ার উপকূলীয় শহর লাতাকিয়া ও তারতুসে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রধারীরা ঘরে ঢুকে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। লাতাকিয়ার বানিয়াসে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তার বন্ধুর বাগ্দত্তাকে গুলি করা হয়েছে এবং তাকে সাহায্য করতে দেওয়া হয়নি, ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান। এখনো তাকে দাফন করা সম্ভব হয়নি। অন্য একজন জানান, বুস্তান আল-বাশা গ্রামে তার চাচির সব প্রতিবেশীকে হত্যা করা হয়েছে। অস্ত্রধারীরা তার বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে এবং তাদের এলাকা থেকে প্রায় ২০টি গাড়ি নিয়ে গেছে। এছাড়াও অন্যান্ন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই অস্ত্রধারীরা নিজেদের হায়াত আল-শামের (এইচটিএস) যোদ্ধা দাবি করলেও, তারা মূলত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য। পালানোর চেষ্টা করলেই মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত যোদ্ধারা লাতাকিয়া ও তারতুসে হামলা চালায়। নতুন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গুপ্ত হামলার পর সেনাবাহিনী দ্রুত পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার হাজার হাজার সেনা সদস্যকে সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে পাঠিয়েছে। প্রতিশোধমূলক অভিযানে হেলিকপ্টার গানশিপ, ড্রোন ও কামান ব্যবহার করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, মাত্র দুই দিনে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৭৪৫ জন সাধারণ নাগরিক, ১৪৮ জন বাশারপন্থী যোদ্ধা ও ১২৫ জন নতুন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। বিপদ থেকে বাঁচতে অনেকে রাশিয়া পরিচালিত হমেইমিম বিমানঘাঁটিতে পালানোর চেষ্টা করেন। তবে পথে তল্লাশিচৌকিতে অস্ত্রধারীরা অবস্থান নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তল্লাশির সময় প্রথমেই প্রশ্ন করা হয়—তারা আলাউইত সম্প্রদায়ের কি না। আলাউইতরা শিয়া সম্প্রদায়ের একটি শাখা, যাদের বেশিরভাগই উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় বসবাস করেন। বাশার আল-আসাদের পরিবারও এই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বাশার সরকারের পতনের পর থেকেই এই সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষও হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী, যিনি বর্তমানে জার্মানিতে আছেন, জানান—তার খালার এক বন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, দুটি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, অস্ত্রধারীরা বানিয়াসের ফারশ কাবিহ গ্রামে গণহত্যা চালিয়েছে। এক পরিবারের কয়েক প্রজন্মের সদস্যরা একত্রিত হয়েছিলেন, কিন্তু হামলাকারীরা হানা দিয়ে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সৌদি আরব এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে একে 'বেআইনি গোষ্ঠীর অপরাধ' বলে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘের সিরিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন সাধারণ নাগরিকদের রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা জরুরি।’ সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারতুসের বেতানিতা গ্রামে এখনো সংঘর্ষ চলছে। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, পানির পাম্প স্টেশন ও জ্বালানি ডিপোতেও হামলা হয়েছে। সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় ঐক্য ও দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।’ বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন অন্তর্বর্তী সরকার কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, তা সিরিয়ার নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনআরএন/ |