নারী দিবস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভাবনা ।
প্রকাশ:
০৮ মার্চ, ২০২৫, ১২:০৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
নারী দিবস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভাবনা । সময়ের পালাবদলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে একবিংশ শতাব্দীর এ লগ্নে এসে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে সবখানেই। নারী দিবসের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। সারাবিশ্বেই একযোগে ৮ ই মার্চ পালন হবে নারী দিবস। এ দিবস কে ঘিরে নানা আয়োজনও চোখে পড়বে। নারীর প্রতি সম্মান,সমতা,ভালোবাসার প্রতীকি বিভিন্ন কার্য্ক্রম ও চোখে পড়বে। নারী দিবস নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা রয়েছে নানা মহলে। তবে আমরা জানবো কয়েকজন ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নারী নিয়ে ভাবনা ও প্রত্যাশার বাণী। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে প্রতি বছর ৮ মার্চ পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিনটিকে নারীদের প্রতি সম্মান, অধিকার ও সমতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তানজিলা সুইটি মনে করেন - "নারী দিবস আমাকে মনে করিয়ে দেয় মানবসভ্যতায় ইতিহাসের রচয়িতাদের। এ দিবস ই শুধু নয়, আমাকে ভাবায় প্রতিটা দিবস যে -একজন নারীই একটি সূর্য। এরা শক্তি, এরা প্রেরণা তবে দিনশেষে দুর্ভাগ্য তাদেরই। যেই পুরুষদের প্রতি দেয়া হয়েছে নারীদের সুরক্ষার দায়িত্ব তারাই যখন ভক্ষণ করে নারীর আত্মসম্মান আর ইজ্জত তখন কান্নারাও তুচ্ছের হাসি হাসে। মহান রব নারীদের কোমল স্বভাবের করেছেন এবং তাদের দিয়েছেন বিশেষ মহত্ত্ব। সমাজের বেশিরভাগ পুরুষ তা স্বীকার করে না বরং নারী অধিকার ক্ষুন্ন করে অহরহ। নারীদের প্রতি নির্যাতন করে তারা জানিয়ে দেয় এ ধরায় তাদের থেকে নিকৃষ্ট পশু আর সৃষ্টি হয় নি। এই পশুদের উপযুক্ত বিচার এ সমাজ দিতে ব্যর্থ। এদেশের আইন ব্যর্থ নারীদের সম্মান রক্ষায়। একমাত্র স্রষ্টার বিধান ছাড়া কিছু ই কার্যকর হবে না বলেই আমি মনে করছি । একদিকে সগৌরবের ইতিহাস আর অন্যদিকে একরাশ হাহাকার নিয়ে আসে এই নারী দিবস৷ এই দিনটা যত জাঁকজমক দেখা যায় নারীদের জীবন তা নয়। তাই আমার কথা হলো,৩৬৫ দিন ই নারীদের আমরা সুরক্ষা ও সম্মান দেয়ার চেষ্টা করব এটাই হতে পারে নারী দিবসের প্রধান সফলতা৷" নারী দিবস বলতে নির্দিষ্ট করে কোনো দিবস হয় না । আপনি যখন একজন নারীকে প্রতিনিয়ত অসম্মান করবেন,ভালোবাসবেন না, হেয় প্রতিপন্ন করবেন, তখন এসব একদিনের দিবসে নারীর আসে যায় না। নির্দিষ্ট একটি দিনকে কেন্দ্র করে নারীকে সম্মান করা বা নারীর অবদান মনে করা আমার কাছে ভন্ডামি মনে হয়।কেননা ঐ একটা দিনই কি আমরা শুধু নারীকে ভালোবাসবো? ঐ একটা দিনই কি নারীকে সম্মান করব? না। নারী হচ্ছে পৃথিবীর অর্ধেক। নারী ছাড়া পৃথিবী কল্পনা করা যায় না। তাই এভাবে ঘটা করে নারী দিবন হয় না। নারী যেহেতু সমাজের অংশ, রাষ্ট্রের অংশ, পৃথিবীর অংশ সেহেতু আমি মনে করি প্রতিদিন ই নারী দিবস পালন করা উচিত। নারীর প্রতিটি কর্ম,তাঁর প্রতি আচার- ব্যবহার, তার প্রতি সম্মান,ভালোবাসা, নায্যতা প্রদর্শন করা উচিত সবসময় । নির্দিষ্ট কোনো দিনই নারীদিবস নয়,প্রতিদিন ই নারী দিবস হোক। এমনটাই মন্তব্য করেছেন তিতুমীর কলেজ পড়ুয়া বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা ইসলাম। ঢাকা কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী হিমেল মনে করেন - নারীদের কে আলাদা ভাবে সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে একটি দিন থাকা উচিত।তাই বলে এই নয় যে শুধুমাত্র একটি দিন নারীকে সম্মান করা হবে, বাকিদিন গুলো মূল্যায়ণ করা হবে না। এমনটা নয়।নারীর ক্ষমতায়ন,নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজের পুরুষদেরও সমানতালে এগিয়ে আসতে হবে। রাস্তাঘাট,কর্মক্ষেত্রে, প্রতিটি জায়গায় নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত,সঠিক মূল্যায়ন,সমতা,সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে নারীর প্রকৃত মর্যাদা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। তিতুমীর কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নূর সাকিব বলেন - "নারী ভালোবাসা, শক্তি ও সম্ভাবনার প্রতিচিত্র। তিনি স্নেহময়ী মা, নির্ভরযোগ্য সঙ্গী, সংগ্রামী কন্যা ও স্বপ্নগড়া পথিক। তার কোমলতা মুগ্ধ করে, আর দৃঢ়তা সমাজ বদলে দেয়। নারীর সম্মানই সভ্যতার প্রকৃত মানদণ্ড। তিনি কোনো বোঝা নন, বরং শক্তি, আলোর পথপ্রদর্শক। *পরিশেষে, নারী আমাদের মা, বোন, স্ত্রী—জীবনের অপরিহার্য অংশ। তাদের সম্মান করা, মর্যাদা দেওয়া এবং সমান অধিকারের সুযোগ তৈরি করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। কারণ, একটি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে ওঠে তখনই, যখন নারী-পুরুষ সমানভাবে এগিয়ে চলে"। কওমি পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও ব্লগার আয়শা তাসফি নারী দিবস নিয়ে তাঁর ভাবনা প্রকাশ করেন - " একবিংশ শতাব্দীতে নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমতার প্রশ্নে কেবল প্রতীকী উদযাপন যথেষ্ট নয়। সমাজের অগ্রগতির জন্য নারী ও পুরুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নারীর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হলেই নারী দিবসের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জিত হবে। আর সেই আনুষ্ঠানিকতা ও সীমাবদ্ধতাকে দূরে রেখে ইসলাম দিয়েছে এ'র যথাযথ পথ-পন্থা। কেবলমাত্র ইসলাম পালনের মাধ্যমেই নারীরা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জন করতে পারে। ইসলাম নারীদেরকে কাজ করার অধিকার দিয়েছে, শিক্ষা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে এবং সর্বোপরি সমাজে সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করেছে। নারী দিবসের প্রকৃত তাৎপর্য তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন সমাজ নারীকে তার প্রকৃত সম্মান দিবে। একদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা বা সংবর্ধনার মাধ্যমে নারীর মর্যাদা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বরং ইসলামের নির্দেশনা অনুসরণ করে নারীদের প্রকৃত সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই প্রকৃত সমাধান আসবে। নারী দিবসের চেয়ে প্রতিদিন ইসলামের বিধান অনুসারে নারীদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়াই হওয়া উচিত আমাদের মূল লক্ষ্য। এমএম / |