ট্রাম্পের গাজা দখল প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তুত
প্রকাশ:
০৪ মার্চ, ২০২৫, ১১:২৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা থেকে লোকজনকে উৎখাত করে এর নিয়ন্ত্রণ নিতে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার বিকল্প প্রস্তুত করেছে মিসর। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি গত রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, মিসরের পক্ষ থেকে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তা আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) কায়রোতে জরুরি আরব লীগের সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। এ প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত হতে হবে না। আজ মিসরের কায়রোতে আরব লীগের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তাব করতে যাচ্ছে মিসর। ইসরায়েল ও হামাসের প্রথম ধাপের নাজুক যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ট্রাম্প ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এ পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মধ্যপ্রাচ্যনীতি, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান থেকে তিনি সরে আসেন। তাঁর এই নীতি বদল ফিলিস্তিন ও আরব দেশগুলোকে ক্ষুব্ধ করে। আবদেলাত্তি বলেন, মিসর তাদের পরিকল্পনার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন ও তহবিল চাইবে। এ ছাড়া গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়নে ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেবে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) কমিশনার ডুবরাভকা সুইকার সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে আবদেলাত্তি বলেন, ‘আরব শীর্ষ সম্মেলনে পরিকল্পনাটি গৃহীত হলে আমরা প্রধান দাতা দেশগুলোর সঙ্গে নিবিড় আলোচনা করব।’ ছয় সপ্তাহ ধরে চলমান যুদ্ধবিরতি নিয়ে অচলাবস্থা তীব্রতর হওয়ায় গত রোববার গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। আবদেলাত্তি বলেন, ত্রাণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ আর রাখা হবে না। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয়। গত শনিবার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের জন্য আলাপ–আলোচনার অর্থ হলো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। অবশিষ্ট সব জীবিত জিম্মির মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রত্যাহারের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা কয়েক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনো শুরু হয়নি। দ্বিতীয় ধাপ শুরুর পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়ে আগামী ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িক বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন করেছে ইসরায়েল সরকার। আবদেলাত্তি সম্মত হয়ে মূলত যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এটা কঠিন হবে। তবে সদিচ্ছা ও রাজনৈতিক সংকল্পে এটি অর্জন করা সম্ভব। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আজকের সম্মেলনের পর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যরাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সৌদি আরবে একটি জরুরি বৈঠক করবেন। ট্রাম্পের বিকল্প প্রস্তাব কীভাবে উপস্থাপন করা যায়, তা নিয়ে সেখানে আলোচনা করা হবে। এদিকে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধে জাতিসংঘ ও আরব দেশ নিন্দা জানিয়েছে।গাজায় ত্রাণ ও পণ্যের প্রবেশ বন্ধ করে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে জানিয়েছে মিসর ও কাতার। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করতে কাতার ও মিসর উভয় দেশই সাহায্য করেছিল। জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার এটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস মানবিক সহায়তার সরবরাহ চুরি করছিল এবং এগুলোকে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের কাজে ব্যবহার করেছিল। এ কারণেই তাঁর দেশ পদক্ষেপ নিয়েছে। নেতানিয়াহুর এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। হামাসের এক মুখপাত্র বলেন, গাজায় ইসরায়েলের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি ‘সস্তা ব্ল্যাকমেইল’ এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরুদ্ধে একটি ‘অভ্যুত্থান’। যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলে হামাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে ১৫ মাস ধরে চলা লড়াই বন্ধ হয়েছে। এ চুক্তির অধীনে প্রায় ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দী ও আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফেরত পাঠাতে রাজি হয়েছে হামাস। সৌদি আরব ইসরায়েলের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা ও সমালোচনা করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘের ত্রাণসহায়তাবিষয়ক প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্ট: আমাদের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী সহায়তা সরবরাহের অনুমতি দিতে হবে।’ ত্রাণসহায়তা বন্ধ করা ছাড়াও লাগাতার ইসরায়েলি হামলা চলছে। গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেও চলছে ইসরায়েলি হামলা। সর্বশেষ হামলায় গত রোববার আরও চারজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন কয়েকজন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এমএইচ/ |