বিশ্বে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর শীর্ষে ভারত
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০২:১৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্য ছড়ানো দেশের তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত। মাইক্রোসফটের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর ছড়ায় ভারত।

মাইক্রোসফটের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৬০ শতাংশেরও বেশি অনলাইনে ভুয়া খবরের মুখোমুখি হতে হয়েছে, যেখানে এ হারের বৈশ্বিক গড় ৫৭ শতাংশ।

জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় জানিয়েছেন, তারা ইন্টারনেট প্রতারণার শিকার হয়েছেন, যা বৈশ্বিক গড় ৫০ শতাংশের চেয়ে বেশি।

সেই সঙ্গে ৪২ শতাংশ ভারতীয় বলেছেন, তারা ফিশিং বা স্পুফিংয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। এ জরিপে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, অনলাইন বুলিং, অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন বার্তা, মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া খবরসহ বিভিন্ন অনলাইন ঝুঁকির বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

ভুয়া বিষয়ক আরেক সমীক্ষার তথ্য মতে, ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত ভারতে পরিবার ও বন্ধুদের মাধ্যমে অনলাইন ঝুঁকি ছড়ানোর হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৯ শতাংশে পৌঁছেছে। এ জরিপের মাধ্যমে ভারতে ভুয়া খবরসহ বিভিন্ন অনলাইন ঝুঁকি বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২০২৪ গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মিথ্যা তথ্য (ডিসইনফরমেশন) এবং ভ্রান্ত তথ্য (মিসইনফরমেশন) ভারতে বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩৪টি সম্ভাব্য ঝুঁকিযুক্ত দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে শীর্ষস্থানে। সংক্রমণজনিত রোগ, অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রম, অর্থনৈতিক অসমতা এবং শ্রম সংকটের মতো বিষয়গুলোকেও এই ঝুঁকি ছাড়িয়ে গেছে।

অন্যদিকে স্ট্যাটিস্টার সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, ভারতের প্রথমবারের ভোটারদের মধ্যে ৮৮ শতাংশই ভুয়া খবরকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন।

এছাড়া বিভিন্ন জরিপ এবং গবেষণা বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে ভারতের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভারতেই সবচেয়ে বেশি কনটেন্ট ফরওয়ার্ড করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়েও ভারতের মূলধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম যাচাই-বাছাই না করেই বিভিন্ন ভুল ও মিথ্যা খবর প্রকাশ করে আসছে। ভুয়া খবর প্রকাশের তালিকায় আছে হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অভ ইন্ডিয়া ইত্যাদির মতো প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমও।

বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশসংক্রান্ত ভুয়া খবর বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে।

 

যেমন- গণহত্যা, দুর্নীতি ও কোটি কোটি ডলার পাচারের অভিযোগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করার পর ইন্ডিয়া টুডে-র প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ প্রতিবেদনের মিথ্যা তথ্য খণ্ডন করা হয়।

এছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যম রিপাবলিক বাংলাসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন আইডি থেকে ছড়ানো হয়েছে, বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানার জানিয়েছে, বাংলাদেশে ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করা হয়নি।

ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজ, আরটি ইন্ডিয়া একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করেছিল, প্রতিমা বিসর্জনের সময় মুসলিমরা হিন্দু মন্দিরে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই দাবিটিও ভুয়া। ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই ভিডিওটি বাংলাদেশেরই নয়, বরং ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ সুলতানপুর গ্রামে প্রতিমা বিসর্জনের দৃশ্য।

এরকম বিভিন্ন অপপ্রচার ও ভুয়া তথ্যে সয়লাব হয়ে গেছে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমনকি সংবাদমাধ্যমও।