ভোলায় সবজি আলু তেল চালের বাজারে অস্থিরতা
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ০২:০০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ভোলা প্রতিনিধি

ভোলায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নানান বাহানায় প্রতিদিনই বাড়ছে সবজি,মাছ,আলু,তেল, চালসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ক্রেতারা বলছেন,সব কিছুর মৌজুদ রয়েছে প্রচুর, তার পরেও দাম আকাশ ছোয়া সিন্ডিকেটের কারসাজি সব কিছু ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম।

বৃহস্পতিবার সকালে ভোলার বিভিন্ন বাজারে সবজি, মুদি ও চালের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, সবজি ও মাছ ছাড়া সব দোকান খুলেছেন ৯টার পরে। দোকানে সব পণ্যের সরবরাহ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। আড়তে তিল পরিমাণ জায়গা নাই। বিভিন্ন স্থানেও ব্যবসায়ীদের গুদামে পণ্যে ভরপুর।পাইকার বা ব্যাপারীরা এলে মালিক ঘরে নাই বলে পণ্য বিক্রি না করে পাইকার ও ব্যাপারীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ২/৩ ঘণ্টা পরে দোকান বন্ধ করে চলে যান মালিক, ম্যানেজার ও ডেলিভারি সরদার। সন্ধ্যার সাথে সাথে চালের সকল আড়ৎ বন্ধ হয়ে যায়। ২ দিনের ব্যবধানে ভোলার বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আলুর কেজি বিক্রি হয় ৮০ টাকা। আবারও ভোজ্যতেল-সোয়াবিন,কোয়ালিটি, পামওয়েল, ডালডা, চালের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতিকেজি ভোজ্যতেল সোয়াবিন ২০৫, কোয়ালিটির ২০০, পামওয়েল ১৯০ টাকা। মসল্লা জাতীয় হলুদ ও মরিচের গুড়ার দাম ও বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। জিরা ১০০০, এলাচি ৬০০০, দাড়চিনি ১২০০, পেঁয়াজ ১১০, আদার ২০০, রসুনের কেজি ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির মধ্যে বরবটি ১৬০,কাচাঁমরিচ ৩০০,কাকরোলের ১২০,পটল ৮০, মুলা ৬০, করল্লা ১০০, ঝিঙ্গা ৮০, টমেটো ১৮০, গাজর ২৬০, পঞ্চমুখি ৬০, গাডিকচু ৮০, কচুর লতি ৮০, ভেন্ডি ৮০, পানিকচু প্রতিপিস ১০০ থেকে ১৫০, লাল শাক কেজি ৩০০, কলমির শাক ২০০, লাউ শাক ৪০০, লাউ পিস ১০০ থেকে ২০০, ধনেপাতা ৩০০, শসা ৬০, রেখা ৮০, পেপে ৬০, মিষ্টি কুমড়া ৬০, চালকুমড়া ৬০,পাতা কপি ১২০, ফুল কপি ১২০ টাকা দামে বিক্রি করছে।

মাছ প্রকার ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ কেজিতে বেড়েছে। পুকুরে চাষ করা মাছসহ গরু, খাশি, সব প্রকার মুরগির দাম ৩০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। প্রকারভেদে মোটা ও চিকন চাল ২৫ কেজির বস্তায় ১৫০ টাকা করে বেড়েছে।

চাল ব্যবসায়ী আলমগীর চাকলাদার জানান, আমরা চাল আমদানি করে সামান্য লাভে বিক্রি করি। তবে মিলাররা বিভিন্ন অজুহাতে দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায়।

আড়তদার জামাল মুন্সি জানান, আলমগীর চাকলাদার একজন মিলার, তার কাছে কয়েক লাখ টন ধান ও চাল মজুদ রয়েছে, ভোলার চালের বাজার নিয়ন্ত্রন করেন এবং প্রতিদিন ভোলা থেকে হাজার হাজার টন চাল বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।

সাধারণ ক্রেতা স্বপন, মাকছুদ, ফারুক জানান, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নশ্রেণীর মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। কাচাবাজারসহ দিন দিন সব পণ্যের দাম বাড়ছে, ক্রয়

করতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। তারা আরো জানান, ভোলার নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যদি প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং করত, তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসত।

সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি অস্বীকার করে পরিবহন খরচ বৃদ্বি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর দোষ চাপিয়ে আড়তদাররা বলছেন, বৃষ্টিতে উৎপাদিত অনেক সবজি নষ্ট হওয়ায় ভোলার বাজারে কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট নিরসনে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আমরা কাঁচামাল মাল কিনে এনে ভোলার বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। তাদের দাবি, ভোলার বাজারে স্থানীয় পণ্যের জোগান বাড়লে সংকট কেটে যাবে, একই সঙ্গে দামও কমবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আড়তদার জানান, সব আড়তদার সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। শতাধিক কাঁচামালের আড়তদার রয়েছে, তারা রোটেশন করে ১ দিন ১০ জনকে মাল আমদানি করতে অনুমতি দেন। সেই ১০ জনে মাল আমদানি করে ইচ্ছেমত দামে বিক্রি করে। আড়তদাররা মোটা অংকের টাকা আয় করে।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি।