ই-কমার্স: অনলাইন ব্যবসায় সাফল্য পেতে কিছু টিপস
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর, ২০২৪, ০১:৪৪ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

বর্তমানে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন উদ্যোক্তারা ওয়েবসাইট খুলে অনলাইনে সেবা ও পণ্য বিক্রির ব্যবসা শুরু করছেন। এর মধ্যে অনেকের আবার সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক ব্যবসা। সব ধরনের পণ্যই এখন অনলাইনে কেনা-বেচা হয়। এরমধ্যে পচনশীল ফলমূল শাকসবজি থেকে শুরু করে কাপড়-চোপড় ইলেকট্রনিক জিনিসও আছে। একজন সফল অনলাইন উদ্যোক্তা হতে হলে তাকে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে? সেই বিষয়গুলো বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে।

যেকোনো ব্যবসা শুরু করার আগে সেটা নিয়ে পরিকল্পনা জরুরি। আপনি কী বিক্রি করতে চান, সেটা কোথা থেকে সংগ্রহ করা হবে, কতদিন সেটা চালিয়ে যেতে পারবেন। পরবর্তী ধাপগুলো কি হবে, সেগুলো পরিকল্পনা করতে হবে।

ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা

অনলাইনে এখন হাজার হাজার উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে টিকে থাকতে হলে, প্রতিযোগিতায় সফল হতে হলে ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। কোনো পণ্য সংগ্রহ করেই ছবি তুলেই বিক্রি শুরু না করে বরং সেগুলোয় নতুনত্ব যোগ করতে হবে। অনলাইন ব্যবসায় জায়গা করে নিতে হলে অবশ্যই গতানুগতিকতার বাইরে, ব্যতিক্রমী কিছু নিয়ে আসতে হবে।

নাম নির্বাচন: আকর্ষণীয়, ব্যবসার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ

ই-কমার্স বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুক হোক আর ওয়েবসাইট হোক- ই-কমার্সের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনলাইন জগতে আকর্ষণীয় নাম না হলে মনে রাখতে চায় না।

তাদের মতে, প্রতিষ্ঠানের নামটি আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। তাহলে মানুষ সহজেই যেমন সেটা মনে রাখতে পারবে। আবার ব্যবসার ধরনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হলে সেটা কাস্টমারের প্রয়োজনের সাথেও মিলে যাবে। সেই সাথে ব্যবসার শুরুতেই ডোমেইন রেজিস্ট্রি করে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ ও বিভিন্ন জনপ্রিয় ডোমেইন রিসেলার সাইট থেকে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১১০০ টাকার মধ্যে ডোমেইন কেনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ডোমেইনটি হওয়া উচিত সংক্ষিপ্ত, সহজে মনে রাখার উপযোগী এবং এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) বান্ধব।

ব্যবসা চালু করা: ফেসবুক বড় মাধ্যম

ফেসবুকে একটি পেজ খুলে ব্যবসা শুরু করা খুবই সহজ একটা উপায়। উদ্যোক্তারা বলছেন, একেবারের শুরুর দিকে ফেসবুকে পাতা খুলে ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। কারণ এক্ষেত্রে বিনিয়োগ খুব কম লাগে।

তাছাড়া অনলাইন ব্যবহারকারীদের প্রায় সবাই ফেসবুক ব্যবহার করায় এখান থেকে গ্রাহক পাওয়া, গ্রাহকদের কাছে নিজের পরিচিতি তুলে ধরা সহজ। ফলে ওয়েবসাইট থাকলেও প্রায় সবারই ফেসবুক পাতা থাকে।

ফেসবুকে বুস্টিং, অর্থাৎ নিজের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়ার মাধ্যমে অপরিচিত মানুষদের কাছে প্রতিষ্ঠানের সংবাদ পৌঁছে দেয়া যায়। বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন। ফলে এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পণ্য বা সেবার তথ্য তুলে ধরা সম্ভব। কত মানুষের কাছে বিজ্ঞাপনটি পৌঁছাতে চান, তার ওপরে এ ধরনের বুস্টিংয়ের চার্জ নির্ভর করে।

এরপর গ্রাহকদের সাড়া পেলে আস্তে আস্তে ওয়েবসাইট নির্মাণ করা যায়। বাংলাদেশে ১৫ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে ওয়েবসাইট নির্মাণ সম্ভব।

আইনি নিবন্ধন: ব্যবসার বৈধতা

বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে যারা পণ্য বা সেবা বিক্রির ব্যবসা করছেন, তাদের বেশিরভাগেরই কোনো আইনগত নিবন্ধন বা বৈধতা নেই। এমনকি ওয়েবসাইট খোলা, ওয়েবসাইটে ব্যবসা করা বা ই-কমার্সের ক্ষেত্রে দেশে এখনও কোনো আইন নেই।

তবে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও যারা ই-কমার্স ব্যবসায় স্থায়ী হতে চান, তাদের উচিত অন্তত একটা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা শুরু করা। তাহলে সেই ব্যবসার একটা আইনগত বৈধতা তৈরি হয়।

সিটি করপোরেশন বা পৌরসভায় সামান্য কিছু ফি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করা যেতে পারে। তবে এখনও বাংলাদেশে শুধুমাত্র ই-কমার্স হিসাবে কোন খাত নেই। এক্ষেত্রে আইটি খাতে এসব ট্রেড লাইসেন্স করা যেতে পারে।

ব্যাংক হিসাব : আর্থিক পরিচিতি তৈরি

ট্রেড লাইসেন্সের পরেই প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ব্যাংক হিসাব চালু করার পরামর্শ দিচ্ছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন। ব্যবসা বড় হলে, অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেন করতে হলে ব্যাংক হিসাবের দরকার হবে।

এখন বাংলাদেশেও ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ছে। ফলে এই সুবিধা নিতে হলে ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে। ব্যাংকের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে ভবিষ্যতে ব্যবসায় ঋণ পাওয়াও সহজ হবে।

পণ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য পৌঁছে দিন

গ্রাহকের কাছে শুধু পণ্যটি বিক্রি করাই শেষ কথা নয়, সেটা প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। কারণ পণ্য পৌঁছাতে বিলম্ব হলে গ্রাহক এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে বিরূপ মনোভাব তৈরি হতে পারে।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনেকেই অন্য স্থান থেকে পণ্য সরবরাহ করে সেটি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেন। এক্ষেত্রে তাদেরও এমন একটি চেইন তৈরি করতে হবে যাতে, তারাও পণ্যটি সঠিক সময়ে হাতে পান।

এজন্য বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ ও চুক্তি করার পরামর্শ দিচ্ছেন ই-কমার্স উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশে এখন অন্তত ২০টি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স খাতের সাথে কাজ করছে। পাশাপাশি নিজেদের ডেলিভারি ম্যান নিয়োগ করা যেতে পারে, যার দ্রুত কাছাকাছি থাকা গ্রাহকদের পণ্য পৌঁছে দেবেন।

গ্রাহক সেবা: নিজের অবস্থান তৈরি করুন

পণ্য সরবরাহের পরে গ্রাহক সন্তুষ্টির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কারো যদি পণ্য নিয়ে আপত্তি থাকে, যে পণ্য বা ছবি, রঙ ইত্যাদি দেয়ার কথা, সেটা না হলে ভিন্ন কিছু হয়, তাহলে সেটা তাক্ষৎনিকভাবে ফেরত নেয়া, বিকল্প পণ্য বা মূল্য ফেরতের ব্যবস্থাগুলো থাকতে হবে। এরকম অভিযোগ তৈরি হলে সেটা যত তাড়াতাড়ি সমাধান করা যাবে, ওই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য সেটাই মঙ্গল।

সেই সাথে গ্রাহকদের প্রশ্নের জবাব, অভিযোগের জবাব দ্রুত দিতে হবে। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট টেলিফোন লাইন বা চ্যাটিং লাইন থাকা ভালো, যেখানে যেকোনো ব্যাপারে একজন গ্রাহক তাৎক্ষণিক উত্তর পাবেন।

ধৈর্য : সাফল্য একদিনেই আসবে না

ই-কমার্স অনেক বড় একটি জায়গা। এখানে নতুন কিছু নিয়ে এসে কেউ তাড়াতাড়ি সফলতা পেতে পারে, কিন্তু সবার সফলতা কিন্তু একবারে আসবে না। সেক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে ব্যবসায় টিকে থাকতে হবে। গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা গেলে একসময় সফলতা আসবে।

বাংলাদেশের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ই-কমার্স খাতে সফল হতে সময় লেগেছে। কিন্তু গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের পর তাদের সফলতা বহুগুণ বেড়েছে।

নতুন বাজার ও গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো

ই-ক্যাবের হিসাবে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ই-কমার্সের আকার ছিল মাত্র ৪৫০ কোটি টাকার। বর্তমানে এটি সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। ই-কমার্স খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর ই-কমার্সের বাজার বড় হচ্ছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের এই প্রকোপের সময় অনলাইন ভিত্তিক পণ্যের বাজার রাতারাতি অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এখনো প্রধান শহরগুলোর বাইরে ই-কমার্সের সেবা পুরোপুরি পৌঁছায়নি। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার মানুষজন এখনো ই-কমার্স সেবার বাইরে রয়েছে।

তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, ই-কমার্স খাতে সফল হতে হলে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। বিশেষ করে যেসব সেবা বা পণ্যের চাহিদা রয়েছে, যেখানে প্রতিযোগিতা কম, সেরকম অভিনব কিছু তুলে ধরতে পারলে সফল হওয়া সহজ হয়।

এনএ/