শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে এনে বিচার ও শাস্তির দাবী খেলাফত মজলিসের
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৪:৪০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে এনে বিচার ও শাস্তির দাবী জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। 

আজ বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ দাবী জানানো হয়। 

আমীরে মজলিস মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। 

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বুকে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলো খুনী হাসিনার সরকার। যেখানে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ছিল না, বাক স্বাধীনতা ছিল না। মৌলিক মানবাধিকার ছিল ভুলুণ্ঠিত। সুস্থ ধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল নির্বাসিত। মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছিল দুর্বিসহ। দেশের ঐ দুর্দিনে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছে, রক্ত ঝরিয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই স্বৈরশাসকের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা বিজয়ের আজ এক মাস পূর্ণ হলো। এ মুহূর্তে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে শহীদদের স্মরণ করছি। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আহতদের সুচিকিৎসা ও আশু আরোগ্য কামনা করছি। যাদের আত্মত্যাগে জাতি স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে শহীদ, চিরতরে অক্ষম ও আহতদের দ্রুত তালিকা প্রণয়নপূর্বক ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা অনুযায়ী আশু ও ক্ষেত্র বিশেষে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। একই সাথে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করতে হবে।

এতে বলা হয়, অভ্যুত্থানোত্তর বিগত এক মাসে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী ও ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ও সহযোগীতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। ভারতের বাঁধ খুলে দেয়ায় সৃষ্ট দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি উত্তরণে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। এভাবে পরাজিত শক্তির সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে হবে। কাক্সিক্ষত সংস্কারের মাধ্যমে ন্যায়-ইনসাফ ভিত্তিক একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আশা করি আমাদের এই ঐক্য আগামীর বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আরো উঁচু স্থানে নিয়ে যাবে। 

কিন্তু পতিত স্বৈরাচার ও আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা-রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে গড়ে ওঠা অভূতপূর্ব ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছে। ছাত্র-জনতার ঐক্য বিনাশী এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। কষ্টার্জিত বিপ্লব যাতে বেহাত হয়ে না যায় সেজন্য সবাইকে আরো সজাগ থাকতে হবে। ছাত্র-জনতার কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগীতা করতে হবে। স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে সুসংহত করতে হবে। 

ব্রিফিংয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হয়, 
১. মানবতাবিরোধী ও গণহত্যাকারী খুনী হাসিনাকে দ্রুত দেশে এনে বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা এবং স্বৈরাচারের দোসর, লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের ‘বিশেষ ট্রাইবুনালে’ দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
২. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে শহীদ, চিরতরে অক্ষম ও আহতদের দ্রুত তালিকা প্রণয়নপূর্বক ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা অনুযায়ী আশু ও ক্ষেত্র বিশেষে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করতে হবে।
৩. দেশের ধ্বংসপ্রায় বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, অর্থ ও ব্যাংকিং বিভাগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ সকল বিভাগকে দ্রুত সংস্কারের আওতায় এনে মানুষের কল্যাণে কর্মক্ষম করে তুলতে হবে।
৪. দেশের আইন সভা-জাতীয় সংসদ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগ যেনো স্বাধীনভাবে ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সমন্বয় করে স্বার্থক ও সুন্দরভাবে চলতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. ভারতের সেবাদাস পতিত হাসিনা সরকারের সাথে ভারতের সম্পাদিত সকল চুক্তি পুণর্মূূল্যায়ন এবং দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল ও ক্ষেত্র বিশেষে চুক্তির ধারা সংশোধন করতে হবে।
৬. বিডিআর হত্যাকাণ্ডের অপ্রকাশিত তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ, প্রয়োজনে নতুন তদন্ত কমিশন গঠন এবং প্রকৃত দায়ীদের সনাক্ত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সাথে শাপলা চত্ত্বর হত্যা, সাগর-রুনি হত্যা, ‘আয়না ঘর’ কাণ্ডসহ সকল গুম ও খুনের যথাযথ বিচার করতে হবে।
৭. রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও দমন-পীড়নের উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী, আলেম-উলামাসহ বিরোধী মতের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
৮. জুলাই বিপ্লবের মূল নিয়ামক ছাত্র-জনতার ঐক্যকে সংহত ও এগিয়ে নিতে হবে। বিপ্লব বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে গড়ে উঠা ঐক্যকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আরো আধুনিক ও শক্তিশালী করা এবং সক্ষম সকল নাগরিককে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। 
৯. দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য কমানো, ভারতের পানি আগ্রাসন মোকাবিলা ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
১০. বিপ্লব পরবর্তী পরিস্থিতির উপর দ্রুত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, সংস্কার কার্যক্রম জোরদার এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে যৌক্তিক দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. আওয়ামী দলীয় ক্যাডারদের হাতে থাকা সকল বৈধ-অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 
১২. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বিফ্রিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, যুগ্মমহাসচিব অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, প্রচার ও তথ্য সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক মো: আবুল হোসেন প্রমুখ। 

কেএল/