ত্রাণের চাইতে পূনর্বাসন বেশি জরুরি : মাওলানা গাজী ইয়াকুব
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৯:৫৫ রাত
নিউজ ডেস্ক

হঠাৎ করেই ভয়াবহ দুর্যোগের কবলে বাংলাদেশ। ভারতের বাঁধ খুলে দেয়ায় উজানের পানি ও ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুরসহ ১৩ জেলা। আশপাশের অঞ্চল। বন্যায় সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে অসহায় লাখো পরিবার। আজ সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর মতে চলমান বন্যায় পানিবন্দি প্রায় ৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬৭টি পরিবার। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭ জনে। বন্যায় ৬৮টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৫০৪টি। ১১ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোক সংখ্যা ৫১ লাখ ৮ হাজার ২০২ জন। সীমাহীন দুর্ভোগে আছে বন্যাকবলিত মানুষেরা। দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে সাধারণ মানুষসহ নানা সংগঠন। উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলছে করোনাকালীন সেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী সেবা সংস্থা তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ফাউন্ডেশনটির চেয়ারম্যান মাওলানা গাজী ইয়াকুব বর্তমানে বন্যাকবলিত অঞ্চলে মানুষের সেবায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। ব্যস্তময় সময়ের (২৯ আগস্ট) এক দুপুরে আওয়ার ইসলামের মুঠোফোনে সময় দিয়েছেন তিনি। বন্যা, সেবার নানা বিষয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের চিফ রিপোর্টার হাসান আল মাহমুদ


আওয়ার ইসলাম : বন্যার খবর পাওয়ার পরে বন্যার্তদের জন্য প্রথম কিভাবে সেবা শুরু করলেন এবং প্রথম প্রস্তুতির গল্পটা জানতে চাই।

মাওলানা গাজী ইয়াকুব : আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এবং আহত বিশেষ করে ওলামায়ে কেরাম মাদরাসা শিক্ষার্থীদের একটা পরিসংখ্যান নিতে দেশের ময়মনসিংহ হালুয়াঘাট নানা জেলা-থানায় সফরে ছিলাম। নিহতদের কবর জিয়ারত, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া, নগদ অর্থায়ন করা শুরু করেছিলাম। মাত্র ৫টা পরিবারকে সহায়তা দেয়ার পরে বন্যার খবর পাওয়ার পাওয়া মাত্রই ফেনীতে চলে এলাম। প্রথমে আমরা পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার  করার জন্যে চারটা বোট ভাড়া করি। চারটি বোট দিয়ে উদ্ধার করা শুরু করলাম। তখন আমাদের কোনো অর্থায়ন নেই, ফান্ড নেই। মাত্র ১৫ হাজার টাকা ছিল। ছোট্র একটা মিডিয়া নিজের ফেসবুক আইডিতে সবাইকে জানালাম, ‘এখন শুকনো খাবার দিলে ভালো হয়’। আলহামদুলিল্লাহ! পরের দিন যেখানে মাত্র ১৫ হাজার টাকা নিয়ে এলাম, সেখানে দুই দিনে ১৫ লাখ টাকার খাবার সহযোগিতা করতে পারলাম বন্যার্তদের জন্য।

করোনাকালীন সেবায় কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কাজের একটা তালিকা করি। পূর্ব থেকে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের ফেনী জেলা দায়িত্বশীলদের জানানো ছিল। তারা করোনাকালীন সময়েও কাজ করেছিলেন। আমার সেই সাথীরা যোগ দিলেন।

কাজের পরিধি বাড়ানোর জন্য আমরা কুমিল্লা বিশ্বরোডের পাশে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করি। সবাইকে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে জানান দিয়ে দেই যে, এখান থেকে খাবার বিতরণ করা হবে। আমাকে যারা চিনে-জানে ভালোবাসে, তারা সবাই আমার সাথে যোগাযোগ করা শুরু করে দিলেন। কেউ প্যাকেট তৈরী করে আনেন, পাঠান, কেউ নগদ অর্থ পাঠান কেউবা এখানে নিয়েও আসেন। এভাবেই চলছে বন্যার্তদের মাঝে আমাদের ভালোবাসা বিতরণ কার্যক্রম।

আওয়ার ইসলাম : উদ্ধার কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের কষ্ট, স্মৃতি-অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন?

মাওলানা গাজী ইয়াকুব : ঢাকা-চট্রগ্রাম রোড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেনী যাতায়াতে জ্যামে ২৪  ঘন্টা রাস্তায় ছিলাম। একটা সময় টিকতে না পেরে শেষে আমরা পার্শস্থ ধর্মপুর মাদরাসা গিয়ে আশ্রয় নিলাম। ওখানে একটা মসজিদে ছিলাম। অনেক মানুষ যারা সহায়তা নিয়ে বন্যাকবীলত এলাকায় যাচ্ছিলেন, তারাই এই মধ্য রাতে এখানে আশ্রয় নিলেন। সেখান থেকে আমরা ১২-১৪ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গেলাম মহিপাল। নৌকাগুলো ভাড়া করে গ্রান্ড টাংক রোডে আনলাম। সে অনেক কষ্টের পর্ব। এখন থাক।

 

আওয়ার ইসলাম :  আপনি বন্যাকবলিত মাঠে সেবায় আছেন। বর্তমানে বন্যার্ত মানুষের মৌলিক চাহিদা কী? কোন্ সেবায় বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন?

মাওলানা গাজী ইয়াকুব : পানিবাহী যেসব রোগ হয়, জ্বর-ঠান্ডা সর্দি-কাশি গ্যাস্টিক আগে থেকে হার্টের রোগীও আছে। তাদের ঔষধ অত্যন্ত প্রয়োজন। বন্যার্তদের সাহায্যে চিড়ামুড়ি আর বিস্কুট না পাঠিয়ে চালডাল তেল আলুপেঁয়াজ আটা ময়দা সুজি গুড়ো দুধ দরকারী ঔষধ পাঠালে ভালো হয়। আর এই মুহূর্তে নোয়াখালী লক্ষিপুর জেলাগুলোর দিকে মনোযোগী হলে ভালো হয়। এখন খাদ্যের চাইতে পূনর্বাসনের দিকে মনোযোগী হওয়া খুবই জরুরী।

আওয়ার ইসলাম : শুরু থেকে এ পর্যন্ত আপনাকে সহযোগিতা করেছেন কারা কারা? এ মুহূর্তে আপনি কাদেরকে স্মরণ করবেন?

মাওলানা গাজী ইয়াকুব : দেখেন আমারতো বাইরের রাষ্ট্রের সাথে তেমন সম্পর্ক নাই। কোনো বিশেষ দলেরও ছায়াতেও নই। শুধুমাত্র জনগণের ভালোবাসা আর দোয়া আমার সাথে আছে। বিশেষ করে কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্ট আলেম, শিক্ষক, মুহাদ্দিস, মসজিদের ইমামগণ আমার ফাউন্ডেশনে হাদিয়া দেন। আমি তাদের দেয়া হাদিয়া পৌঁছাই কেবলমাত্র।

আওয়ার ইসলাম : বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে তাকওয়া ফাউন্ডেশন আগামী দিনগুলোতে কীভাবে কাজ করবেন?

মাওলানা গাজী ইয়াকুব : খাগড়াছড়ির সাতকানিয়া লোহাগড় যখন বন্যা হয়েছিল ২০২৩ সালে তখন আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছিল পুনর্বাসন বিষয়ে। বাস্তবতা থেকে বলবো ত্রানের চাইতে পূর্ণবাসন বেশী জরুরি। সে অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগিয়ে, টিন, চকি-খাট, ইট-বালু, সিমেন্ট এগুলোও খুব বেশী জরুরী। আমরা সেসব দেয়ার ইচ্ছা করেছি। ঘর নির্মাণ করে দেয়ার ইচ্ছে আছে। পশু দেয়ারও পরিকল্পনা আছে।

আওয়ার ইসলাম : দেশ-বিদেশি যেসব দাতারা আছেন, সহযোগিতা করছেন, আওয়ার ইসলামের মাধ্যমে তাদের কাছে আপনি কিছু বলবেন কি?

মাওলানা গাজী ইয়াকুব : তাকওয়া ফাউন্ডেশন বলেন আর ব্যক্তি গাজী ইয়াকুব বলেন আজকের এ অবস্থানে তাদেরই অবদান। তাদের ভালোবাসা আন্তরিকতা দিয়েই তাকওয়া ফাউন্ডেশনের পথচলা। তাঁদেরকে আল্লাহ নেক হায়াত দিক। সবার দান-সহযোগিতা আল্লাহ কবুল করুক। দাতা-গ্রহিতা স্বেচ্ছাসেবী সকলকে জাযাকুমুল্লাহ।

হাআমা/