বন্যার্তদের পাশে রেড ক্রিসেন্ট, ব্যাপক কর্মতৎপরতা
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:৩১ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায়  নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর কুমিল্লা সহ কয়েকটি জেলার বেশীরভাগ স্থান প্লাবিত হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি,  নোয়াখালী যুব রেড ক্রিসেন্ট  শুরু থেকেই নোয়াখালী জেলার বন্যা কন্ট্রোল রুম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

জেলার ৯ টি উপজেলার মধ্যে ৮টি উপজেলায় নিরবচ্ছিন্ন কাজ করছে জেলা রেড ক্রিসেন্ট এর ভলেন্টিয়াররা, এান কার্যক্রম পরিচালনা, উদ্ধার কার্যক্রম, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা, মেডিকেল ক্যাম্প ও টেলিমেডিসিন পরিচালনা, জীবনরক্ষায় সহায়ক সঠিক  তথ্য সরবরাহ সহ দুর্গম স্থান গুলোতে এম্বুলেন্স সার্ভিস দিয়ে উদ্ধার অভিযান করে আসছে।

২১ আগস্ট ২০২৪ থেকে আজ পর্যন্ত রেড ক্রিসেন্ট রেসকেউ টিম কতৃক প্রায় তিন শতাধিক মানুষ (গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধ, সাধারণ জনগণ ও শিশুকে) উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি এনিমেল রেসকিউ করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট তথ্য অনুযায়ী। বন্যার প্রথম দিন থেকে প্রায় ৯০৫০ রান্না করা তৈরি খাবার এবং ১২৩৯৫ ব্যাগ শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে  ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে। আরো প্রায় ৫০০ প্যাকেট খাবার আমরা বিতরন করব আগামীকাল। পানিবন্দি মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করার জন্য গ্রামীনফোনের সহায়তায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা Water purification kit স্থাপন করে যার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ১৬৪০০(ষোল হাজার চারশত) এর বেশি লিটার বিশুদ্ধ পানি ও ৫০০ জেরিকেন সরবরাহ করা হয়েছে।

এ ছাড়া আরো ৯০০০ লিটার মিনারেল ওয়াটার রয়েছে আমাদের কাছে যা পর্যায়ক্রমে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য কল্যান অফিস থেকে প্রায় ৩০,০০০ পিস বিশুদ্ধকরণ কিট সংগ্রহ করি আমরা যার মধ্যে প্রায় ২৫,০০০ পিস সরবরাহ করেছি জেলার বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে। তথ্য সহায়তায়  ইউনিসেফ এর সাথে সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ফায়ারসার্ভিসের সাথে বিভিন্নভাবে সমন্বয় সাধন করে কার্যক্রম করে যাচ্ছে। বর্তমান ও সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবকদের তৈরী জরুরী তহবিল ছাড়াও এই বিশাল কার্যক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে প্রাপ্ত তহবিল, ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত উদ্ধারকাজে ব্যবহার উপযোগী নোয়াখালীর উদ্ধার বহরে যোগ হওয়া প্রথম ইনফ্ল্যাটেবল বোট, যাবতীয় ঔষধ, অন্যান্য রেসকিউ কিট।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিক, সাজ্জাদ এন্ড কোং, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্বপ্ন-একচিলতে হাসির জন্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ফাইন আর্টস-ঢাকা ভার্সিটি, প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন, রাসেল এন্ড কোং, হরিনারায়ণপুর ছাত্র কল্যাণ সমিতি-কুষ্টিয়া, নেত্রকোনা, স্মাইল, ফরিদপুর, যশোর, ঢাকা, কুষ্টিয়া সহ দেশের বিভিন্ন সংস্থা, সাধারণ জনগণ, ছাত্রছাত্রী এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসংখ্য মহৎপ্রাণ শুভাকাঙ্ক্ষীর  উপহার, গাড়ি, বোট, ওষুধ, হাইজিন কিট সহ বিভিন্ন সাহায্য দিয়ে রেড ক্রিসেন্ট এর সাথে কাজ করে যাচ্ছে এবং সাহায্য করে যাচ্ছে।

নোয়াখালী যুব রেড ক্রিসেন্টের যুব প্রধান ফারহানা হায়দার (মিম) বলেন, ‘সকলে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করলে দূর্যোগে দূর্ভোগ কমিয়ে আনা সম্ভব।

উপ যুব প্রধান নুসরাত নিশি জানান, ‘আমাদের বর্তমান ও সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাথমিক চিকিৎসা ও উদ্ধারে বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, ফলে বন্যা পরিস্থিতিতে এই কঠিন সময়ে সকলকে মাঠে কাজ করতে দেখে  অসাধ্য উদ্ধার অভিযানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে আমরাও সাহস পেয়েছি।

এছাড়াও সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক আরাফাত রহমান তামিম জানান, ‘আকষ্মিক এই বন্যা নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষের জন্য একেবারেই অপ্রত্যাশিত, তবে প্রশিক্ষিত প্রায় ২৫০ সহ মোট ছয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবকের অক্লান্ত পরিশ্রম, দেশবাসী, ছাত্র-জনতা এবং এলাকাবাসীর আন্তরিক সহযোগিতায় এই দূর্যোগ খুব দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রয়োজন সমন্বয় সাধন এবং প্রাপ্ত উপহারসামগ্রীর সুষম বণ্টন। সকলে একতাবদ্ধ হলে এই কাজটিও আমরা সহজে করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।’

এছাড়াও তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবকদের কোন বেতনও নেই। তাদের মত মহৎ এই কাজকে সম্মান করতে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন এবং নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন।

নোয়াখালীর বিভিন্ন পেশাজীবি ও ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের একটাই চাওয়া খুব দ্রুত স্বাভাবিক অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ও ঐতিহ্যবাহী নোয়াখালী নগরী আবার গতিশীল হয়ে দেশ বিনির্মানে ভুমিকা পালন করবে।

জেলায় বন্যা-২৪ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নোয়াখালী যুব রেড ক্রিসেন্টের সার্বিক সমন্বয় করেন যুব প্রধান ফারহানা হায়দার, উপ যুব প্রধান নুসরাত জাহান নিশি, মেজবা উদ্দিন আকবর, যুব কার্যকরী কমিটি এছাড়াও  সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক গোলাম রাব্বানী, আবদুল্লাহ আল রেজোয়ান নবীন, মুয়াজ বিন আনোয়ার, আরিফুল ইসলাম, চন্দ্র নাথ মজুমদার, আবদুল আজিজ পুলক, সানুচিং মারমা বিথী, ফাহাদ রহমান অঝোর, মিনহাজুল হাদী, তারেক রহমান, মাজিদুল হক নিহান, সামসুজ্জামান রোমান, ওমর ফারুক, কিংম্যান প্রু মারমা, আরাফাত রহমান তামিম, তাইয়েব আহমেদ, হাসান তাসফিক সিমান্তসহ অনেক সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক উক্ত মানবিক কাজে সম্পৃক্ত আছেন।

কেএল/