ভারতীয় জলযুদ্ধ গণহত্যার সমতুল্য : নাগরিক আলেমসমাজ
প্রকাশ: ২২ আগস্ট, ২০২৪, ০৮:২৯ রাত
নিউজ ডেস্ক

কোনো ধরনের সতর্কবার্তা ছাড়া রাতের অন্ধকারে পানি ছেড়ে দিয়ে ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জলযুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে মনে করে নাগরিক আলেমসমাজ।

আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আন্তর্জাতিক নদীগুলোতে আধিপত্যবাদী বাঁধ নির্মাণ ও রাজনৈতিক প্লাবনের প্রতিবাদে ‘ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভে’ বক্তারা এ মন্তব্য করেন।

গণবিক্ষোভ কর্মসূচিতে আলেম-ওলামা, লেখক-সাহিত্যিক, শিক্ষক-সাংবাদিক, ব্যবসায়ী-পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকরা অংশ নেন। গণবিক্ষোভ থেকে ৩ দফা গণঘোষণা, ৫ দফা গণকর্মসূচি ও ১০ দফা গণআহবান ঘোষণা করেন নাগরিক আলেমসমাজের প্রধান সমন্বয়ক লেখক ও সাংবাদিক নোমান বিন আরমান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ভারতের রাজনৈতিক প্লাবনে বাংলাদেশের জনজীবন বিপন্ন। লাখো মানুষের সহায়-সম্পদ ও বসতবাড়ি বানের পানিতে ভেসে গেছে। একটি দেশের জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে এমন জলযুদ্ধ গণহত্যার সমতুল্য।

নাগরিক আলেমসমাজের সমন্বয়ক লেখক হুসাইন ফাহিমের সঞ্চালনায় গণবিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, শিক্ষাবিদ মাওলানা মনজুরে মাওলা, সাংবাদিক ফায়যুর রাহমান, লেখক মাওলানা সাদিকুর রাহমান, মাওলানা ফয়জুল হক, মাওলানা রশিদ আহমদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন হাফিজ সালমান মুহাম্মাদ নাবিল। সমাপনী মুনাজাত করেন মাওলানা নিয়ামত উল্লাহ খাসদবিরী।

বক্তারা পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় ভারতকে ‘ফাদার অব স্বৈরাচার’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে নদী, সীমান্ত, বন্দর, রেল ও সড়কপথসহ সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি-সমঝোতা পুনর্মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। তারা বলেন, অভিন্ন নদীগুলোতে একতরফা বাঁধ দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। এ জন্য দেশটিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক ফোরামে যাওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে ভারতসৃষ্ট বন্যায় বিপন্ন মানুষকে দ্রæত উদ্ধার ও পূনর্বাসনের আহবান জানানো হয়।

গণবিক্ষোভে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক আলেম সমাজের সমন্বয়ক মাওলানা কবির আহমদ খান, মাওলানা হাসান ফয়েজ, লেখক হক নাওয়াজ, মাওলানা সাদিকুর রহমান, মাওলানা বাহাউদ্দিন আরমান, লেখক ইবাদ বিন সিদ্দিক, কবি সাইয়্যিদ মুজাদ্দিদ, মাওলানা মাজহারুল ইসলাম জয়নাল, মাওলানা মঈনুল হক, মাওলানা ইমদাদ বিন সাজিদ, মাওলানা মিনহাজুস সিরাজ, তরুণ এক্টিভিস্ট ইসহাক কুরেশী আকিব, তরুণ আলেম হাফিজুর রহমান, তাকি নাওয়াজ ফাইজান, জুবায়ের আহমদ, লেখক মুহাম্মাদ আব্দুল কাদির প্রমূখ।

গণবিক্ষোভের ঘোষণাপত্র :

গণঘোষণা

১.  ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের আক্রমণাত্মক ও রাজনৈতিক প্লাবনকে আজকের এই সমাবেশ ‘জলযুদ্ধ’ হিসেবে ঘোষণা করছে।

২. পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় ভারত সরকারকে ‘ফাদার অব স্বৈরাচার’ হিসেবে ঘোষণা করছে।

৩.  বাংলাদেশবিরোধী ধারাবাহিক অপতৎপরতা ও উস্কানীমূলক সংখ্যালঘু রাজনীতির কারণে ভারতের ক্ষমতাসীন দলকে ‘বাংলাদেশের জন্য হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করছে।

গণকর্মসূচি-

১.  নদী, সীমান্ত, বন্দর, রেল ও সড়কপথসহ ভারতের সঙ্গে বিগত সকল সরকার বিশেষত শেখ হাসিনা আমলের সমস্ত চুক্তি-সমঝোতা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।

২. অভিন্ন নদীতে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা আত্মসাৎ ও রাজনৈতিক প্লাবনের অপরাধে ভারতকে আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে।

৩. ভারতের সঙ্গে করা শেখ হাসিনা সরকারের সমস্ত গোপন চুক্তি-সমঝোতা জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।

৪. ভারতসহ সকল দেশের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘আগে বাংলাদেশ, পরে বিদেশ’ নীতি নির্ধারণ করতে হবে।

৫. রাষ্ট্রীয় ক্রয় তালিকা থেকে ভারতকে পরিপূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে।

গণআহ্বান

১. বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে ভারতীয় পণ্য বয়কট করার আহ্বান করছে।

২. আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদেরকে ভারতের বিকল্প দেশ বিবেচনার আহ্বান করছে ।

৩. ভারতীয় টিভি চ্যানেল ও ওটিটি প্লাটফর্ম না দেখতে বাংলাদেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে বিশেষত নারীদের প্রতি আন্তরিক আহ্বান করছে।

৪. ভারতীয় টিভি চ্যানেল প্রদর্শন না করতে ক্যাবল অপারেটর, মালিকপক্ষ ও সংগঠনকে আহ্বান করছে।

৫. ভারতে বাংলাদেশের গ্যাস রপ্তানি অনতিবিলম্বে বন্ধ করার জোর দাবি করছে।

৬. ভারতীয় যেসব কর্মকর্তা এখনো বাংলাদেশে কর্মরত অবিলম্বে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে ।

৭. বাংলাদেশের মানুষকে ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য ভারতে না যাওয়ার অনুরোধ করছে।

৮. অতি দ্রুত দেশের চিকিৎসা ও পর্যটনখাতকে দুর্নীতিমুক্ত ও ভারতের চেয়ে উন্নত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

৯. যেসব গণমাধ্যমে ভারতের প্রকাশ্য বা গোপন সমর্থন, সহযোগিতা ও বিনিয়োগ রয়েছে সেসব গণমাধ্যম থেকে ভারতীয় বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও ভারততোষণ নীতি পরিবর্তন করতে হবে।

১০. বাংলাদেশসহ ভারতের যেসব রাজ্যের মানুষ প্লাবনে বিপদাপন্ন ও বিপন্ন হয়েছেন, হচ্ছেন তাদের সকলকে দিল্লির ‘জলযুদ্ধ’ প্রতিরোধে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান করছে।

হাআমা/