ঢাবির সেই অধ্যাপকের রুমে কুরআন তিলাওয়াত, অভিনব প্রতিবাদে প্রশংসার ঝড়
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ০৯:৫৫ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| হাসান আল মাহমুদ ||

পবিত্র রমজান উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বটতলায় কোরআন তেলাওয়াত বিষয়ক অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে আপত্তি জানানো কলা অন‌ুষ‌দের ডি‌ন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছিরের কক্ষে কোরআন তেলাওয়াত ক‌রে‌ছে একদল শিক্ষার্থী। এর আ‌গে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ ক‌রেন তি‌নি। পদত‌্যাগ করার পর  ডিনের রুমে মোনাজাত করেন এক শিক্ষার্থী। এসময় মোনাজাতে অধ্যাপক ড. আবদুল বাসিরও অংশগ্রহণ করেন।

সোমবার (১৯ আগষ্ট) দুপু‌রে ঢাবির ঢাবির কলাভবনে ডিন কার্যালয়ে ঘটা এ ঘটনায় প্রশংসা কুড়িয়েছে সর্বত্র।

ঢাবি শিক্ষার্থীদের এমন অভিনব প্রতিবাদে অনলাইন-অফলাইনে সর্বত্র প্রশংসার জোয়ার বইছে। দিলদার হুসাইন লিখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরা এত ক্রিয়েটিভ কিভাবে হল!’

সাকিবুল হাসান নামে এক ফেসবুকার লিখেন, ‘অসাধারণ পুরস্কার! মুহাম্মদ ইশতিয়াক লিখেন, ‘ব্যাপারটা দারুণ লাগতেছিল যখন লাইভে দেখতে ছিলাম। আর ছাত্র ভাইটার কি সুন্দর কোরআন তেলয়াত আর মোনাজাত মুগ্ধ করেছে আমায়।’

আরিফ হুসাইন লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ এটা আমাদের ইসলাম। একজন অসৎ মানুষের জন্য তার হেদায়েতের জন্য দোয়া করছে আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে খারাপ রাস্তা থেকে বের করে ভালো পথে নিয়ে আসে। এর চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে।

জাকির হুসাইন লিখেন, ‘এভাবেই হোক প্রতিবাদ ও প্রতিশোধ। এই ভিডিও দেখার পর হৃদয়র যে অনুভূতি, তা ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়। শুধু দোয়া করছি; উপস্থিত সকল ছাত্র ভাইদেরকে দেশ ও দ্বীনের প্রকৃত কর্মী হিসেবে কবুল করুন, আমিন। সালমান সাদী লিখেন, ‘উত্তম প্রতিবাদ। শিক্ষার্থীদের আন্তরিক ভালোবাসা।’

এদিকে এ ঘটনায় দেশের লেখক, সাংবাদিকরাও প্রশংসা করেছেন। লেখক ও অনুবাদক আবদুল্লাহ আল ফারুক লিখেন, ‘পরনের পোশাক না খুলেও যে কাউকে দিগম্বর করা যায়, তার নজির দেখালো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

মনে আছে আবদুল বাছির নামের সেই অধ্যাপকের কথা, যে গত রমাযানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় কোরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠান আয়োজনের কারণে শোকজ পাঠিয়েছিল?

আজ কলা অনুষদের সেই ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছিরের পদত্যাগ নিশ্চিত করেছে শিক্ষার্থীরা। মজার বিষয় হলো, পদত্যাগের পর তার অফিসে তাকে নিয়ে কুরআন তিলাওয়াতের অনুষ্ঠান করেন তারা।

উপস্থিত এক ছাত্র সূরা ত্বিন তিলাওয়াতের পর মুনাজাত করে তার হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে দুয়াও করেন। অধ্যাপক সাহেব অবস্থা বেগতিক দেখে গোমড়া মুখে সেই মুনাজাতে হাত তুলে অংশও নেন।

ভদ্র ভাষায় এরচেয়ে উত্তম উপায়ে অপ্রতিরোধ্য আইক্কাওয়ালা বাঁশ দেয়া কি সম্ভব?

সাংবাদিক আলী হাসান তৈয়ব লিখেন, ‘পবিত্র কুরআন নাজিলের মাসে মুসলিম নবাবদের জমিতে প্রতিষ্ঠিত অধিকাংশ মুসলমানের টাকায় পরিচালিত ঢাবিতে কুরআন তেলাওয়াত করাকে অপরাধ হিসেবে নিয়েছিল। তারপর ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল ঢাবির কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল বাছির।

গতকাল ছাত্র বিক্ষোভে পদত্যাগের পর সেই মহান ডিনকে বসিয়ে কিছুক্ষণ কুরআন তেলাওয়াত শুনানো হয়। সর্বশেষ আল্লাহর দরবারে হাত তুলে মোনাজাত করা হয়। যেন এখানে আর কেউ জুলুম-নির্যাতনের শিকার না হয়! এরপর শ্রদ্ধেয় স্যারকে বিদায় দেওয়া হয়।

তবে তার চেয়েও নয়নসুখকর দৃশ্য হলো, স্যার সেই মোনাজাতে সকাতর আমীন আমীন বলতে থাকেন।.

তোমাদের স্যালুট হে তারুণ্য।‌ তোমাদের কাছ আমাদের শেখার ধারা চলতে থাকুক।

এভাবে সারাজীবন নিন্দার শিকার তরুণদের হাতে বিদায় নিক সব জায়গায় বসে থাকা জগদ্দল পাথরগুলো। ভেঙে চুরমার হয়ে যাক অর্থ ও পদের গরিমায় সব অশুভ শক্তি। আমীন।’

লেখক ও উদ্যোক্তা রোকন রাইয়ান লিখেন, ‘নামটা কত সুন্দর। আব্দুল বাছির। আল্লাহর নামে নাম। ঢাবির কলা বিভাগের ডিন। অথচ কুরআনের কথা শুনলেই জ্বলে উঠেন।

আজ পদত্যাগের সময় শিক্ষার্থীরা তাকে সামনে রেখে কুরআন তেলাওয়াত করলেন। কী মধুর সেই তেলাওয়াত। আমার বিশ্বাস তিনি মন দিয়ে শুনলে কুরআনের প্রেমে পড়ে যাবেন।

যেমন তেলাওয়াত শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন হজরত উমর রা.। বোন ইসলাম গ্রহণ করেছে শুনে তলো য়ার নিয়ে আসছেন। দরজায় এসে শুনলেন সেই পবিত্র কুরআনের ধ্বনী। মুহূর্তেই পালটে গেলেন। ফিরে এলেন ইসলামের ছায়ায়।

যে ইসলাম ও কুরআনের কথা শুনে মাথায় খু/ন চেপেছিল। সেটাই তাকে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি এনে দিলো। বানিয়ে দিলো ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা।

আব্দুল বাছির সাহেব যদি এই কুরআনের মর্মার্থ বুঝার চেষ্টা করেন আশা করি তিনিও পরিতৃপ্ত জীবনের সন্ধান পাবেন।

উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের বটতলায় মাহে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে কোরআন তেলাওয়াত আসরের আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। পরে ১৬ মার্চ আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জুবায়ের মোহাম্মদ এহসানুল হক বরাবর যেসব শিক্ষার্থী আয়োজন করেছে, তাদের কেন শাস্তি প্রদান করা হবে না সে বিষয়ে জবাব চেয়ে চিঠি দেন আব্দুল বাছির। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়।

হাআমা/