প্রসঙ্গ একাধিক মাদরাসায় হাদিস পড়ানো, যা বললেন মুহাদ্দিস মাওলানা লিয়াকত আলী
প্রকাশ: ০৬ জুলাই, ২০২৪, ০৯:২৬ রাত
নিউজ ডেস্ক

মাওলানা লিয়াকত আলী। দেশের বিশিষ্ট আলেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাকিতায় অনার্স-মাস্টার্স করা একজন সাংবাদিক ও প্রাজ্ঞ হাদিসবিশারদ। মিরপুর-১২ মাদরাসা দারুর রাশাদের শিক্ষা সচিবসহ কয়েকটি মাদরাসার মুহাদ্দিস। গত ১৬ জুন ২০২৪ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় মিরপুরে দারুর রাশাদ মাদরাসায় একাধিক মাদরাসায় হাদিস পড়ানো ইত্যাদি প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের চিফ রিপোর্টার হাসান আল মাহমুদ

সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশ : একজন মুহাদ্দিস একাধিক মাদরাসায় হাদিস পড়ানো দোষের কিছু নয়: মাওলানা লিয়াকত আলী

সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় অংশ : ‘কওমি মাদরাসাগুলোতে চাকুরিবিধি না থাকায় নতুন মুহাদ্দিস ও শিক্ষক পদোন্নতি হচ্ছে না’


সাক্ষাৎকারের শেষ পর্ব...

আওয়ার ইসলাম : আকারিদের যুগে একজন মুহাদ্দিস কি একাধিক মাদরাসায় হাদিস পড়াতেন?

মাওলানা লিয়াকত আলী : আমাদের আকাবিরদের অনেকে একাধিক মাদরাসায় পড়াতেন। যেমন শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব পড়াতেন। আল্লামা আশরাফ আলী রহ. পড়াতেন। তাঁদের ইলম এবং ইস্তে’দাদ নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। মালিবাগ মাদরসা থেকে যখন হজরত মাওলানা কাজী মু’তাসীম বিল্লহ সাহেব চলে গেলেন, ওই মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস স্থিতিশীল করার জন্য শাইখুল হাদিস সাহেব ওখানে পড়াতেন। এরকম আরও কয়েক মাদরাসায় শাইখুল হাদিস সাহেব যেতেন, যাতে করে দাওরায়ে হাদিসটিকে থাকুক। শাইখুল হাদিস সাহেবের ইন্তেকাল হয়ে গেলে আশরাফ আলী সাহেব ঠিক এই খাতিরে বিভিন্ন মাদরাসায় পড়াতেন। অল্প করে হলেও। যেন মাদরাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিস স্থিতিশীল হয়।

তাঁদের পড়ানোর ব্যাপারে কোনো গাফলত কিংবা দায়সারা গোছের তারা পড়াতেন না। তাঁরা পড়াতেন একেবারে কামা হাক্কুহু, হক আদায় করে। তাঁরা একটা নির্দিষ্ট পরিমান পড়াতেন। এবং সেটা পুরোপুরি হক আদায়সহ পড়াতেন।

তার আগের যুগের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয় ওই যামানায় একজন মুহাদ্দিসকে একাধিক মাদরাসায় পড়ানোর প্রয়াজন হত না। তখন দাওরায়ে হাদিস মাদরাসা কম ছিল। দাওরায়ে হাদিস পড়ুয়া ছাত্রও কম ছিল। তখনকার যুগে দাওরায়ে হাদিস পড়ার প্রয়োজনীয়তা যারা মনে করতেন, তারা চলে যেতেন দারুল উলুম দেওবন্দে। ডাবেলে। আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. এর কাছে। এসমস্ত প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তিদের কাছে বড় বড় মুদাররিসরা যেত। যারা বিভিন্ন মাদরাসার মুদাররিস। তাঁরা শিব্বীর আহমাদ উসমানী, আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. এর দরসে বসার জন্য যেতেন, তাদের ইলম আরও বৃদ্ধি করার জন্য। এজন্য দেখা যায়, উসমানী সাহেব, কাশ্মিরী সাহেবদের এমন কিছু তাকরির, যা সাধারণ ছাত্ররা বুঝবেই না। এগুলো এত উচু মানের, দাকিক পর্ায়ের। এগুলো মুদাররিসদের জন্য।

এখনকার যুগে কিন্তু আনোয়ার শাহ কাশ্মিরি, শিব্বীর আহমাদ উসমানী নেই, তাঁদের পরের স্তর শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক সাহেবদের যুগও নেই। আল্লামা আশরাফ আলী সাহেবদের যুগও নেই। এখন অনেক জায়গায় অভিযোগ পাওয়া যায়, তারা শুধুমাত্র সময় ব্যয় করেন।  নাম ব্যবহার করেন। সত্যিকারে তারে যে ওজন, তাদের যে নাম তা যদি প্রসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়, অথচ তাদের দরসের মান ওই পর্ায়ের না।  তবে, সবগুলোকে এক নজরে এক পাল্লায় মাপা ঠিক হবে না। হ্যাঁ, এ কথা তো সত্য- একজন যদি বিভিন্ন মাদরাসায় পড়া, তাহলে সময় দেন কি করে। দেখা যাচ্ছে তারা পড়ান মানে অল্প একটু পড়ান। আসলে সেই পরিমান বরকত হয় কি না। সে পরিমান সময় তারা দেন কি না। আসলেই তাদের ওই পরিমান মাহারত আছে কি না। এটা প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার। সুতরাং সবাইকে এক পাল্লায় মাপা যাবে না।

আওয়ার ইসলাম : একজন মুহাদ্দিস একাধিক মাদরাসায় হাদিস পড়ালে হাদিসের পরিভাষা ‘কাসরাতে মুলাযামাত’ নাকি রক্ষা হয় না, বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখছেন?

মাওলানা লিয়াকত আলী : কাসরাতে মুলাযামাতের অর্থ এই নয় যে, সারা বছর থাকা। বরং এর অর্থ হল উস্তাদের সঙ্গে যোগযোগ রাখা। সেজন্য যখন যিনি যে মাদরাসায় যান, সে মাদরাসার ছাত্ররা যদি যোগাযোগ করেন, এতে তো কাসরাতে মুলাযামাত হয়। যার সারা বছর মাদরাসায় থাকেন, তাদের সঙ্গেও তো কাসরাতে মুলাযামাত হয় একজন ছাত্রের। হ্যাঁ, মুরাজাআত করতে পারা হচ্ছে কাসরাতে মুলাযামাত। যে কোনো একটি বিষয়ে সন্দেহ হলে উস্তাদের কাছে বারবার জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়ার নাম কাসরাতে মুলাযামাত। উস্তাদের কাছে আসা-যাওয়া করা।

আওয়ার ইসলাম : একজন মুহাদ্দিস/শাইখুল হাদিস একাধিক মাদরাসায় পড়ালে নাকি ‘উস্তাদের রং’ ছাত্রের ভিতরে আসে না, আপনার কী মতামত?

মাওলানা লিয়াকত আলী : এটা একটা আপেক্ষিক বিষয়। এমনও তো হয় দীর্ঘদিন ধরে উস্তাদ পড়াচ্ছেন, তারপরও উস্তাদের রঙ ছাত্র ধারন করতে পারেনি। অথচ, অল্প কয়েকদিন পড়িয়েছেন, ছাত্র উস্তাদের সোহবত নিলেন সামান্য কছু সময়। আর এতেই উস্তাদের রঙ্গে সে রঙ্গীন হয়ে ওঠে।

হাআমা/