পদ্মাসেতুর জন্য বিশ্বে সম্মান পেয়েছে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: ০৬ জুলাই, ২০২৪, ১১:৫১ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

পদ্মাসেতুকে ‘গর্বের প্রতীক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে এখন যথাযথ মূল্যায়ন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ শুনলেই মানুষ সমীহ করে। বাংলাদেশের জনগণ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মাসেতুর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজের সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

গত দুই বছরে পদ্মাসেতুর টোল প্রাপ্তিতে সংশ্লিষ্ট সবার মতো তারও সন্তুষ্টি ব্যক্ত করে সরকার প্রধান বলেন, আমি টাকার অংক দিয়ে এটা বিচার করবো না। কারণ এই সেতু আমাদের গর্বের সেতু। এটা টাকার অংক দিয়ে বিচার করার নয়। 

বিশ্ব ব্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, এই একটা সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে অন্তত সেই মর্যাদা দিয়েছে, আগে যারা কথায় কথায় আমাদের ওপর খবরদারি করতো, আর ভাবখানা ছিল এরা ছাড়া বাংলাদেশ চলতেই পারে না, সেই মানসিকতাটা বদলে গেছে। মানুষ এখন গর্ব করে আন্তর্জাতিকভাবে বুক ফুলিয়ে চলতে পারে। এটাই সবথেকে বড় পাওয়া।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বাংলাদেশের নাম শুনলেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মানুষ সমীহ করে। বাংলাদেশের জনগণ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি, সফল হয়েছে এবং আমরা এখন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো, ইনশাল্লাহ। সেই সঙ্গে আমরা ২০২১ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি, পাশাপাশি প্রজন্মের পর প্রজন্মের উন্নত জীবনের জন্য নেদারল্যান্ডের সাথে চুক্তি করে ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রনয়ণ ও বাস্তবায়নও আমরা শুরু করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, এই পদ্মাসেতুটা একটি জটিল স্ট্রাকচার। কারণ আমাজনের পরে সব থেকে খরস্রোতা হচ্ছে এই পদ্মা নদী। এই জটিল পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কখনো নদীর পার ভেঙেছে, নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। একে একে সবকিছু অতিক্রম করে আমরা এই সেতুটি নির্মাণ করেছি। 

পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে গিয়ে দুর্যোগে মৃত্যুবরণকারী এবং সেতুর কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং প্রয়াত, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রুহের মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেন এবং প্রকৌশলী, গবেষক ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, সেই পদ্মা নদীকে দু’কূলে বেঁধে দেওয়া আর এই সেতু নির্মাণ করা, এই জটিল কাজের সঙ্গে যারা জড়িত সেই সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সেতু কৃতর্পক্ষ এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নিবেদিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞ, নিরাপত্তার তদারকিতে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং নির্মাণ শ্রমিক, তাদের প্রতি আজকে আমি আমার কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতেই আমি এখানে এসেছি।

অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন। প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সমাপনী বক্তব্য দেন। সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে পদ্মাসেতুর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণের কাজ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর অ্যাপ্রোচ সড়ক ১২ দশমিক ১১৭ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার (সড়ক) এবং ৫৩২ মিটার (রেল)। গত দুই বছরে পদ্মাসেতু দিয়ে ১ কোটি ২৭ লাখ যানবাহন চলাচল করেছে। চলতি বছরের ২৯ জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে যান চলাচল করেছে প্রায় ১৯ হাজার। প্রতিদিন গড়ে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

এনএ/